২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৃষ্টিপাত : এশিয়ার বৃহত্তম, কৃষি ‘সমিতি’র

-

‘চকরিয়ার বুকে একখণ্ড সাম্যবাদ’ শীর্ষক একটি লেখা কয়েক বছর আগে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিল। অনিসন্ধিৎসু মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় তদানীন্তন সামন্ত-প্রভুদের রক্ষচক্ষুকে উপেক্ষা করে ব্রিটিশ আমলে ১৯২৯ সালে ভূমিহীনের সন্তানরা গড়ে তুলেছিলেন দেশের বৃহত্তম কৃষি সমিতি ‘বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতি’। এর সুনাম ও পরিচিতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে যায়। চার হাজার একরের মতো জমি নিয়ে দুই-তিন হাজার ভূমিহীনের পরিবারের সে যাত্রার ফল হচ্ছে, কালের পরিক্রমায় ৪৫-৪৬ হাজার মানুষের ঘন বসতিপূর্ণ জনপদ, তথা বদরখালী। ২৬২ জন অংশীদার প্রতি ১২ একর জমির ভোগ-দখল নিয়ে একপ্রকার সচ্ছলতার সাথে পরিবার- পরিজনসহ সভ্যতার সোপান তৈরি ও নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য জনপদের চেয়ে তারা অনেক এগিয়ে গেছেন। আধুনিক জীবনযাত্রায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে ১০০ বছরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমিহীনের সন্তানেরা শতভাগ সফল বলা যায়। ১৯২৯ থেকে ২০১৮; ৮৯ বছরের দীর্ঘ ব্যবধানে ৪৫ হাজার মানুষের ভারে জর্জরিত বদরখালী জনপদ। প্রতি শেয়ার ১২ একর জমি নিয়ে শুরু করা পরিবারগুলোর সদস্যদের মাথাপিছু এখন ৮/৯ শতকের বেশি জমি নেই। বুকের পাঁজর দিয়ে আগলে রেখে, সন্তানের মায়ায় জমির উৎকর্ষ সাধন করেছেন তারা তিল তিল করে। জীবনযুদ্ধের লড়াকু সৈনিক হিসেবে নিজেদের পরবর্তী প্রজন্মকে গড়ে তোলার জন্য ভূমিহীনের সন্তানরা এলাকায় স্থাপন করেছেন একটি ডিগ্রি কলেজ, একটি ফাজিল মাদরাসা, দু’টি উচ্চবিদ্যালয়, ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩২টি জামে মসজিদ ও মক্তব, দু’টি কওমি মাদরাসা ও চারটি কেজি স্কুল। সরকারি হাসপাতাল, কবরস্থান, শ্মশান, পাউবোর বেড়িবাঁধ কার্যালয়, খাদ্যগুদাম, পুলিশ ফাঁড়ি, সাইক্লোন শেল্টার ও অন্যান্য জনকল্যাণমূলক স্থাপনার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন ৪ শতাধিক একর জমি। বাংলাদেশ সচিবালয়ের আদলে অতি সম্প্রতি তৈরি করা, সমিতির দৃষ্টিনন্দন কার্যালয়কে ঘিরে ভূমিহীনের সন্তানেরা গড়ে তুলেছেন উপ-শহর।
এ সমিতির বুকে একাধিকবার পদার্পণ করেছেন জাতীয় নেতা মওলানা ভাসানী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে দু’বার জাতীয় সমবায় পুরস্কারগ্রহণকারী এ সমিতি সমবায় অঙ্গনের জীবন্ত মহীরুহে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু একাধিক বিকল্প থাকা সত্ত্বেও অসংখ্য সমবায়ীর ত্যাগে গড়া উপ-শহরটি সম্প্রতি মহেশখালী গভীর সমুদ্রবন্দর সংযোগ সড়কের নিশানার শিকার। উদ্বিগ্ন সমবায়ী এবং এই সমিতির কর্মকর্তারা বদরখালীর দক্ষিণ কিংবা উত্তরে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের জমির ওপর দিয়ে প্রস্তাবিত সংযোগ সড়কটি নির্মাণের অনুরোধ করেছেন। তবে সংশ্লিষ্ট ‘জাইকার’ লোকজন তা মানতে রাজি নন। যেন পানির দরে নিয়ে নিতে চাচ্ছেন বদরখালী সমিতির সমবায়ীদের জীবনের চেয়ে মূল্যবান জমিটুকু, উপ-শহরটির বুক চিরে এবং তা দ্বিখণ্ডিত করে। ভূমিহীনরা ধরনা দিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুয়ারে দুয়ারে। দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকের দরজায় পৌঁছতে না পারলেও তাদের আর্তি নিশ্চয় পৌঁছবে এ লেখার মাধ্যমে, এটাই বিশ্বাস।
আকতার কামাল
গ্রামীণ সংবাদকর্মী, চকরিয়া, কক্সবাজার


আরো সংবাদ



premium cement