১৮ মে ২০২৪, ০৪ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫
`


বুধবারের সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের যেসব নেতা গণভবনে যাচ্ছেন 

১ তারিখের সংলাপের পর সীমিত পরিষরে আরেকটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে আগামী বুধবার। - ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় দফার সংলাপের জন্য সম্ভাব্য তালিকার খসরা তৈরি করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। রোবরার রাতে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ছোট্ট পরিসরে সংলাপে বসতে রোববারই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন।

জানা গেছে, সংবিধানের ভেতরে থেকেই নির্বাচনকালীন সরকার ও সংসদ ভেঙে দেয়ার বিষয়টি দ্বিতীয় দফা সংলাপে তুলে ধরা হবে। সাংবিধানিক সমাধান খুঁজে বের করতে আইনবিশেষজ্ঞদের সাথে এরই মধ্যে একাধিক বৈঠক করেছেন ফ্রন্টের নেতারা।

৭ নভেম্বর সকালে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ফের সংলাপে বসার বিষয়টি গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ফোন করে জানান।

বুধবার বেলা ১১টার সময় গণভবনে দ্বিতীয় দফার এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু দ্বিতীয় দফার সংলাপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তবে কোন পর্যায়ে সংলাপ হবে এখনো নির্ধারণ হয়নি। প্রধামন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ হবে নাকি সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে হবে এ বিষয়টি এখনো ঠিক হয়নি। সোমবার আলোচনা করে তা ঠিক করা হবে বলে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সংলাপ হলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন উপস্থিত থাকবেন।

আর যদি সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে সংলাপ হয় তাহলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে যাবেন।

ঐক্যফ্রন্ট্রের সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বাক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ড. শাহদীন মালিক, ড. আসিফ নজরুল প্রমুখ। তবে দু একটি পরিবর্তন আসলেও আসতে পারে। এই বৈঠকে সংবিধান বিশেষজ্ঞদেরকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ফলে এই দফার সংলাপে আইনজীবীরাই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এর আগে গত শনিবার গণস্বাস্থ্যের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ড. শাহদীন মালিক ও ড. আসিফ নজরুলের নাম প্রস্তাব করেন। এদেরকে নিয়ে মিটিং করলে ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই সাংবিধানিক সমস্যার সমাধান করা যাবে বলেও মত দেন তিনি। এরপর ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে এই দুই আইনজ্ঞ অংশ নেন।

এর আগে গত ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সংলাপে বসেছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

 

আরো পড়ুন : ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি

মঈন উদ্দিন খান, ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:২৬


ফের সংলাপে বসার অপেক্ষায় রয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ছোট্ট পরিসরে সংলাপে বসতে গতকালই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। জানা গেছে, সংবিধানের ভেতরে থেকেই নির্বাচনকালীন সরকার ও সংসদ ভেঙে দেয়ার বিষয়টি দ্বিতীয় দফা সংলাপে তুুলে ধরা হবে। সাংবিধানিক সমাধান খুঁজে বের করতে আইনবিশেষজ্ঞদের সাথে এরই মধ্যে একাধিক বৈঠক করেছেন ফ্রন্টের নেতারা। 

বিএনপির শীর্ষ এক নেতা জানিয়েছেন, প্রথম দফা সংলাপে সরকার বলেছে, তারা সংবিধানের বাইরে যাবে না। এখন তারা সংবিধানসম্মত প্রস্তাবই দেবেন। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার গঠন ও সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি। 


জানা গেছে, সাংবিধানিক সমাধান বের করতে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মওদুদ আহমদ তার মতিঝিলের চেম্বারে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, ঢাবি আইন বিভাগের শিক্ষক ড. বোরহানউদ্দিন, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীসহ সিনিয়র আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করেছেন। 

এই বৈঠকের আগে ড. শাহদীন মালিক বলেন, সংবিধানের মধ্যে অন্তত দশ জায়গায় সংসদ ভেঙে নির্বাচনের কথা রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা চাই দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যেন হয়। এ জন্য দেশের সংবিধান এবং আইনজ্ঞরা বসেছি। কিভাবে একটি সম্ভাব্য সমাধান বের করা যায় তা দেখছি। 

তিনি আরো বলেন, অতীতে বেশির ভাগই নির্বাচনই জাতীয় সংসদ ভেঙে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা থাকলে বর্তমান সঙ্কট সমাধান কোনো বিষয় নয়। তিনি বলেন, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করলে একদল সুযোগ-সুবিধা বেশি পাবে। এ ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না।

জানা গেছে, গত শুক্রবার জাতীয় ঐক্যফন্টের বৈঠকেও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে নেতারা নিরপেক্ষ ব্যক্তি কারা, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। ড. কামাল হোসেন সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে কাউকে খুঁজে নেয়ার পরামর্শ দেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সভায় প্রশ্ন ওঠে, রাষ্ট্রপতি যদি নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হন, সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা কী হবে? এর জবাবে এক নেতা বলেন, তাকে ‘দফতরবিহীন’ করা হলে তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবেন। কিন্তু বৈঠকে উপস্থিত আরেক নেতা বলেন, দফতর না থাকলেও বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তারা আরেকবার সরকারের সাথে আলোচনায় বসবেন। সেখানে যদি গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যক্তির নাম চাওয়া হয়, তাহলে তারা দেবেন। 
গত ১ নভেম্বর ক্ষমতাসীনদের সাথে সংলাপের পর গত কয়েকদিনে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করে সংলাপের নানা বিষয় পর্যালোচনা করেছেন। সংলাপে ক্ষমতাসীনরা একটি দাবি না মানলেও আাবারো সংলাপ করে সমঝোতার শেষ চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফের সংলাপে বসার আগ্রহের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গতকাল চিঠি পাঠিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। 

চিঠিতে শেখ হাসিনার উদ্দেশে ড. কামাল লেখেন, ‘গত ১ নভেম্বর গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ জন্য ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) ধন্যবাদ জানাই। দীর্ঘ সময় আলোচনার পরও আমাদের আলোচনাটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সেই দিন আপনি বলেছিলেন আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারই ভিত্তিতে ঐক্যফ্রন্ট জরুরি ভিত্তিতে আবারো আলোচনায় বসতে আগ্রহী। ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফার সাংবিধানিক ও আইনগত দিক বিশ্লেষণের জন্য উভয়পক্ষের বিশেষজ্ঞসহ সীমিত পরিসরে আলোচনা করা প্রয়োজন।’

চিঠিতে ড. কামাল প্রধানমন্ত্রীকে জানান, সংলাপ শেষ হওয়ার আগে তফসিল ঘোষণা না করার জন্য নির্বাচন কমিশন বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।

ঐক্যফ্রন্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার সংলাপ যেন সফল হয় অথবা সফল না হলেও এর দায় যেন ঐক্যফ্রন্টের নিতে না হয়, সেজন্য ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে ফিরতি সংলাপের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এই সংলাপে সদস্য সংখ্যা বেশি রাখার পক্ষে নয় তারা। বিশেষ করে সংবিধানের বিষয়ে আইনি জ্ঞান থাকা নেতাদের নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধিদল করা হচ্ছে। ৭ দফা দাবি আলোচনার বিষয়বস্তু হলেও নির্বাচনকালীন সরকার ও সংসদ ভেঙে দেয়ার ইস্যুতে জোর দেবেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। খালেদা জিয়ার মুক্তিও আইনি প্রক্রিয়ায় কিভাবে সম্ভব, সেটিও দ্বিতীয় দফা আলোচনায় তুলে ধরা হবে।

সূত্র মতে, সঙ্ঘাত এড়িয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐক্যফ্রন্ট সবচেয়ে বেশি আন্তরিক। এ জন্য সংলাপে সবার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কিভাবে হতে পারে এর ফর্মুলা দেয়া হবে। মোটকথা সংলাপে তারা এমন সব প্রস্তাব রাখতে চায় যাতে প্রথমবারের মতো সঙ্ঘাতহীনভাবে একটি নির্বাচন হতে পারে। 

জানা গেছে, প্রথম দফা সংলাপ ব্যর্থ হওয়ায় আগামীকাল ঢাকার জনসভা থেকে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তে আপাতত পরিবর্তন করা হয়েছে। কর্মসূচি দেয়া হলেও তা কঠোর হবে না। ফিরতি সংলাপের চিঠির জবাব এবং শেষ পর্যন্ত সংলাপ হলে এর ফল দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

কাল সমাবেশের প্রস্তুতি : আগামীকাল ৬ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকারসহ সাত দফা দাবিতে জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সমাবেশে বিপুল লোকের সমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। দলটি তফসিলের আগে ঢাকায় একটি বড় ধরনের শোডাউন করতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও নেতাকর্মীদের জনসভায় যোগ দেয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিএনপির ঢাকা বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, জনসভায় রাজধানীসহ ঢাকার আশাপাশের জেলা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যোগ দেবেন। 

এই মধ্যে সমাবেশ সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে যৌথসভা হয়েছে। ওই সভায় নির্বাচন ও আন্দোলন এ দু’টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। সংলাপের বিষয়ে নেতারা বলেন, সংলাপের নামে সরকার সময়ক্ষেপণের কৌশল নিয়েছে তা পরিষ্কার। খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ সাত দফা দাবিতে অনড় থাকার কথা জানান নেতারা। দাবি মানলে সরাসরি নির্বাচন, না হলে আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেন তারা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, জনসভায় লাখ লাখ লোকের সমাগম হবে। ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সমাবেশ হবে এটি।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এই জনসভার মধ্য দিয়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত বার্তা দিতে চায় ঐক্যফ্রন্ট।

জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের কর্মসূচি ও কর্মপন্থায় আন্দোলন আর নির্বাচন দু’টিকেই সামনে রাখা হয়েছে। নির্বাচনে সম সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে চাপে রাখা হবে। আবার নির্বাচনের ময়দান গৃহপালিত ধরনের দল দিয়ে সাজানোর সুযোগ রাখা হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement