২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসি কি নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে?

-

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর সাথে দু’বার সংলাপ হয়েছে। দেশের মানুষ ধারণা করেছিল হয়তোবা নির্বাচনের ব্যাপারে সমঝোতা হতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য তাদের সাতটি দাবির একটাও মানা হয়নি। বিএনপির চেয়ারপারসন জেলখানায়। ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাবজ্জীবন কারাদণ্ডিত। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল। ফলে সবার প্রশ্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন কী নিরপেক্ষ হবে?

প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও গায়েবি মামলা বন্ধ হয়নি, চলছে অব্যাহতভাবে ধরপাকড়। চমৎকার একটি নির্বাচনের ব্যাপারে বড় বাধা হলো ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতা হারানোর ভয়। আওয়ামী লীগ ধারণা করেছিল ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা না মেনে নিলে তারা নির্বাচনে আসবে না। কিন্তু দফার একটিও না মানার পর ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিপাকে পড়েছে। তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো ভোটারবিহীন নির্বাচন উপহার দিতে চেয়ে ছিল। কিন্তু সে স্বপ্ন হয়তো এবার পূরণ হবে না। এ কারণে তারা দুশ্চিন্তায় আছে। এখন চিন্তা হলো আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন দিয়ে আবার ক্ষমতার মসনদে কিভাবে বসা যায়। এ দিকে নির্বাচন কমিশন দাবি করছে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বাস্তব দৃশ্য কিন্তু ভিন্ন। ২৪ নভেন্বর সিইসি জানালেন লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে। পুলিশ তাদের কথা মান্য করছে। অকারণে কাউকে গ্রেফতার করছে না। একই দিন নির্বাচন কমিশন জানায়, ছয়টি সংসদীয় আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। কমিশনের এই ঘোষণার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, সব গণতান্ত্রিক জোটসহ অনেক দলে নির্বাচনের সমান সুযোগ এবং ইভিএম ব্যবহার না করার মূল দাবি উপেক্ষিত হলো। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া একটি প্রথা। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির অন্যতম শর্ত বটে। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী, সংসদ বর্তমানে রেখেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ বর্তমান সংসদ সদস্যরা সপদে বহাল থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন।

ফলে আগামী নির্বাচনে সব প্রার্থীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করার বিষয়টি কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ থাকছে। সুতরাং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে এটা বড় বাধা। পৃথিবীর বহু দেশে ইভিএম ব্যবহার হয়, এটা নির্বাচন কমিশনের যুক্তি এবং তারা সীমিত আকারে ব্যবহার করবেন বলে বলছেন। মজার বিষয় হচ্ছে, ইউরোপে, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, ফ্রান্সসহ অনেক দেশ ইভিএম ব্যবহার করে না। জার্মানির সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারকে অসাংবিধানিক হিসেবে আদেশ দিয়েছেন। ইউরোপের বড় দেশগুলো ইভিএম ব্যবহার শুরু করে নির্ভরযোগ্য নয় বলে ফিরে গেছে ব্যালটে। মার্কিন প্রযুক্তিবিদদের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে ব্যালটে ফিরে যেতে হবে।

দেশে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা ছিল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেটি ধ্বংস হয়েছে। এখন গণতন্ত্রের নামে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছে। সেটা সংসদ এবং সংসদের বাইরে। রাজপথে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের তৎপরতা, পোস্টারিং আছে নাকি? এটি দুঃখজনক। গণতন্ত্রের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক একটা সময়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে, গণতন্ত্র নির্মাণের একটি ভিত্তি। ভিত্তি যদি না থাকে তাহলে কোনো বিল্ডিং দাঁড়িয়ে থাকে না, ধসে পড়ে। তাই প্রথমে গণতন্ত্রের ভিত্তিটা তৈরি করতে হবে আমাদের।

তারপর ধীরে ধীরে কিভাবে সংসদ কার্যকর করা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমিয়ে কিভাবে ভারসাম্য আনা যায়, বিরোধী দলের ভূমিকা কিভাবে আরো বাড়ানো যায়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিভাবে গণতন্ত্রায়ন কিভাবে করা যায়, তা নিয়ে সবাই কাজ করতে হবে। কথায় বলে, সকাল দেখলেই বুঝা যায় দিনটি কেমন যাবে। এ কথাটি দেশের সিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেকাংশে প্রযোজ্য। বর্তমান নির্বাচন কমিশন তার অধীনে অতীতের আর সব নির্বাচনের মতো কেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি, জাল ভোট প্রদান এবং বৈধ ভোটারদের ভোটদান থেকে বঞ্চিত করার ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে নির্বাচন সার্বিক বিচারে সুষ্ঠু হয়েছে বলে সাফাই গেয়ে দায় সেরেছেন। যদিও এবার শুরু থেকে বলা হয়েছিল, কঠিন পরীক্ষায় নির্বাচন কমিশন উত্তীর্ণ হতে পারবেন কি না সেটাই দেখার বিষয়। সত্যি বলতে কি, সরকার এবং বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন কেউই ভাবেননি প্রকৃত প্রধান বিরোধী দল বিএনপি পৌর নির্বাচনে অংশ নেবে।

বিএনপি ও তার মিত্র জামায়াত এই দুই দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। দেশের বেশ কিছু স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামী ক্যাডারদের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেসহ আগামী নির্বাচনে বিএনপি এবং ক্ষমতাসীন জোটের অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে কার্যকরভাবে ব্যবহারের দাবি জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন তা অনেকটাই উপেক্ষা করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, সরকার কি সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। অন্য দিকে পুলিশের সুপারিশে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী খবরাখবর প্রকাশে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের ওপর জারি করে নানা বিধিনিষেধ।

ড. শাহদীন মালিকসহ অন্যরা উদ্বেগ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কমিশনের একপেষে নীতির কারণে। সরকারের আজ্ঞাবহ ইসি দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ইসি যদি নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের প্রভাবমুক্ত হয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার না দিতে পারে তাহলে পদত্যাগ করুক এটা তার জন্য ভালো হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ না হলে এ দেশের জনগণ তা মেনে নিবে না।


আরো সংবাদ



premium cement
সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ পাকুন্দিয়ায় গানের আসরে মারামারি, কলেজছাত্র নিহত আবারো হার পাকিস্তানের, শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পাটকেলঘাটায় অগ্নিকাণ্ডে ৩ দোকান পুড়ে ছাই ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

সকল