২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইরানকে দমাতে মধ্যপ্রাচ্যে আরো এক হাজার মার্কিন সেনা

চীন-রাশিয়ার হুঁশিয়ারি
-

ইরানের সাথে টানটান উত্তেজনার মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত এক হাজার সেনাসদস্য পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার রাতে দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শানাহান নতুন করে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেছেন, ইরানের ‘বৈরী আচরণের’ প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি জানিয়েছে রাশিয়া ও চীন।
ইরানি বাহিনী ‘শত্রুতামূলক আচরণ’ করছে অভিযোগ করে এর প্রতিক্রিয়ায় এসব সৈন্য মোতায়েন করা হচ্ছে বলে সোমবার রাতে এক ঘোষণায় জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শানাহান। এই ঘোষণার কিছুক্ষণ আগে পেন্টাগন নতুন ছবি প্রকাশ করে সেগুলো ওমান উপসাগরে ট্যাংকার হামলার সাথে ইরানের জড়িত থাকার বিষয়টি তুলে ধরেছে বলে দাবি করে। নিজের দেয়া বিবৃতিতে শানাহান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে সঙ্ঘাত চায় না। কিন্তু ওই অঞ্চলে আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য কর্মরত সামরিক সদস্যদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইরানি বাহিনীর শত্রুতামূলক আচরণের বিষয়ে এবং তাদের অনুগত গোষ্ঠীগুলো যারা ওই অঞ্চলজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও স্বার্থকে হুমকি দিচ্ছে, তাদের বিষয়ে আমরা যেসব নির্ভরযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছি ইরানের সাম্প্রতিক হামলাগুলো তা প্রমাণ করেছে।’
মার্কিন সামরিক বাহিনী ধারাবাহিকভাবে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সেনা সংখ্যা সমন্বয় করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত এই সেনা কোথায় মোতায়েন করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত দেড় হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবার ওই অঞ্চলে অতিরিক্ত আরো এক হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েনের ঘোষণা এলো। রোববার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে যুদ্ধ চায় না, তবু ‘যতগুলো বিকল্প আছে তার সবই বিবেচনা করছে (যুক্তরাষ্ট্র)’। মঙ্গলবার ফ্লোরিডায় মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডে মধ্যপ্রাচ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত সামরিক কমান্ডারের সাথে পম্পেওর বৈঠক করার কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবার হরমুজ প্রণালীর দক্ষিণে ওমান উপসাগরে দু’টি তেলবাহী ট্যাংকারের ওপর হামলা হয়। এসব হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু এর সাথে তারা কোনোভাবে জড়িত নয় বলে দাবি করেছে ইরান। সোমবার ইরান ঘোষণা করেছে, তারা ২০১৫ সালে ছয় বিশ্ব শক্তির সাথে তাদের স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি আর মেনে চলবে না, ২৭ জুনের মধ্যে তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ ওই চুক্তিতে বেঁধে দেয়া সীমা পেরিয়ে যাবে।
২০১৫ সালে ছয়টি পরাশক্তির সাথে ঐতিহাসিক চুক্তি অনুসারে ইরান পারমাণবিক উন্নয়ন কর্মসূচি কমিয়ে আনে। দেশটি ইউরেনিয়াম সীমিত রাখার ব্যাপারেও সম্মত হয়। ইউরেনিয়াম পারমাণবিক চুল্লি ও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এসব পদক্ষেপের বিনিময়ে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ওই সব দেশ। তবে গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করে নেন এবং ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদেশগুলোকে ইরান থেকে তেল কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চাপ দেয়। এতে অর্থনৈতিক চাপে পড়ে ইরান। কারণ, ইরানের অর্থনীতি তেলের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে দেশটি চুক্তি ভঙ্গ করে ইউরেনিয়ামের মজুদ বাড়ানোর হুমকি দিয়েছে। সোমবার ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কালমওয়ান্দি বলেছেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে চুক্তি ভঙ্গ করে ইউরেনিয়াম মজুদের সীমা লঙ্ঘন করতে যাচ্ছেন তারা।তবে ইরান এটাও বলেছে, ইউরোপীয় দেশগুলোর এখনো সময় আছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে ইরানকে রক্ষা করার। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি ইরানকে চুক্তি ভঙ্গ না করতে সতর্ক করেছে।
রাশিয়া ও চীনের হুঁশিয়ারি
এ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন সিদ্ধান্তের খবরে কড়া হুঁশিয়ারি জানিয়েছে রাশিয়া ও চীন। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরো এক হাজার সেনা মোতায়েনকে উসকানিমূলক পরিকল্পনা আখ্যা দিয়ে তা বাদ দিতে আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। গতকাল রাশিয়া উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ সংবাদ মঅধ্যমগুলোতে পাঠানো এক মন্তব্যে ইরানের সাথে যুদ্ধ উসকে দেয়ার মতো সচেতন চেষ্টা পরিহারের আহ্বান জানান। তেমনি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং লি মধ্যপ্রাচ্যে প্যান্ডোরার বাক্স খোলার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বেইজিংয়ে সফররত সিরিয়ান পরাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ মুয়াল্লেমের সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে লি বলেন, আমরা সব পক্ষকে বিবেচক ও সংযত থাকতে এবং ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বিস্তারের কোনো তৎপরতা না চালাতে ও প্যান্ডোরর বাক্স না খোলার আহ্বান জানাই।
ইরান কোনো দেশের সাথেই যুদ্ধ চায় না : রুহানি
ইরান ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা কোনো দেশের সাথেই যুদ্ধে জড়াতে চায় না। মধ্যপ্রাচ্যে আরো এক হাজার অতিরিক্ত সেনা পাঠাবে বলে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়ার পর নিজেদের অবস্থান জানিয়ে এমন কথা বললেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। তিনি বলেন, দ্বন্দ্বে জড়ানোর কোনো ইচ্ছা ইরানের নেই। তিনি দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া বক্তৃতায় বলেন, ‘ইরান কোনো দেশের সাথে যুদ্ধে জড়াতে চায় না।’ তিনি আরো বলেন, ‘গোটা বিশ্বের সাথে আমাদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রচেষ্টা ও আকাক্সক্ষা সত্ত্বেও তারা আমাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। তাদের এমন আকাক্সক্ষা ব্যর্থ হয়েছে। তারা কোনোদিনই সফল হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement