২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ায় বহুমুখী সঙ্ঘাত আরো গভীর হচ্ছে

-

লিবিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। রাজধানী ত্রিপোলি দখলের উদ্দেশে জে. খলিফা হাফতারের বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে দেশটির পরিস্থিতি ক্রম অবনতি ঘটছে। লিবিয়ায় নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। যার মধ্যে কিছু সমস্যা দীর্ঘদিনের। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মাইগ্রেশন, বিপন্ন মানবিক পরিস্থিতি ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর কারোর কারোর স্বার্থের দ্বন্দ্বের হস্তক্ষেপ ও সংশ্লিষ্ট অন্য শক্তিগুলোর উদসীনতায় দেশটির সমস্যা আরো জটিল রূপ ধারণ করেছে।
গত কয়েক সপ্তাহের সঙ্ঘাতে দেশটিতে দুই শতাধিক মানুষ মারা গেছে। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলে উত্থাপিত একটি ব্রিটিশ-খসড়া প্রস্তাবে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয়ই তা প্রত্যাখ্যান করে। যদিও এর পেছনের কারণ ছিল ভিন্ন। সাধারণ ইস্যু হলো এই প্রত্যাখ্যান ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে, যা হাফতারের পক্ষে গেছে।
খলিফা হাফতার রাজধানী ত্রিপোলিতে বোমাবর্ষণ করছেন। রাশিয়া হাফতারকে পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে রাখতে চায়। সৌদি আরবও তার পক্ষ নিয়েছে। সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ত্রিপোলির জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত সরকারকে বাদ দিয়ে হাফতারের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে। এসব বিষয় হাফতারের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। এর আগে এসব দেশ হাফতারের পদক্ষেপের বিপক্ষে ছিল। এভাবে তেলসমৃদ্ধ মুসলিম দেশ লিবিয়াকে ভয়াবহ রক্তাক্ত সঙ্ঘাতের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
হাফতার বেনগাজিতে অবস্থিত লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি-এলএনএর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃতি দিয়েছে ত্রিপোলি সরকারকে। ত্রিপোলি সরকারের নেতৃত্বে আছেন ফয়েজ আল-সাররাজ। তিনি লিবিয়ার বিষয়ে পশ্চিমা সরকারগুলোর নির্লিপ্ততার সমালোচনা করছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় লিবিয়াকে পরিত্যাগ করেছে। লিবিয়ায় বহুমুখী সঙ্ঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। এতে মানবিক সঙ্কট দেখা দিতে পারে। আল-সাররাজ বলেছেন, আট লাখ অভিবাসী ইতালি ও ইউরোপে পাড়ি দিতে প্রস্তুত রয়েছে। জবাবে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তো সালভিনি বলেছেন, লিবিয়ার সাম্প্রতিক লড়াইয়ের কারণে অভিবাসী নৌকাগুলোতে করে সন্ত্রাসীদের আগমনের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। তার দেশ কোনো অভিবাসী নৌকাকে ইতালি সৈকতের কাছে ভিড়ার অনুমতি দেবে না।
এ ছাড়া লিবিয়ার সরকার ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হাফতারকে সমর্থন দেয়ার অভিযোগ করেছিল। কিন্তু ফরাসি কর্মকর্তারা এই তা প্রত্যাখ্যান করেছে। লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘হাফতারের প্রতি সমর্থনের কারণে তার সরকার ফ্রান্সের সাথে সব সম্পর্ক স্থগিত করছে।’ এতে ফ্রান্স ‘হতাশা ব্যক্ত করেছে। ফ্রান্স বলছে, তারা জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় সার্বিক রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষে। লিবিয়া দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। এ কারণে অনেক সশস্ত্র গ্রুপের উত্থান ঘটেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের শক্তিহীনতার কারণে অনেক লোক সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী সরকারকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে দেশ অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। দেশ ও সরকারের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রায় বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গ্রুপ সঙ্ঘাতে লিপ্ত হচ্ছে। এর ফলে মনে হচ্ছে দেশ শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থেকে অনেক দূরে রয়েছে। কারণ কোনো সশস্ত্র গ্রুপই চলমান সঙ্ঘাত অবসানে যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।
সশস্ত্র ফরাসি গুপ্তচর
আলজাজিরা জানায়, তিউনিসিয়া-লিবিয়া সীমান্তে গত সপ্তাহে এক সাথে আটক ফরাসি নাগরিকদের একটি সশস্ত্র দল। এ দলটির সদস্যরা ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য। এরা লিবিয়ার জে. খলিফা হাফতারের পক্ষে তৎপরতা চালাচ্ছিল বলে জানা গেছে। রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল (আরএফআই) তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক অজ্ঞাত সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর জানিয়েছে।
তবে তিউনিসিয়ার সরকার এই খবর অস্বীকার করেছে। ফরাসি নাগরিকরা বাহিনীর খলিফা হাফতারকে সম্ভবত সহায়তা করছে বলে বিভিন্ন খবরের মধ্যে এই ফরাসি সশস্ত্র ব্যক্তিদের আটকের খবর জানা গেল। হাফতারের বাহিনী লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি দখল নিতে সম্প্রতি হামলা শুরু করেছে। তিউনিসিয়ার সরকার জানায়, তারা গত সপ্তাহের ১৩ জন ফরাসি নাগরিকসহ ২০ জনেরও বেশি ইউরোপীয়কে আটক করেছে। তারা প্রতিবেশী লিবিয়া থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে তিউনিসিয়ায় প্রবেশ করার চেষ্টা করছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশ জাদির সীমান্তে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ কূটনৈতিক পরিচয়ে ফরাসি নাগরিকরা তিউনিসিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করেছিল।
তিউনিসের ফরাসি দূতাবাস দাবি করেছে, সেই সময় লিবিয়ায় ফরাসি কূটনৈতিক মিশনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা নিরাপত্তা সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং যা ত্রিপোলি ও তিউনিসিয়ার মধ্যে কর্মীদের নিয়মিত স্থানান্তরের অংশ ছিল।


আরো সংবাদ



premium cement