২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিশ্বায়ন ও অবাধ বাণিজ্য প্রশ্নে এপেক সম্মেলনে বিভাজন

পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মোরেসবিতে গতকাল এপেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানকারী নেতৃবৃন্দ। স্বাগতিক দেশে প্রধানমন্ত্রী পেটার ও’নেইল (মাঝে), কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো (উপরে), চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (সামনের সারিতে ডান থেকে তৃতীয়), মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মাদ (ডানে), রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ (মাঝে ডান থেকে দ্বিতীয়), ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো (মাঝের সারিতে মাঝখানে), ব্রুনেইর সুলতান হাসান আল-বলকিয়াহ (দ্বিতীয় সারির বামে), মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স (বামে) এবং অন্যান্য নেতা : এএফপি -

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ অর্থনৈতিক সমন্বয়ের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এতে অনেক দেশ পিছিয়ে পড়বে। শনিবার এপেক সম্মেলনে যোগদানকারী নেতাদের অবাধ বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে দ্রুত মতপার্থক্যের সৃষ্টি হয়। তাদের কেউ কেউ ব্যাপক পরিবর্তন আনার দাবি করেছেন এবং অন্যরা বিশ্বায়নের বর্তমান অবস্থা বজায় রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন।
পপুয়া নিউগিনিতে এপেক সম্মেলনে বক্তব্য রাখার সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ অর্থনৈতিক সমন্বয়ের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, এতে অনেক দেশ পিছিয়ে পড়বে এবং এতে বৈষম্য বাড়বে। তিনি বলেন, উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্রেক্সিট বড় বড় অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বাণিজ্যে যুদ্ধের কারণে অবাধ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সমন্বয়ের বিষয়টি মুখ থুবড়ে পড়েছে। আর চীন ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ আমাদের ব্যবসায় বাণিজ্যকে আরো বেশি বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
তবে অস্ট্রেলিয়া, চীন ও রাশিয়া সংরক্ষণবাদের নিন্দা করেছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের ভাষণ দিতে উঠে অবাধ বাণিজ্যের পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই এর অভ্যন্তরীণ উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জনগণকে সম্মত ও উৎসাহিত করতে হবে। মরিসন দাবি করেন, অবাধ বাণিজ্যের কারণে ১৯৯১ সাল থেকে এক শ’ কোটিরও বেশি মানুষ কাজ ও পণ্য নাগালের মধ্যে পেয়ে চরম দারিদ্র্যের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে। তার বক্তব্যে চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের প্রতি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়া হয়। রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ মরিসনের সাথে একমত পোষণ তরে সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়ে বাণিজ্যের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও স্বচ্ছ বিধিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানান। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিয়াও পিং সংরক্ষণবাদের বিরোধিতার প্রতিধ্বনি করে বলেন, সংরক্ষণবাদ ও একতরফা ব্যবস্থার কালোছায়ার কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। তিনি অবাধ বাণিজ্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তার বৈশ্বিক শরিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
চীনের ঋণ কূটনীতির বিরোধিতায় পেন্স
এদিকে চীনের ঋণ কূটনীতির বিরুদ্ধে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে ‘উত্তম বিকল্প প্রস্তাব’ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাপুয়া নিউগিনিতে এপেক শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব দেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। গতকাল শনিবার চীনের ঋণ কূটনীতির ফাঁদে না পড়তে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে সতর্ক করে দেন ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম শীর্ষ এ ব্যক্তিত্ব। তিনি বরং চীনের ঋণের পরিবর্তে মার্কিন উন্নয়ন তহবিল থেকে ‘ভালো বিকল্প’ বেছে নেয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি তার বক্তৃতায় আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে দুই ক্ষমতাশালী দেশের মধ্যকার তীব্র প্রতিযোগিতার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। মাইক পেন্স বলেন, ‘আমরা আমাদের অংশীদারদের ঋণের সাগরে ডুবাতে চাই না। আমরা আপনার স্বাধীনতায় বলপ্রয়োগ করি না বা স্বাধীনতাকে বিপদগ্রস্তও করি না। আমরা একমুখী রাস্তা কিংবা সঙ্কুচিত বলয়ের প্রস্তাব দেই না। চীনের বেল্ট ও রোড ইনিশিয়েটিভের অবকাঠামো ব্যয় সংগ্রহ একটি স্পষ্ট ছিনতাই।’
পাপুয়া নিউ গিনিতে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশনের (এপেক) শীর্ষ সম্মেলনে দেয়া ভাষণে পেন্স আরো বলেন, এই অঞ্চলের দেশগুলোর অবকাঠামো প্রকল্পগুলোয় অর্থায়নের ব্যাপারে আগেই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যা কিছু দেশের প্রতিহিংসামূলক আচরণের বিপরীতে কাজ করছিল। এসব দেশ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসহ আরো কিছু দেশে অবকাঠামোগত ঋণ সরবরাহ করেছিল, কিন্তু সেসব ঋণের শর্তাবলি ছিল অত্যন্ত অস্পষ্ট। তারা যেসব প্রকল্পে সহায়তা করে সেগুলো নি¤œমানের হওয়ার কারণে বেশির ভাগ সময়ই টেকসই হয় না। আবার তারা এমন সব শর্ত এতে যুক্ত করে দেয়, যার ফলে ঋণ নেয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দেয়া বক্তৃতার পরপরই পেন্স তার ভাষণে এসব কথা বলেন। পেন্স বলেন, ‘বিস্তৃত এ অঞ্চল ও বিশ্বের সব জাতির প্রতি সম্মান জানিয়ে বলছি, আপনারা সার্বভৌমত্বকে ছাড় দিয়ে বিদেশী ঋণ নেবেন না। আপনারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করুন, স্বাধীনতা সংরক্ষণ করুন এবং আমেরিকার মতোই সর্বদা আপনার দেশকে প্রথমে রাখুন।’
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বদলে শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত হন পেন্স। তিনি তার বক্তব্যে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ব্যাপারে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হচ্ছেÑ স্বাধীন এবং মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, নৌযাত্রা এবং বিমান উড্ডয়নে স্বাধীনতা এবং অন্যান্য দেশের সার্বভৌমত্ব ও ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন। দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলেও জানান তিনি। পেন্স বলেন, দক্ষিণ চীন সাগর কোনো একক দেশের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ীই যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে নৌ ও বিমান চলাচল অব্যাহত রাখবে। বরং বিতর্কিত দাবি এড়িয়ে চলতে চীনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা আটক জীবন্ত মানুষকে গণকবর আগ্রাসন ও যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃষ্টির জন্য সারা দেশে ইসতিস্কার নামাজ আদায় আরো ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট তাপপ্রবাহ মে পর্যন্ত গড়াবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকার ভূমিকা চায় যুক্তরাষ্ট্র বিদ্যুৎ গ্যাসের ছাড়পত্র ছাড়া নতুন শিল্পে ঋণ বিতরণ করা যাবে না মিয়ানমারে ফিরল সেনাসহ আশ্রিত ২৮৮ জন বিএনপি ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে : কাদের

সকল