২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দেওয়ানগঞ্জে আ’লীগের দু’গ্রুপে দ্বন্দ্ব : গুলিতে যুবলীগকর্মী নিহত

আওয়ামী লীগ
নিহত আব্দুল খালেক - ছবি : নয়া দিগন্ত

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিক প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে আব্দুল খালেক (৪২) নামে এক যুবলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন।

বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবলীগ কর্মী আব্দুল খালেকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। তিনি দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার ডালবাড়ি এলাকার আব্দুল মজিদের ছেলে এবং দেওয়ানগঞ্জ একে মেমোরিয়াল কলেজ ছাত্রসংসদের জিএস ছিলেন।

গুরুতর আহতদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল এবং দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে ওই ঘটনার জন্য দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সোলায়মান হোসেনের কর্মী সমর্থকদের দায়ী করেছেন নৌকা সমর্থিত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের কর্মী সমর্থকরা।

স্থানীয় সূত্র ও দেওয়ানগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম আমিনুল ইসলাম জানান, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ভাতিজা চুকাইবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান বুধবার রাতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে নির্বাচন সংক্রান্ত বৈঠক করছিলেন। রাত পৌনে ১১টার দিকে ২০-২৫টি মোটরসাইকেলে হেলমেটধারী অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের জানালা দিয়ে ১৫-২০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে দ্রুত কেটে পড়ে। এতে পরিষদের ভেতরে থাকা যুবলীগ কর্মী আব্দুল খালেক গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট আনার আলী, যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ মুসলিম ও দেওয়ানগঞ্জ এ কে মেমোরিয়াল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ রুবেলসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। হামলাকারীদের শনাক্ত ও তাদেরকে গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।

আরো পড়ুন :
টঙ্গীতে ওয়েস্টেজ নিয়ে আ’লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১
টঙ্গী সংবাদদাতা, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯
টঙ্গীতে কারখানার ওয়েস্টেজ মালের ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে প্রাণ গেল নিরীহ ট্রাকচালকের। এ ঘটনায় টঙ্গী ট্রাক টার্মিনালে উত্তেজনা বিরাজ করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে টার্মিনালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত ট্রাকচালকের নাম আবদুর রাজ্জাক হোসেন ওরফে শিমুল চৌধুরী (২৭)।

পরিবহন শ্রমিকেরা জানান, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম টঙ্গী শিল্প এলাকার স্কুইব রোডে ন্যাশনাল পলিমার কারখানায় দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসায় করেন। তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে এককভাবে কারখানার ওয়েস্টজ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেলিম মিয়া ও তার ছোট ভাই স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা নূর মুহাম্মদ মামুন চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে যুবলীগ নেতা সাইফুলের সাথে সেলিম-মামুন গ্রুপের বিরোধ চলছিল। কারখানার বাতিল মালের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম ও তার ভাই মামুন গত সোমবার যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে এলাকায় নিয়ে সংবর্ধনা দেয়। কিন্তু ওয়েস্টেজ ব্যবসায় এই বিরোধের বিষয়টি প্রতিমন্ত্রী অবগত ছিলেন না। তারা প্রতিমন্ত্রীকে বিভ্রান্ত করে এ সংবর্ধনা দেয়ার পর গত বুধবার দলবল নিয়ে ন্যাশনাল পলিমারের সামনে সশস্ত্র মহড়া প্রদর্শন করে এবং কারখানার ওয়েস্টেজ নিতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়। এ অবস্থায় যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সমর্থকদের এলাকায় ডেকে পাঠান।

গাজীপুর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি ও যুবলীগ নেতা আফজাল তালুকদার বলেন, ‘আমরা সাংগঠনিক কাজে প্রায়ই সাইফুল ভাইয়ের অফিসে দেখা করতে যাই। বুধবার বিকেলে সাইফুল ভাই কিছু লোক নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে ফোন দেন। আমরা ২০-২৫ জন নেতাকর্মী একটি পিকআপ ভ্যানে করে সাইফুল ইসলামের স্থানীয় দেওড়া কাঁঠালদিয়া টেকের বাড়ির অফিসে যাচ্ছিলাম। ন্যাশনাল পলিমার কারখানা অতিক্রম করে আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম হোসেনের কার্যালয়ের সামনে রোড ব্রেকার পার হওয়ার সময় সেলিমের ছোট ভাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মামুনের নেতৃত্বে শতাধিক উচ্ছৃঙ্খল যুবক আমাদের গাড়িতে অতর্কিতে হামলা চালায়। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা লাঠি ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে আমাদের অন্তত ১০ জন গুরুতর আহত হন। তাদের মধ্যে ট্রাকচালক আবদুর রাজ্জাক হোসেন ওরফে শিমুল চৌধুরী বৃহস্পতিবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান।’ শিমুলের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চররমিজ গ্রামে।

এ দিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নিহত শিমুলের লাশ টঙ্গী ট্রাক টার্মিনালে আনা হলে সহকর্মীরা লাশ জাপটে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় টার্মিনালে শোকের ছায়া নেমে আসে। এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা জানান। গতকাল বাদ আসর টঙ্গী ট্রাক টার্মিনালে নিহতের জানাা শেষে লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম মিয়ার বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তার সহোদর মামুনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যুবলীগ নেতা সাইফুল ন্যাশনাল পলিমারে দীর্ঘ দিন ধরে এককভাবে ব্যবসায় করে আসছেন। এতে এলাকাবাসী তার প্রতি ক্ষুব্ধ। বুধবার বিকেলে সাইফুলের কর্মী আলামিন ট্রাক স্ট্যান্ড থেকে লোক নিয়ে এলাকায় গেলে তাদের নিজেদের মারামারিতে একজন নিহত হয়েছেন।

এ দিকে সেলিম-মামুনের ফুফাতো ভাই যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বাসায় দলীয় নেতাকর্মীরা আসার পথে সেলিমের অফিসের সামনে বিনা উসকানিতে মামুনের নেতৃত্বে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ১০ জনকে আহত করে। তাদের মধ্যে ইতোমধ্যে চিকিৎসাধীনে একজন যুবলীগ কর্মী মারা গেছেন। বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে নব্য যোগদানকারীরা মামুনের নেতৃত্বে এ হামলা চালায় বলেও সাইফুল ইসলাম দাবি করেন।

এ ব্যাপারে জিএমপির টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি এমদাদুল হক জানান, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।


আরো সংবাদ



premium cement