২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী ও যুবলীগ সদস্যকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা

-

ময়মনসিংহ শহরের আকুয়া এলাকায় যুবলীগের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পুলিশের তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী ও মহানগর যুবলীগের সদস্য সাজ্জাদ আলম শেখ আজাদ ওরফে আজাদ শেখকে (৪০) গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে শহরের আকুয়া হাবুন বেপারির মোড় সংলগ্ন এলাকায় এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এর আগে সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা শুরু হয়। এঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার পর আজাদ শেখের সমর্থক ও যুবলীগ কর্মীরা আকুয়া এলাকায় একটি বেকারি ও চরপাড়ায় হাসপাতালের সামনে দু’টি বাসে অগ্নিসংযোগ ও ১৫/১৬টি ইজিবাইক ভাঙচুর করে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ শহরের আকুয়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মহানগর যুবলীগের সদস্য সাজ্জাদ আলম শেখ আজাদ ও যুবলীগ সদস্য শেখ ফরিদের সমর্থকদের মধ্যে প্রায় দু’মাস ধরে সংঘর্ষ, গুলি বিনিময়, ককটেল বিস্ফোরণ ও ধাওয়াপাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে আকুয়া হাবুন বেপারী মোড় সংলগ্ন আজাদ শেখের বাড়ির এলাকায় আজাদ বাহিনীর সাথে যুবলীগের সদস্য শেখ ফরিদের সমর্থকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। দু’পক্ষের ৩০/৪০ জন সমর্থক দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসময় দু’পক্ষের মধ্যে গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নিলে পুলিশের সামনেই দু’পক্ষ বেপরোয়াভাবে গোলাগুলি করতে থাকে। বিকেল তিনটার দিকে প্রতিপক্ষরা আজাদ শেখকে বাসার কাছে আকুয় দক্ষিণ পাড়ায় (মাক্কা মিয়ার বাড়ীর সামনে) গুলি ও কুপিয়ে আহত করে। পরিবারের সদস্যরা গুরুতর জখম অবস্থায় আজাদ শেখকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আজাদ শেখের সমর্থকরা হাসপাতালে ছুটে যায় এবং কান্নায় ভেঙে পড়ে।

এদিকে ঘটনার পর একদল সন্ত্রাসী আকুয়া ফিরোজ লাইব্রেরী মোড় এলাকায় বাসার সামনে রাখা সাংবাদিক কামরান পারভেজের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। বিকেল পাঁচটার দিকে আজাদ শেখের সমর্থকরা আকুয়ার বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দেয় এবং আকুয়া হাবুন বেপারির মোড় সংলগ্ন শেখ ফরিদের আত্মীয়ের এক বেকারিতে অগ্নিসংযোগ করে। একই সময়ে চরপাড়ায় হাসপাতালের সামনে রাস্তায় যুবলীগ কর্মীরা বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে দু’টি বাসে অগ্নিসংযোগ ও কয়েকটি ইজিবাইক ভাঙচুর করে।

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের দেয়া এক ব্রিফিংএ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কিছুদিন ধরে প্রায় প্রতিদিনই দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। কখনো দিনে তিন/চারবার গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার দুপুরে দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির সময় আজাদ শেখকে তুলে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষরা। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধারের জন্য খুঁজতে থাকে। পরে শোনা যায় তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, আজাদ শেখের হাতে ও পায়ে গুলির চিহৃ রয়েছে। বুকে –মুখে কোপের দাগ এবং গলা কাটা ছিল। হত্যাকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। আজাদ শেখ হত্যা ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

স্থানীয়রা আরো জানান, গত ২০ জুন আকুয়া কলাবাগান এলাকায় দু’পক্ষের গোলাগুলির ঘটনায় ৬ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি স্বপন সরকার (৩০) যুবলীগ কর্মী মোর্শেদ (১৮) ও শিশু বাপ্পী (১২) পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। ওইদিন পুলিশের একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। ওইদিন হাবুন বেপারী মোড়ে আকুয়া ইউপির চেয়ারম্যান মরহুম আফাজউদ্দিন সরকারের অফিসে গুলিবর্ষণ করে আজাদের লোকজন। ঘটনার সময় অফিসের ভেতরে কয়েকজন মহিলা পুলিশ অবস্থান করছিল। পরে রাত ৯ টার দিকে আজাদ শেখের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে প্রতিপক্ষরা। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর কর্মীরা আগুন নেভায়। এরপর হাবুন বেপারীরমোড় ও আকুয়া দক্ষিণপাড়ায় সরকারবাড়ি মসজিদের সামনে দুই ট্রাক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু পুলিশের সামেনই দু’পক্ষের লোকজন প্রায়শ গোলাগুলি ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রাতে থেমে থেমে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে শিশুসহ এলাকার মানুষের ঘুম হারাম হয়ে যায়। গত রমজান মাস থেকে দু’পক্ষের মধ্যে গোলোযোগের জেরে আকুয়া জুবলি কোয়ার্টার মোড় থেকে হাবুন বেপারির মোড় হয়ে মোড়লপাড়া মোড় এবং জুবলি কোয়ার্টার মোড় থেকে দক্ষিণপাড়া হয়ে মোড়লপাড়া মোড় পর্যন্ত এলাকার সবক’টি বাড়িঘর ও দোকানের দরজা-জানালা ও গেইটে সন্ত্রাসীদের দায়ের কূপসহ ভাঙচুরের ছাপ রয়েছে। প্রায়শ; পুলিশের সামনেই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে কিন্তু পুলিশ নির্বিকার থাকে। যুবলীগের ওই দুই নেতা সরকার দলীয় প্রভাবশালী দুই রাজনৈতিক বলয়ের ছত্রছায়ায় নিজস্ব বাহিনী গড়ে তোলে বলেও স্থানীয়রা জানান।

কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) খন্দকার শাকের আহামেদ জানান, আজাদ শেখের নামে কোতোয়ালী মডেল থানায় অস্ত্র আইন, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও চুরির ১২টি মামলা রয়েছে। সে একজন তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী।


আরো সংবাদ



premium cement