২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাৎ

না’গঞ্জ বন্দরে ইউপি চেয়ারম্যান-সচিব বরখাস্ত, মামলার নির্দেশ

-

প্রথমে মিলেমিশে দুর্নীতি করেছিলেন নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ ও তার ইউপি সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ। ট্রেড লাইসেন্স ও জন্মনিবন্ধন বাবদ ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে। তবে ধরা পড়ার আশঙ্কায় টাকা আত্মসাতের দায় একজন অন্যজনের ওপর চাপিয়েছিলেন। নিজেকে রক্ষা করার জন্য চেয়ারম্যান গত বছর ২৮ নভেম্বর তার সচিবের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাদের প্রথমে বরখাস্ত হয়েছেন সচিব ইউসুফ আর মঙ্গলবার বরখাস্ত হয়েছেন চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ।
গত মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে চেয়ারম্যান এহসানকে বরখাস্ত করা হয়। একই সাথে চূড়ান্তভাবে তাকে কেন বরখাস্ত করা হবে না সে বিষয়ে জানতে চেয়ে চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ ছাড়াও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অপর এক স্মারকে আত্মসাৎকৃত টাকা আদায়ের জন্য চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ ও সাবেক ইউপি সচিব মোহাম্মদ ইউসুফের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ আদেশ প্রকাশ হয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে তিনটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একটি প্রজ্ঞাপনে বরখাস্তের আদেশ, দ্বিতীয়টিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ বাকিটায় আত্মসাৎ করা টাকা উদ্ধারে মামলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ এই দুই অর্থবছরের জন্মনিবন্ধন ও ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ছয় মাসের ট্রেড লাইসেন্স খাতে আদায়কৃত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বন্দর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ ও তার সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ। এই দুই খাতে মোট ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এ ঘটনায় অডিট আপত্তি তোলা হয়। পরে তদন্তে নামে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
সংস্থাটির তদন্তে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জন্মনিবন্ধন ফি বাবদ সাত লাখ ৭৩ হাজার ৩৮০ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে একই খাতে ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭২০ টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৯০০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তদন্তে এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই টাকা আদায়সহ ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে। একই সাথে আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউপি সচিবকে বরখাস্ত করে।
বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় বা জেলা প্রশাসন থেকে এখনো আমি চিঠি পাইনি। চিঠি হাতে পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরখাস্ত হওয়া সচিব ইউসুফ জানান, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমি ছিলাম না এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বদলি হয়ে যাই। সুতরাং তিনটি অডিট আপত্তির একটাতে আমি ছিলাম। বাকি দুটোতে আমি ওই ইউনিয়নে ছিলাম না।
এ দিকে বরখাস্তের পর চেয়ারম্যানে এহসান একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস ফেসবুকে ভাইরাল হয়। বরখাস্তের পর চেয়ারম্যানের আবেগঘন ফেসবুক স্ট্যাটাস সে লিখে বন্দর ইউনিয়নবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি। হাজারও প্রমাণ হাতে থাকার পরও আজ সত্য প্রতিষ্ঠায় মনে হয় ব্যর্থ হয়ে গেলাম।


আরো সংবাদ



premium cement