২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডাকসু নির্বাচন : দাবি আদায়ে ভিসি কার্যালয় ঘেরাও আজ

হলে ভোটকেন্দ্র না রাখার দাবি
-

সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল আকাক্সিক্ষত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচন। ডাকসু-বিহীন দীর্ঘ ২৮ বছরের বন্ধ্যত্ব কাটানোর প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের মূল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোটকেন্দ্র। শেষ পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র কি ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবি মেনে হলের বাইরের অ্যাকাডেমিক ভবনে হবে নাকি হলেই থাকবে ভোটকেন্দ্র? সে অনুযায়ী নিজেদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলো। যদিও হলেই ভোটকেন্দ্র রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। তবে প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের প্রতি শুরু থেকেই দ্বিমত পোষণ করেছে বেশির ভাগ ছাত্রসংগঠন। এ দাবিতে অনড় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলো। দাবি আদায়ে আজ সোমবার ভিসি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবে প্রগতিশীল ছাত্র জোট।
জানা গেছে, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র অ্যাকাডেমিক ভবনে বসানোর দাবি বেশ পুরনো। সর্বপ্রথম এ দাবি উঠেছিল সেই ১৯৯৪ সালে। দুই যুগ পরে এবারের ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফের একই দাবি উঠেছে। তবে দাবি এক থাকলেও পাল্টেছে এর দাবিদার।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির শাসনামল ১৯৯৪ সালে এ দাবি ছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের। তখন এর বিরোধিতা করেছিল বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল। তবে এবার ছাত্রদল ও প্রগতিশীল বাম ছাত্রসংগঠনগুলো সেই দাবিতে অনড়। কিন্তু বিরোধিতা করছে ছাত্রলীগ। সময় এবং সুযোগের পরম্পরায় এ বড় দুই ছাত্রসংগঠনের অবস্থান পরিবর্তন বিভিন্ন মহলে গুঞ্জনের জন্ম দিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে ১১ মার্চ অনুষ্ঠেয় নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়েছে কোনো কোনো ছাত্রসংগঠন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত হলো- যথাসময়েই হবে নির্বাচন।
হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র রাখার বিষয়ে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা মধুতে যাওয়া শুরু করেছি। এটা দীর্ঘপ্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে হলে সহাবস্থান নেই। এক রকম ভীতির রাজনীতির চর্চা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তা সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। এখন প্রশাসনের কাছে দু’টি পথ খোলা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, হয় নির্বাচন পিছিয়ে হলে সহাবস্থান এবং নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নইলে হলের বাইরে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
অন্য দিকে হলে ভোটকেন্দ্র রাখার দাবির পক্ষে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, ’৯০-এর পরে ক্যাম্পাসে বর্তমানে সর্বাধিক গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করছে। সে জন্য হলে ভোটকেন্দ্র হলে কোনো সমস্যা নেই। তা ছাড়া সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে।
এ দিকে গত ২৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ডাকসুর গঠনতন্ত্রের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সংশোধন ও নির্বাচনী আচরণবিধি প্রণয়ন করা হয়। সেখানে ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবির মুখে গঠনতন্ত্রের কয়েকটি ধারা সংশোধন করে প্রার্থী ও ভোটারের বয়স সর্বোচ্চ ৩০ বছর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ছাত্রসংগঠনগুলোর মূল দাবি হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি গৃহীত হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তখন থেকেই হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি আরো জোরালো হয়ে ওঠে। এ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন, বিক্ষোভ, মশাল মিছিল করে বেশ কয়েকটি ছাত্রসংগঠন। অনশনে বসতে চেয়েও প্রশাসনের বাধায় বসতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকোর্সের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ আশরাফ। একই দাবিতে চলমান কর্মসূচির মধ্যে চার দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। গত রোববারের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলনরে অংশ হিসেবে আজ সোমাবার ভিসির কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক এবং বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবীর নয়া দিগন্তকে বলেন, গতকাল আমাদের আলটিমেটামের শেষ দিন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে দাবি মানেনি। যেহেতু দাবি মানেনি তাই আজ দুপুর ১২টায় আমাদের ভিসি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement