২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা সতর্কতায় দেশের বিমান ও স্থলবন্দরে যাত্রীদের পরীক্ষা

চীনের উহানে আটকা ৪০০ বাংলাদেশী
-

চীনের প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে সতর্কতার নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে। দেশের দুইটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও দুই স্থলবন্দরে চীন থেকে আসা যাত্রীদের শারীরিক পরীক্ষা অব্যাহত রয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছে এমন কাউকে পাওয়া যায়নি। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, সন্দেহের বশে ৯ জন যাত্রী তাদের শরীরে জ্বর আসায় আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু আমরা তাদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ পাইনি। এর মধ্যে করোনা ভাইরাস আক্রমণ করলে যে লক্ষণ দেখা যায় দু’জনের মধ্যে আমরা এর কাছাকাছি লক্ষণ পেয়ে রক্ত পরীক্ষা করিয়েছি। তারা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েছে বলে শনাক্ত হয়েছে। এ দিকে চীনের অবরুদ্ধ উহান শহরে আটকা পড়েছেন ৪০০ বাংলাদেশী। বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের খোঁজখবর নিচ্ছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে ইতোমধ্যে মারা গেছে ৪১ জন। আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার তিনশতাধিক মানুষ।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব না হলেও স্বাস্থ্য অধিদফতর সতর্ক রয়েছে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে রেখে রেখেছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে মাস্ক পরে চলাফেরা করা, প্রয়োজন না হলে বাইরে না যাওয়া, কমপক্ষে ১৪ দিন বাসায় থাকা, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। কারণ সাবানের মধ্যে ভাইরাস অথবা ব্যাকটেরিয়ার কোনো জীবাণুই বেঁচে থাকতে পারে না। হাঁচি দিলে নাকে-মুখে টিসু অথবা রুমাল ধরতে হবে। কোনো কিছুই না থাকলে শার্টের উপরের দিকে হাতায় অথবা মহিলারা শাড়ির আঁচল, ওড়না ব্যবহার করলে হাঁচির মাধ্যমে জীবাণু কম ছড়াবে।
এ দিকে কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চীনের অবরুদ্ধ উহান শহরে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও গবেষক আটকা পড়েছে। উহানকে এই ভাইরাস ছড়ানোর ইপিসেন্টার বা কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। গতকাল ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, উহানে তিন থেকে চার শ’ বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও গবেষক রয়েছেন। তাদের ব্যাপারে বেইজিংয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস খোঁজখবর নিচ্ছে। উহানে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন হলে তা দ্রুত সরবরাহের জন্য চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছে দূতাবাস। চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের নিরাপত্তা নিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে দূতাবাস আলোচনা করছে। অজানা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪১ জন মারা গেলেও এ পর্যন্ত কোনো বিদেশীর সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস একটি হটলাইন নাম্বার (+৮৬১৭৮-০১১১-৬০০৫) চালু করেছে। এ দিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে উহান শহরে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের বিচলিত না হয়ে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
শিল্প ও পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয় এক সময়ের জমজমাট শহর উহান এখন নিস্তব্দ। শহরটির সাথে যোগাযোগ স্থাপনকারী গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শহরের এক কোটিরও বেশি মানুষকে ঘর থেকে বেরোনোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীন সরকার। তাই শহরটি চীনের অন্যান্য অঞ্চল থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য উহান শহরের কেন্দ্রে নতুন বিশেষায়িত হাসপাতাল বানাচ্ছে প্রশাসন। ৩ ফেব্রুয়ারি নতুন হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চীনে এই পর্যন্ত ৮৩০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ২০০২-২০০৩ সালে সার্স রোগে চীনের মূল ভূখণ্ডে মারা গিয়েছিলেন ৩৪৯ জন। আর পাশের হংকংয়ে মারা গিয়েছিল ২৯৯ জন।
উহানের সামুদ্রিক খাদ্য বাজার থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত ৩১ ডিসেম্বর এ বাজারে কাজ করা এক ব্যক্তির মধ্যে অজানা সংক্রমণের হদিস মেলে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। সেই সংক্রমণ তার স্ত্রীর মধ্যেও ছড়িয়েছিল। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণ সার্স ভাইরাসের মতোই প্রাণঘাতী। তার পর থেকেই মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে উহানসহ চীনের নানা প্রান্তে। অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায়ও এই ভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, আক্রান্ত ব্যক্তিরা সম্প্রতি চীনের উহান বা অন্যান্য প্রদেশে ভ্রমণ করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement