২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সব সমস্যা দূর করে মডেল ওয়ার্ড গঠনের অঙ্গীকার প্রার্থীদের ডিএসসিসির নবগঠিত ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড

-

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসির) নবগঠিত ৬৩ ওয়ার্ডের চলমান নগরায়ণ কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি ও দখল মুক্ত করার অঙ্গীকার করছে প্রার্থীরা। পাশাপাশি দারিদ্র্যবিমোচন ও অপরাধ প্রবণতা দূর করে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে একটি আধুনিক ওয়ার্ড উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটার ও সমর্থকদের মন জোগাতে ব্যস্ত রয়েছেন প্রার্থীরা। পাশাপাশি স্থানীয় বাজার ঘাট, পাড়া-মহল্লা ও চায়ের দোকানে বইছে নির্বাচনী আলোচনার ঝড়।
৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা নানা প্রতিবন্ধকতা দূর করে এ ওয়ার্ডকে সুপরিকল্পিত আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন ওয়ার্ডে রূপান্তর করারও অঙ্গীকার করেছেন। পাশাপাশি ওয়ার্ড এলাকার প্রতি বছরের জলাবদ্ধতা নিরসন, মশক ও বেওয়ারিশ কুকুর নিধন, ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ, সরকারি চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়ন, প্রকৃত শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ও মানোন্নয়ন, খেলার মাঠ নির্মাণ, কমিউনিটি সেন্টার স্থাপন, পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপন, ওয়ার্ড অভ্যন্তর এলাকাগুলোতে সুষ্ঠু স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনাসহ পরিকল্পিত প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ, প্রতিটি অলিগলিতে সড়ক বাতি স্থাপন, এলাকার কবরস্থানসহ বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা।
নগরীর ডেমরার সাবেক মাতুয়াইল ইউনিয়ন ভেঙে গঠিত হয়েছে ডিএসসিসির ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড। সংসদীয় ঢাকা-৫ আসনের ডেমরা থানাধীন কাজলারপাড়, ভাঙ্গাপ্রেস, কাজীগাঁও, মাতুয়াইলপশ্চিমপাড়া, মাতুয়াইলমাঝপাড়া, মাতুয়াইল উত্তরপাড়া, মাতুয়াইল শরিফপাড়া, নিয়ে গঠিত হয়েছে ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে এক লাখ ২০ হাজার লোকের বসবাস হলেও ভোটার সংখ্যা ৩৪ হাজার ২৬৫ জন।
সরেজমিন এ ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে, ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকাটি নিম্নাঞ্চল বলে এখানে প্রতি বছর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত জলাবদ্ধতা লেগে থাকে। ভারী বৃষ্টিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বাড়িঘর পানিতে ডুবে যায়। তা ছাড়া অভ্যন্তরীণ অলিগলির সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা, অতিরিক্ত মশা-মাছি, বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব, নোংরা পরিবেশ, যত্রতত্র আবর্জনা-ময়লার ভাগাড়, স্যুয়ারেজ ও বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনা, দুর্গন্ধযুক্ত পানি, অবৈধ পরিবহন এখানে বড় সমস্যা, রাস্তার পাশে অবৈধ দখল, রাস্তার ওপর বাজার স্থাপন, অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা ও সর্বত্র মাদকের আনাগোনাসহ নানা নাগরিক সমস্যায় রয়েছেন এ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। নাগরিক সুবিধায় এখানে কমিউনিটি সেন্টার, সরকারি হাসপাতাল, পার্ক-শিশু পার্ক, স্টেডিয়াম বা খেলার মাঠ, পাবলিক লাইব্রেরিসহ কোনো বিনোদন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। এখানকার একটি বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে দখল দারিত্ব। মাদক কারবারির আনাগোনাও বেশ চোখে পড়ার মতো তাদের ওপেন তৎপরতা এবং প্রশাসনের নীরবতায় তাদের ব্যাপক বিস্তার হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এ অবস্থায় কাউন্সিলর নির্বাচনে এ ওয়ার্ডকে শতভাগ বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা। তা ছাড়া মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্সের ঘোষণাও দিচ্ছেন তারা।
৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা হলেনÑ বিএনপি মনোনীত প্রার্থী যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপি নেতা মো: সোহেল আহম্মেদ (ঘুড়ি) আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো: সফিকুল ইসলাম খান দিলু (ট্রাক্টর) নাগরিক কমিটির মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী সাংবাদিক মো: কামরুজ্জামান কামরুল (লাঠিম),আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আলহাজ মো: হাসেম মোল্লা হাসু (রেডিও)।
বিএনপি প্রার্থী মো: সোহেল আহম্মেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে এই ওয়ার্ডবাসীর সেবা করে আসছি, আমি যদি কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে পারি তাহালে এখানে প্রকৃত শিক্ষার বিস্তার ঘটাব। অপরিচ্ছন্ন এ ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা ফিরিয়ে আনার পরিবেশ সৃষ্টি করব। দারিদ্র্য বিমোচনে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করব। জলাবদ্ধতা দূর করে ড্রেনেজ-ব্যবস্থাসহ পরিকল্পিত রাস্তাঘাট নির্মাণ করব। পাড়া-মহল্লাভিত্তিক পঞ্চায়েত কমিটি গঠন করে অপরাধ প্রবণতা সৃষ্টি হয় এমন সব প্রতিবন্ধকতা সমাজ থেকে দূর করে ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডকে
য়ৈন কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি ও দখল মুক্ত করে মডেল ওয়ার্ডে পরিণত করব এবং আমার বিজয়ের মধ্য দিয়ে কারা বন্দী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দলন আরো বেগবান করব ইনশা আল্লাহ।
আওয়ামী-লীগ মনোনীত প্রার্থী মো: সফিকুল ইসলাম খাঁন দিলু নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি ৬৩ ওয়ার্ড কাউন্সিলর হয়ে এই ওয়ার্ডে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। রাস্তা ঘাট, পরিবেশ, মশক নিধন, রাস্তায় বাতি দেয়াসহ অনেক কাজ করেছি, যা ওয়ার্ডবাসীর কাছে দৃশ্যমান। তিনি আরো বলেন অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে ওয়ার্ডবাসী আবারো আমাকে ভোট দিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত করবে ইনশা আল্লাহ। আমি এবার নির্বাচিত হলে ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডকে একটি আধুনিক ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তুলব।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আলহাজ মো: হাসেম মোল্লা হাসু নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও আমি দলীয় নমিনেশন থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এলাকার মানুষের অনুরোধে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। আশা করি এ ওয়ার্ডের জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। তিনি আরো বলেন ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকাটি অবহেলিত এলাকা। স্বাধীনতার পর থেকে এখানে ঘনবসতি বাড়তে থাকলেও পরিকল্পিতভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। বিশেষ করে এখানকার অবহেলিত জনগোষ্ঠী তাদের কাক্সিক্ষত আশা ও নানা প্রতিবন্ধকতাসহ সমস্যার কথা ব্যক্ত করতে পারে না। আমি নির্বাচিত হলে বৃহৎ ওই জনগোষ্ঠীর কাক্সিক্ষত আশা পূরণ করে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করব। বিশেষ করে এখানকার স্বাস্থ্যগত সমস্যা সমাধানে পারিবারিক সাস্থ্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করব। দখল দারিত্ব শক্ত হাতে দমন করব। মাদক প্রতিরোধ নয় নির্মূল করে ছাড়ব। তা ছাড়া অন্যান্য সব অপরাধ শক্ত হাতে দমন করব। নাগরিক সুবিধায় এখানে পার্ক ও খেলার মাঠসহ অন্যান্য সব নাগরিক সুবিধার ব্যবস্থা করব। পাশাপাশি মশক নিধন, জলাবদ্ধতা, সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনসহ ওয়ার্ডের সব প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যা দূর করে ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডকে বসবাসযোগ্য একটি আধুনিক ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তুলব ইনশা আল্লাহ।
নাগরিক কমিটির মনোনীত প্রার্থী সাংবাদিক মো: কামরুজ্জামান কামরুল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি নির্বাচিত হলে এমন দৃষ্টান্তমূলক উন্নয়ন করব যাতে ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডবাসী এ ওয়ার্ডের পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করেন। এখানকার বড় সমস্যা দখল দারিত্ব সেটা আমি শক্ত হাতে দমন করব, এ ওয়ার্ডকে মশামুক্ত করব। এ ওয়ার্ডের অসমাপ্ত সব উন্নয়ন কাজসম্পন্ন করব। তা ছাড়া ওয়ার্ডের নানা সমস্যার সমাধানসহ সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি দূর করে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত আদর্শ ওয়ার্ড গড়ে তুলব। আর এ ওয়ার্ডকে শতভাগ ডিজিটাল ওয়ার্ড হিসেবে রূপান্তর করতে প্রযোজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করব। পাড়া-মহল্লাভিত্তিক পঞ্চায়েত কমিটি গঠন করে অপরাধ প্রবণতা সৃষ্টি হয় এমন সব প্রতিবন্ধকতা সমাজ থেকে দূর করে ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডকে
য়ৈন কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি ও দখল মুক্ত করে মডেল ওয়ার্ডে পরিণত করব আমি জনগণের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করবই ইনশা আল্লাহ।
এ দিকে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এলাকার নানা দুর্ভোগ দূর করতে মুখে অনেকেই নানা রকম আশ্বাস দিচ্ছে। বিজয়ী হয়ে সে কথা আর মনে রাখেনা, আর উন্নয়নের ওয়াদাগুলো বাস্তবায়ন করা পরে আর তেমন একটা হয়ে ওঠে না। তার পরেও মানবসেবা উন্নয়নে বিশ্বাসী এমন ব্যক্তিকেই কাউন্সিলর হিসেবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে জানিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা।


আরো সংবাদ



premium cement