২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রাচীন মুসলিম নিদর্শন গোঞ্জে আলী জোমাদ্দার জামে মসজিদ

অনন্য স্থাপত্য
-

কালের সাক্ষী হয়ে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর আমড়াগাছিয়া গ্রামে এখনো দাঁড়িয়ে আছে গোঞ্জে আলী জোমাদ্দার জামে মসজিদ। মির্জাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে উত্তর আমাড়াগাছিয়া গ্রামে সুলতানী আমলে নির্মিত স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি। ওই গ্রামের মো: গোঞ্জে আলীর নামেই মসজিদটির নামকরণ করা হয় বলে স্থানীয়রা জানান। এ নামেই এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছে মসজিদটি।
আমড়াগাছিয়া গ্রামের ওয়াজেদ জোমাদ্দার বলেন, বাংলার স্বাধীন সুলতানী আমলের শেষ দিকে কিংবা মুঘল আমলে মসজিদ নির্মিত বলে ধারণা করা হয়। তবে সঠিকভাবে কেউই এর নির্মাণ তারিখ বলতে পারে না এবং এর অবস্থান সম্পর্কেও সঠিক কিছু জানা যায়নি। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩৫ ফুট এবং প্রস্থ ৩০ ফুট। এর তিন পাশে দেয়াল আছে এবং চারটি করে পিলার রয়েছে। মসজিদের সব দেয়াল প্রায় সাড়ে ৫-৬ ফুট চওড়া। মসজিদের পূর্ব দিকে একটি এবং দক্ষিণ দিকে একটি করে দরজা ও মসজিদে ওঠা-নামার জন্য সিঁড়ি দেয়া আছে। মসজিদের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের কারুকাজ রয়েছে। মসজিদের চার কোনায় একই মাপের চারটি মিনার আছে। উত্তর দিকের একটি মিনার ভেঙে গেছে। মসজিদটির প্রধান কক্ষের ওপর আধা গোলাকৃতির একটি সুন্দর গম্বুজ আছে। বিশাল ওই গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি কোনো রড-সিমেন্ট ছাড়াই চুনা-সুরকি ও পোড়ামাটির ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। আর সামনে রয়েছে একটি পুকুর ও হুজুর আলী খাল। মসজিদটি বহু বছর ধরে পতিত অবস্থায় থাকায় চার দিকে গজিয়ে ওঠা জঙ্গলে ঢাকা পড়ে আছে। মসজিদটি ৩-৪ ফুট মাটির নিচে দেবে গেছে বলে স্থানীয়রা জানান।
বাংলাদেশ প্রতœতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটি একাধিকবার মেপে গেছে কিংবা সংস্কারের আশ্বাসও দিয়েছে; কিন্তু মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। তিন বছর আগে মিনার ভেঙে পড়ার কারণে ভয়ে কেউ এখন এ মসজিদে নামাজ পড়েন না। এ মসজিদের পাশেই একটি টিনের ঘর তুলে সেখানে নামাজ আদায় করা হয়। মসজিদটি সংস্কার না করায় ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আর ব্যবহার না থাকায় মসজিদটিও গাছ-লতাপাতায় ঢেকে গেছে।
প্রাচীন স্থাপত্যকলার নিদর্শন এ মসজিদ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে বহু দর্শনার্থী উত্তর আমড়াগাছিয়া গ্রামে আসেন; কিন্তু দর্শনার্থীদের যাতায়াতের কোনো সুব্যবস্থা নেই। মসজিদের ইমাম মো: আবু বকর বলেন, উত্তর আমড়াগাছিয়া গ্রামে গোঞ্জে আলী জোমাদ্দার জামে মসজিদটি বহু বছরের পুরনো। মসজিদের সংস্কার না হওয়ায় একটি মিনার ভেঙে গেছে। তাই ছোট একটি টিনের ঘর তুলে স্থানীয়রা এখানে নামাজ আদায় করেন; কিন্তু বৃষ্টির সময়ে মুসল্লিদের চলাচলসহ নামাজ আদায়ে কষ্ট হয়। প্রতœতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে মসজিদটির সংস্কার করলে অনেক সুবিধা হতো।
মসজিদের সভাপতি মো: আবদুল রহিম মৃধা বলেন, সরকারি লোকজন এসে মসজিদটি দেখে ও মসজিদের দৈঘ্য-প্রস্থ মেপে নিয়ে গেছেন অনেকবার। মসজিদের নামে ২৪ শতাংশ জমি আছে; কিন্তু মসজিদটি সংস্কার হচ্ছে না। মসজিদটি সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ করে মুসলমানদের অবদান ও ঐতিহাসিক নিদর্শন আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে তিনি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement