২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পুনর্দখলে মরিয়া বিএনপি জামায়াত, প্রচারণায় এগিয়ে মহাজোট!

বগুড়া-২ আসন
-

আসছে ডিসেম্বরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেকটাই নিশ্চিত। আর তাই ভোটের আলাপ-আলোচনায় সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো দেশ। দেশের অন্যান্য এলাকার মতো বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনেও নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে পুরোদমে। ভোটারদের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙা করতে তৎপর হয়ে উঠেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় তারা সাধারণ মানুষের খোঁজখবর নিচ্ছেন, কুশলবিনিময় করছেন প্রতিনিয়ত। শুভেচ্ছা পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো শিবগঞ্জ এলাকাজুড়ে।
বগুড়া-২ আসনটি মহাজোটের শরিকদল জাতীয় পার্টির দখলে। এ আসনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম ও দলীয় নেতাকর্মীদের সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষণীয়। তবে নানা কারণে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি দুর্বল হলেও দলটির জনসমর্থন বেশি। জামায়াতের প্রকাশ্য রাজনীতি না থাকলেও গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি হেভিওয়েট প্রার্থীকে হারিয়ে জামায়াতের প্রার্থী আলমগীর হুসাইন চেয়ারম্যান ও আবদুস সামাদ বিপুল ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগে সাতজন ও বিএনপিতে ছয়জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। জাপার বর্তমান সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হবেন। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্নার নামও আলোচনায় রয়েছে। দীর্ঘ ৪৫ বছর পর আওয়ামী লীগ আসনটি ফিরে পেতে চায়। জাপার দখলে থাকা আসনটি বিএনপি ও জামায়াত পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। সব মিলিয়ে এ আসনে ১৫ জনের বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন।
এ আসনে মোট ভোটার দুই লাখ ৯৬ হাজার ৪০৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৪৭ হাজার ৬৯৫ ও নারী এক লাখ ৪৮ হাজার ৭১৪ জন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহাদাতুজ্জামান বিএনপি প্রার্থী মতিউর রহমান প্রামাণিককে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এ কে এম হাফিজার রহমান জামায়াতের অধ্যক্ষ শাহাদাতুজ্জামানকে ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে এমপি হন। জাপা প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ তৃতীয় ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমানে ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না চতুর্থ হয়েছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে বিএনপি প্রার্থী রেজাউল বারী ডিনা এমপি হয়েছিলেন। তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন জাপার শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এ কে এম হাফিজুর রহমান জাপা প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহকে পরাজিত করে এমপি হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে বিনাভোটে মহাজোট প্রার্থী জেলা জাপার সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগ
এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা আকরাম হোসেন, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ফকির, পৌরমেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) বগুড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক, জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: রেজাউল আলম জুয়েল, জেলার সাবেক কৃষকলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট আবদুল মোত্তালিব।
মনোনয়নপ্রত্যাশী আজিজুল হক বলেন, মনোনয়ন পেলে তিনি এ আসনে বিজয়ী হতে পারবেন। মোস্তাফিজার রহমান মোস্তা বলেন, কেন্দ্র চাইলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন। মনোনয়ন পেলে তিনি বিজয়ী হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। মুক্তিযোদ্ধা আকরাম হোসেন বলেন, তার সহযোগিতায় ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোজাফফর হোসেন শিবগঞ্জ আসনে বিজয়ী হয়ে ছিলেন। এবার তিনি মনোনয়ন পেলে ৪৫ বছর পর আসনটি আওয়ামী লীগকে উপহার দিতে পারবেন বলে তার আশা। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম ফকির বলেন, আমার বিশ্বাস দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক বলেন, দলীয় সমর্থন ও মনোনয়ন পেলে জয়ী হবো। ডা: রেজাউল আলম জুয়েল বলেন, মনোনয়ন পেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।
বিএনপি
অনেকদিন সংসদের বাইরে থাকায় বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা কিছুটা দুর্বল হলেও তৃণমূলে দলটির পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। এ আসনে ছয়জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা দীর্ঘ দিন ধরে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থাকছেন। গণসংযোগ করছেন।
সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- দুই বারের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট এ কে এম হাফিজুর রহমান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মীর শাহে আলম, সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় সমবায় দলের সভাপতি অধ্যক্ষ নুর আফরোজ বেগম জ্যোতি, সাবেক পৌরমেয়র মতিউর রহমান মতিন, দুইবারের ভাইস চেয়ারম্যান মোছা: বিউটি বেগম ও জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এম আর ইসলাম স্বাধীন।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মীর শাহে আলমও আলোচিত মনোনয়নপ্রত্যাশী।
তিনি বলেন, ‘দল আমাকে মনোনয়ন দিলে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে অতীতের মতো এ আসনে বিজয়ী হবো।’ সাবেক এমপি এ কে এম হাফিজুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন। সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় সমবায় দলের সভাপতি অধ্যক্ষ নুর আফরোজ বেগম জ্যোতিও এ আসনে নির্বাচন করতে চান। তিনিও মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জামায়াত
এদিকে নিবন্ধন বাতিল হলেও এ আসনে আলোচনায় আছে জামায়াত। শোনা যাচ্ছে, শিবগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি অধ্যক্ষ শাহাদাতুজ্জামান যেকোনো প্রতীকে এ আসনে নির্বাচন করতে পারেন।
তিনি দাবি করেন, তাদের সংগঠনের প্রকাশ্য কার্যক্রম না থাকলেও তারা মাঠপর্যায়ে বেশ সংগঠিত। তাই আসন্ন নির্বাচনে এ আসনটি জোটের কাছে চেয়েছে জামায়াত। আসন ছেড়ে না দিলে এখানে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে জামায়াত।
জাতীয় পার্টি
বর্তমান সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে এলাকার উন্নয়নে সাধ্যমতো কাজ করেছি। আসনটি মহাজোট ছেড়ে দিলে বিপুল ভোটে জিতব।
অন্য দিকে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্নাও এ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। মান্না সমর্থকেরা জানান, মানুষ তাকে নির্বাচনে চায়। আর নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে মান্না বিজয়ী হবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement