২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৌদি ‘মোসানেদ’ জটিলতায় ৫৫৮ রিক্রুটিং এজেন্সি

-

সৌদি ডমেস্টিক ওয়ার্কার ম্যানেজমেন্টের জন্য প্রবর্তিত অনলাইন সিস্টেম (মোসানেদ) জটিলতায় পড়েছে নারী কর্মী পাঠানোর সাথে সম্পৃক্ত ৫৫৮ রিক্রুটিং এজেন্সি। কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে দ্রুত এ জটিলতা থেকে বের হয়ে কোটা পদ্ধতিতে নারী কর্মীর চাহিদার বিপরীতে পুরুষ কর্মীর কোটা নিশ্চিত করা যায়, সেটি নিয়ে গতকাল ঢাকার নয়াপল্টনে একটি রেস্টুরেন্টে বৈঠক হয়েছে।
‘ফিমেল ওয়ার্কার রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের’ (ফোরাব) সভাপতি টিপু সুলতান ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমানসহ শতাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও তাদের প্রতিনিধিরা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব সরকারের একটি অনলাইন সিস্টেমের নাম হচ্ছে ‘মোসানেদ’। এ অনলাইন সিস্টেমে জটিলতা দেখা দেয়ায় বাংলাদেশের এজেন্সিগুলো শত শত নারী কর্মী পাঠানোর পরও চাহিদা মোতাবেক পুরুষ কর্মীর কোটা পাচ্ছে না। মূলত এ জটিলতা থেকে বের হওয়ার জন্যই রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধিদের কাছ থেকে মোসানেদ সম্পর্কিত বিভিন্ন জটিলতার তথ্য উপাত্ত নেয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে তারা জনশক্তি রফতানিকারকদের নেবেন।
সৌদি আরব, জর্দানসহ অন্যান্য দেশে নারী শ্রমিক পাঠানো সাথে সম্পৃক্ত একজন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নাম না প্রকাশের স্বার্থে গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, মোসানেদ হচ্ছে সৌদি আরব ডমেস্টিক ওয়ার্কারদের একটি অনলাইন সিস্টেম। মোসানেদ জটিলতার উদাহরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিয়ম হচ্ছে দুইজন নারী কর্মী পাঠালে একজন পুরুষ কর্মীর কোটা তৈরি হয়। আমরা মোসানেদের মাধ্যমে ইতোমধ্যে শত শত নারী কর্মী পাঠিয়েছি। কিন্তু তার পরও পুরুষ কর্মীর কোটা তৈরি হচ্ছে না। এসব অভিযোগ স্টাফদের কাছ থেকে নোট নেয়া হয়েছে। এমন আরো অনেক ইস্যু রয়েছে।
গতকাল শনিবার ‘ফিমেল ওয়ার্কার রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের’ সভাপতি টিপু সুলতান নয়া দিগন্তকে বলেন, মোসানেদ নিয়ে কার কি সমস্যা রয়েছে সেগুলো আমরা আজকে জানলাম। বৈঠকে একজন এক্সপার্টও রেখেছিলাম। কেউ ভালো বলেছেন, কেউ খারাপ বলেছেন। এগুলোই নোট করেছি। কিভাবে এগুলো সমাধান করা যায়, তা নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করব। আলোচনা কি বায়রার মাধ্যমে হবে না কি সরাসরি হবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বায়রার মাধ্যমেও করতে পারি, আবার আমরাও করতে পারি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মোসানেদ সিস্টেমে দুইজন নারী কর্মী পাঠালে একজন পুরুষ কর্মীর কোটা তৈরি হয়। এ জটিলতা ছাড়াও আরো অনেক সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, অনেক সময় সবকিছু কমপ্লিট করার পরও এটা ‘মোসানেদ সিস্টেমে’ অ্যাড (যোগ) হচ্ছে না।
আরো জটিলতার কথা জানিয়ে সভাপতি টিপু সুলতান বলেন, আমাদের কাউন্টার পার্ট সৌদি এজেন্সি যেকোনো অভিযোগ মোসানেদে জানালে তারা সাথে সাথে অ্যাকশন নেয়, সিস্টেম বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আমরা তাদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগ দিলেও সৌদি মিনিস্ট্রি কোনো অ্যাকশন নেয় না।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দেশ থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে সৌদি আরব, জর্দান, ওমান, কাতার, লেবানন, হংকং, ম্যাকাওসহ বিভিন্ন দেশে ৭৩ হাজার ৬৩ নারী কর্মী বিদেশে গেছেন। তার মধ্যে সৌদি আরবে গিয়েছেন ৫৩ হাজার ৬০৯ জন। যদিও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ২৪৯ কর্মী বিদেশে যান। সেখানে যাওয়ার পর নানাবিধ সমস্যা ও এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠায় অনেক নারী কর্মী দেশে ফেরত চলে আসেন। যার কারণে সেপ্টেম্বর মাসে নারী কর্মী যাওয়ার হার কমতে কমতে এখন ছয় হাজারে ঠেকেছে।
এ প্রসঙ্গে জনশক্তি রফতানির সাথে সম্পৃক্ত একজন অভিবাসন বিশেষজ্ঞ গত রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, নারী কর্মী পাঠাতে এ মুহূর্তে কোনো সমস্যাই নেই। তবে যেসব নারী কর্মী দেশে ফিরে আসছেন তাদের সংখ্যা এক শতাংশও না জানিয়ে তিনি বলেন, সমস্যাগুলো কোথায় তা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের খতিয়ে দেখা দরকার। কেন ফেরত আসছেন? তার মতে, নারী কর্মী ফেরত আসার অন্যতম কারণের একটি হচ্ছে ঠিকমতো ট্রেনিং না থাকা।


আরো সংবাদ



premium cement