১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫
`


বিএনপি ও আ’লীগের যেসব প্রার্থী আলোচনায়

সুনামগঞ্জ-১ আসন
-

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি-আওয়ামী লীগ ও শরিক দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থকেরা ততই নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী মাঠ মুখরিত করে রেখেছেন। হাওরবেষ্টিত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা-তাহিরপুর ও মধ্যনগর) নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপির আটজন প্রার্থীর নাম নিয়ে সরব আলোচনা চলছে। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন রয়েছেন টপ অব দ্য এইটে। এ ছাড়া সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলহাজ আব্দুস সামাদ আজাদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাচনাবাজার ইউনিয়নের দুইবারের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীম, সাবেক এমপি সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকারের নামও নেতাকর্মীদের মুখে মুখে শুনা যাচ্ছে।
অপর দিকে এই আসনে বিএনপির যে চারজনের নাম দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের মুখে সবচেয়ে বেশি আলোচনা শুনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি মো: আনিসুল হক, তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল, সাবেক এমপি নজির হোসেন ও ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা: রফিক চৌধুরীকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের এই আটজন আলোচিত মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাড়াও সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে শুভেচ্ছা বিনিময়ে নির্বাচনী মাঠ সরব করে রেখেছেন। আসনটি ধরে রাখতে বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে হাওরের গ্রামে গ্রামে ঘুরে এলাকার স্কুল-কলেজ, মাদরাসা-মন্দির, রাস্তা-ঘাট, কলেজ ও বিদ্যালয়ের হোস্টেল নির্মাণ, বিদ্যুতায়নসহ উন্নয়নকাজ করে সভা, সমাবেশ, গণসংযোগ চালিয়ে শেখ হাসিনার উন্নয়নবার্তা মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিচ্ছেন। তিনি এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ও গণসংযোগে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও বসে নেই। এমপি রতনকে টপকে মনোনয়ন পেতে ছয়জন মনোনয়নপ্রত্যাশী এক মঞ্চে কাজ করছেন।
এ আসনের দু’বারের এমপি রতনের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে দলের কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী নির্বাচনী মাঠে সভা করেছেন। তারা দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে দেখা করে এমপির বিরুদ্ধে নালিশ করেছেন বলে জানা গেছে। সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ফুটবল মার্কা) হিসেবে নির্বাচন করে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। দলীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, মনোনয়নপ্রত্যাশীর কেউ কেউ গত নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ফুটবল মার্কার পক্ষে আর কেউ কেউ নৌকার পক্ষে নির্বাচন করেছিলেন। আসন্ন নির্বাচনেও এমনটি হবে কি না এ নিয়ে এলাকায় তুমুল সমালোচনাসহ হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমান এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ‘নয়া দিগন্ত’কে বলেন, জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারে। দলীয় সভানেত্রী ছাড়া অন্য কেউ বলতে পারবেন না মনোনয়ন কে পাচ্ছেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর সুনামগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকায় যে উন্নয়ন হয়নি গত ১০ বছরে আমি তার কয়েক গুণ বেশি উন্নয়ন করেছি, আমার উন্নয়নকাজ সব দৃশ্যমান আছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রশ্নে তিনি বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার আশায় আমার বিরুদ্ধে যারা মিথ্যাচার করছেন, তারা কোনো দিনও বর্তমান সরকারের উন্নয়নের কথা মুখে আনেন না। প্রতিযোগিতা থাকা ভালো, প্রতিহিংসা থাকা ভালো না, এগুলো সময় হলেই ঠিক হয়ে যাবে। তারা যদি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে তাহলে নৌকার পক্ষে আওয়াজ তুলোক, আগামীতেও নৌকার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেলে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করে এই আসনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারব। রেজাউল করিম শামীম বলেন, আমি দলের একজন নিবেদিতকর্মী হিসেবে সারা জীবন দলের জন্য কাজ করেছি, জেল-জুলুম থেকে শুরু করে তৃণমূল আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকা প্রতীক দিলে, দলে কোনো গ্রুপিং থাকবে না, আমার বিজয় সুনিশ্চিত হবেই ইনশাআল্লাহ্। রণজিৎ সরকার বলেন, আমি সারা জীবন দলকে তৃণমূলে সুসংগঠিত করতে কাজ করেছি। দলের প্রতি অনুগত থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সবসময় দলীয় সভানেত্রীর উন্নয়নবার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মীরা জাতীয় নির্বাচনের জন্য আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নেতাকর্মীদের নিয়ে আমি নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় কাজ করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে সুনামগঞ্জ-১ আসনের বিজয় নিশ্চিত করে তাকে এই আসনটি উপহার দেবো।
বিএনপির বেশ কয়েকজনের মধ্যে চারজনকে নিয়ে ভোটের মাঠে দলীয় তৃণমূল নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে চলছে তুমুল আলোচনা। বিভিন্ন চাপের মুখেও শান্তিপ্রিয় আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের মাঠ থেকে কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণীদের সাথে জোর লবিং করে যাচ্ছেন তারা। মনোনয়ন নিশ্চিত করতে তারা ঢাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা ছাড়াও কেউ কেউ লন্ডনের সাথেও সরব যোগাযোগ রাখছেন। সাবেক এমপি নজির হোসেন ও আরো দু’জন তরুণ নেতা লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে দেখা করে এসেছেন বলে শুনা যাচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের নির্বাচনী এলাকায় কাজ করে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নজির হোসেন বলেন, দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এলাকার দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ করে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন জোরদার করে তাকে মুক্ত করতে হবে। তারেক রহমানের নামে সব ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করে তিনি বলেন, দলীয় মনোনয়ন দিলে আমি আবারো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। অধ্যাপক ডা: রফিক চৌধুরী বলেন, ২০০৮ সালে ভোটে লড়ে এক লাখ ভোট পেয়েছিলাম। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলে এ আসনে বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত। বিএনপির তরুণ মনোনয়নপ্রত্যাশী আনিসুল হক বলেন, আমি প্রথমেই বেগম জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চাই, তারেক রহমানসহ সব নেতার ওপর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করে বলেন, আমি ওয়ান/ইলেভেন থেকে শুরু করে সব আন্দোলনে সোচ্চার ভূমিকা রেখে যাচ্ছি। যত দিন বেগম জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের ওপর থেকে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না হবে তত দিন আন্দোলন চালিয়ে যাবো। যুক্তফ্রন্টের সাত দফা দাবি এই সরকারকে মানতে বাধ্য করে তাদের পতন ঘটাব। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠ সরব করে রেখেছি। তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর এলাকার সব নেতাকর্মী নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে কাজ করছি। আশা করি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমাকে মূল্যায়ন করবেন, আমি মনোনয়ন পেলে এ আসনের জনগণ ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিজয় সুনিশ্চিত করবেন। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, এ মুহূর্তে দাবি একটাইÑ ২০ দলীয় জোট নেত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। আমি সারা জীবন দলের জন্য জেল-জুলুম সহ্য করে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলন করে যাচ্ছি। দল নির্বাচনে গেলে মনোনয়ন চাইব। আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব, যদি আমাকে না দিয়ে যাকে দেবে আমি তার পক্ষেই মাঠে নামব।
জানা যায়, ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো: আব্দুল হেকিম চৌধুরী, ১৯৭৯ সালে একতা পার্টির প্রার্থী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ১৯৮৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী (১৪ দলীয় জোটে নৌকা প্রতীক) প্রসূণ কান্তি রায় (ররুণ রায়), ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বদরুদ্দোজা আহম্মেদ সুজা, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর ১৯৯১ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী (১৪ দলীয় জোটে নৌকা প্রতীক) নজির হোসেন, পরে তিনি দল বদল করে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল। ২০০১ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির নজির হোসেন। ২০০৮ সালের ভোটে ১ লাখ ৫৫ হাজার ২৫২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক ডা: রফিক চৌধুরী পেয়েছিলেন ৯৪ হাজার ৪৫৮ ভোট। সবশেষে বিএনপি-বিহীন ২০১৪ সালের বিতর্কিত একতরফা নির্বাচনেও সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের (নৌকা) মার্কার বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ফুটবল মার্কা) হিসেবে নির্বাচন করে বিশাল ব্যবধানে পরাস্ত হন। সময়েই বলে দেবে এই আসনে কার পাল্লা কতটুকু ভারী, কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি আর ধানের শীষই বা যাবে কার হাতে।


আরো সংবাদ



premium cement
স্বর্ণের অলঙ্কার বিক্রিতে মজুরি ৬ শতাংশ ফ্রান্সে কারা কর্মকর্তাদের হত্যা করে প্রিজনভ্যান থেকে আসামি ছিনতাই নিউ কালেডোনিয়ায় সহিংসতার পর কারফিউ, বন্ধ বিমানবন্দর থাইল্যান্ডের কারাগারে অনশনে থাকা তরুণীর মৃত্যু ভারতীয় পত্রিকার রিজার্ভ চুরির খবর মিথ্যা : বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গোক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট, যুবলীগ নেতা গ্রেফতার রাফা ক্রসিং বন্ধের জন্য মিসরকে দায়ী করল ইসরাইল দেশের মাটি ধরে রাখাই এখন অনেক কঠিন : কিয়েভ কুবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ ডোনাল্ড লু'র সফর নিয়ে আ'লীগ ও বিএনপিতে এত কথাবার্তা কেন? চট্টগ্রাম নেমে যা জানালেন বন্দীদশা থেকে মুক্ত নাবিকরা

সকল