০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

নিউ কালেডোনিয়ায় সহিংসতার পর কারফিউ, বন্ধ বিমানবন্দর

আগুন ধরিয়ে সড়ক অবরোধ করেছে আন্দোলনকারীরা - সংগৃহীত

স্থানীয় নির্বাচনে অভিবাসীদের ভোটাধিকার দিতে আনা নির্বাচনী সংস্কার পরিকল্পনার প্রতিবাদে ফরাসি অঞ্চল নিউ কালেডোনিয়ার নোমিয়ায় সহিংসতার পর কার্যত অচলাবস্থা বিরাজ করছে।

শহরজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি। জারি করা হয়েছে কারফিউ। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সফর স্থগিত করেছেন।

নিউ কালেডোনিয়ার রাজধানী নোমিয়ায় সোমবার রাতভর সহিংসতার পর মঙ্গলবার সকালে সবাইকে ‘ধৈর্য্য ধরা ও শান্ত থাকার’ আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয় সরকার।

এদিন এক বিবৃতিতে সরকারের পক্ষে আরো জানানো হয়েছে, ‘দশকের পর দশক ধরে গড়ে ওঠা একটি অঞ্চল অসন্তোষ, হতাশা এবং ক্রোধের কারণে ধ্বংস হতে পারে না এবং এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হতে দেয়া যায় না।’

ইন্দো-প্যাসিফিক-সংলগ্ন এবং অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব দিকের এই ফরাসি অঞ্চলে সহিংসতার পর ১২ ঘণ্টার কারফিউ জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য শহরজুড়ে নামানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নোমিয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি বন্ধ রাখা হয়েছে এবং সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

নিউ কালেডোনিয়া হাই কমিশন জনসমাগম এবং অ্যালকোহল বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কমিশনের প্রধান লুই লে ফ্রাঙ্ক জানান, সহিংসতায় ৩৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে আহত হয়েছে অনেকেই। কিন্তু সোমবার রাতে সহিংসতায় কোনো সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

শ’ দুয়েক তরুণ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়ো হয়ে এই সহিংসতা শুরু করে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, তারাই সহিংসতা করেছেন এবং পুলিশই ছিল তাদের লক্ষ্যবস্তু। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হবে বলে বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করতে বাধ্য হয় বলেও দাবি তার।

যে কারণে সহিংসতা
কর্তৃপক্ষের নির্বাচনী সংস্কার প্রস্তাবের জের ধরে নোমিয়ায় অস্থিরতা ও সহিংসতার শুরু। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দ্বীপটিতে বসবাসরত অভিবাসীদেরও ভোটাধিকার ক্ষমতা দিতে চায় ফ্রান্স। তাই নিউ কালেডোনিয়ার সংবিধানে পরিবর্তন নিয়ে ফ্রান্সের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি পার্লামেন্টে আলোচনার আগের দিন অর্থাৎ রোববার থেকে আন্দোলন তীব্র হতে থাকে।

কারণ অভিবাসীদের ভোটাধিকার দেয়া হলে কানাক নামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মর্যাদা কমে যাবে বলে মনে করছে আন্দোলনকারীরা।

১৯৯৮ সালে করা নোমিয়া চুক্তির সংস্কার করতে চায় ফ্রান্স। ২৫ বছরের বেশি সময় পর এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ফরাসি ভূখণ্ডে নিরবচ্ছিন্নভাবে থাকা মানুষদের স্থানীয় পর্যায়ে ভোটাধিকার দেয়ার পরিকল্পনা করছে ফ্রান্স। দ্বীপের দুই লাখ ৭০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে ৪০ হাজার ফরাসি নাগরিক। তাদের স্থানীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার নেই। এমন পরিস্থিতিকে ‘অযৌক্তিক’ মনে করে ফ্রান্স।

সোমবার ফরাসি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানা বলেন, ‘নিউ কালেডোনিয়ার একমাত্র স্থানীয় নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা বাতিল করা শুধু একটি রাজনৈতিক ইচ্ছা নয়, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন তাদের জন্য এটি একটি নৈতিক অবস্থান।’

নিউ কালেডোনিয়ার বাসিন্দাদের মধ্যে ১৮ ঊর্ধ্ব সবার ফ্রান্সের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেয়ার অধিকার রয়েছে।

সম্প্রতি গণভোটে হেরেছে আন্দোলনকারীরা
২০২১ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কানাক সম্প্রদায়ের প্রথম নেতা পেয়েছে নিউ কালেডোনিয়া। তিনি দ্বীপটির স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। কারণ দেশটির বাসিন্দারা নিউ কালেডোনিয়াকে ফরাসি অঞ্চল হিসেবে রাখার পক্ষে ভোট দিয়েছে।

প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় গণভোটের ফলাফল ছিল কাছাকাছি। বিজয়ী পক্ষ পেয়েছে ৫৭ শতাংশ ও ৫৩ শতাংশ ভোট।

২০২১ সালে নিউ কালেডোনিয়াকে ফরাসি অঞ্চল হিসেবে রাখার পক্ষে ভোট দেয় ৯৬ শতাংশ মানুষ। কিন্তু ওইবার ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। ভোট পড়েছে ৫০ শতাংশ। কানাক আদিবাসীরা বলেছে, করোনা মহামারির কারণে তারা ভোট বর্জন করেছে।

সফর স্থগিত করেছেন নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সহিংসতা ও অস্থিরতা কারণে নিজের নিউ কালেডোনিয়ার সফর স্থগিত করেন নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটারস। তার মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এক বিবৃতিতে তিনি জানান, নিউ কালেডোনিয়া কর্তৃপক্ষ যাতে তাদের অঞ্চলে সঙ্ঘাত-সহিংসতা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে, সেই বিবেচনায় সফরটি স্থগিত করা হয়েছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement