২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নন-এমপিও শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলা

-

এমপিওকরণের দাবিতে আন্দোলরত শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছে পুলিশ। গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেস কাবের সামনে নন-এমপিও শিক্ষকেরা অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষকেরা জানান, সকাল ১০টা থেকে বিপুল শিক্ষক জাতীয় প্রেস কাবের সামনে অবস্থান নেন। বেলা ১১টার পর পুলিশ এসে তাদের সেখান থেকে সরে যেতে বলে। সেখানে অবস্থানের অনুমতি নেই বলে জানায় পুলিশ। এতে শিক্ষকেরা সরে যেতে না চাইলে পুুলিশের সাথে তাদের ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। অনেকে রাস্তায় শুয়ে পড়েন। এ সময় অনেককে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় পুলিশ। কয়েকজনকে লাঠিপেটাও করে। এ সময় পড়ে গিয়ে আহত হন কেউ কেউ। দু’জন নারী শিক্ষকসহ চারজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা এভাবে চলার পর পুলিশ তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে সমর্থ হয়।
নন-এমপিও শিাপ্রতিষ্ঠান শিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয়ভূষণ নয়া দিগন্তকে বলেন, পুলিশ আমাদের কাছে লিখিত অনুমতি চায়। কিন্তু আমাদেরকে কখনোই লিখিত অনুমতি দেয়া হয়নি। আমরা পুলিশকে বলেছি আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ; কিন্তু তারা আমাদের জোর জবরদস্তি করে সরিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, তিন হাজারের ওপরে শিক্ষক গতকাল কর্মসূচিতে যোগ দেন।
নন-এমপিও শিাপ্রতিষ্ঠান শিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি ও সমন্বয়ক শফিকুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা যখন সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস কাবের সামনে অবস্থান নিই তখন সেখানে তেমন পুলিশ ছিল না; কিন্তু পরে অনেক পুলিশ জড়ো হয়ে আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়। এ সময় শিক্ষক মনিরুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রহুল আমিন কুড়িগ্রাম, শোভা রানী ও শিলা রানী খুলনাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি বলেন, পুলিশের হামলায় কয়েকজন আহত হন। এদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
নতুন বছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওকরণ বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ না থাকায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গত ১০ জুন থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করার চেষ্টা করেন শিক্ষকেরা; কিন্তু প্রথম দিনই পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে যায় তাদের কর্মসূচি। এরপর শিক্ষকেরা প্রতিদিনই জাতীয় প্রেস কাবের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। প্রতিদিনই তারা পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। গতকাল বিপুল শিক্ষক জড়ো হন জাতীয় প্রেস কাবের সমানে। শুরুতে পুলিশের উপস্থিতি কম থাকায় সেখানে তারা বেশ কিছুক্ষণ অবস্থানের সুযোগ পান।
আগামীকালও তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষক তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার দাবিতে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস কাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন। ৩১ ডিসেম্বর থেকে তারা আমরণ অনশন শুরু করেন। ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ সাজ্জাদুল হাসান জাতীয় প্রেস কাবের সামনে অনশনরত শিক্ষকদের মধ্যে এসে দাবি মেনে নেয়ার কথা জানান শিক্ষকদের। সাজ্জাদুল হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে জানাতে বলেছেন তিনি আপনাদের দাবি মেনে নিয়েছেন। তিনি আপনাদের অনশন ভেঙে যার যার বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন; কিন্তু গত ৭ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত জাতীয় বাজেটে শিক্ষকদের এমপিওকরণ, জাতীয়করণের বিভিন্ন দাবি মানা এবং বরাদ্দ বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ না থাকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষকেরা।
নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমিপওভুক্তির দাবিতে ২০০৬ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষকেরা। বারবার আমরণ অনশন, লাগাতার অবস্থান, বিক্ষোভ মিছিলসহ ২৬ বার বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করেছেন তারা রাজধানীসহ সারা দেশজুড়ে। রাজধানীতে ২০১৩ সালে আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে পুলিশের বিষাক্ত পিপার স্প্রের ঘটনায় আহত হয়ে ১৪ জানুয়ারি মারা যান শিক্ষক মোহাম্মদ সেকেন্দার আলী (৪৫)। তিনি পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার চরবয়রা মডেল বালিকা দাখিল মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন।
ফেডারেশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পাঁচ হাজার ২৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যা সম্পূর্ণ নন-এমপিও।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement