২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইউরোপে বর্ণবাদের শিকার আরো অনেক ফুটবলার

ফ্রান্সের করিম বেনজেমা, বেলজিয়ামের রোমেলু লুকাকু শিকার হয়েছেন বর্ণবাদী আচরণের - ছবি : সংগ্রহ

ইউরোপীয় ফুটবলে বর্ণবাদে অভিযোগ নতুন নয়। অনেক খেলোয়াড়ই বিভিন্ন সময় এর শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন। ভিন্ন মহাদেশ থেকে যাওয়া এই ফুটবলাররা দুই বা তিন প্রজন্ম ধরে সেখানে বসবাস করেও এখনো প্রতিনিয়ত শুনছেন অভিবাসী ও শ্বেতাঙ্গ না হওয়ার অপবাদ। অনেক ক্ষোভ-আর অভিমান নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘোষণা দিয়েছেন জার্মানির মিডফিল্ডার মেসুত ওজিল। বর্ণবাদী আচরণে অতিষ্ঠ ওজিল বলেছেন, যারা এত ঘৃণা পোষণ করে, সেই দেশের প্রতিনিধিত্ব আর করা যাচ্ছে না। অনেক গর্ব নিয়ে জার্মানির জার্সি গায়ে তুলেছিলাম; কিন্তু বর্ণবাদ আর সহ্য করতে পারছি না।

জার্মানির হয়ে ৯২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ওজিল এই প্রজন্মের বিশ্বসেরা মিডফিল্ডারদের একজন। জার্মানির হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। ২০১০ বিশ্বকাপে দল সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও ওজিল নজর কেড়েছেন বিশ্ববাসীর। ২০১৪ শিরোপাজয়ী জার্মান দলের সেরা তারকাদের একজন ছিলেন ওজিল। এবারের বিশ্বকাপটা অবশ্য ভালো যায়নি পুরো জার্মানি দলের, প্রথম রাউন্ড থেকেই তারা বিদায় নেয়।

তুরস্কে জন্ম নেয়া ওজিল অনেকদিন থেকেই জার্মানিতে বর্ণবাদের শিকার হয়ে আসছেন। সাধারণ দর্শক-সমর্থক থেকে শুরু করে দেশের রাজনীতিবীদ এমনকি ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারাও তার সাথে বিদ্বেষমূলক আচরণ করেছেন। তাই এই অন্যায় আচরণ সহ্য করতে পারেননি তুর্কি বংশোদ্ভূত মুসলিম এই ফুটবলার। জার্মানির সাথে তুরস্কের কুটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ অনেক দিন থেকেই; এরদোগনের রাজনৈতিক উত্থান আর তুরস্কের শক্তিশালী রাষ্ট্র হয়ে ওঠা জার্মানরা মেনে নিতে পারছে না কোনভাবেই। আর সেই মানসিকতা থেকেই জার্মানির তুর্কি বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের সাথে বর্ণবাদী আচরণ করে আসছে জার্মান ফুটবল ফেডারেশন। বিশ্বকাপের আগে এরদোগানের সাথে দেখা করার কারণে ওজিল ও আরেক ফুটবলার গুনদোয়ানের ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে জার্মানিতে। অথচ ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক লোথার ম্যাথাউস রাশিয়ায় পুতিনের সাথে সাক্ষৎ করলেও সেটি নিয়ে কোন কথা হচ্ছে না।

আল জাজিরা জানিয়েছে, শুধু জার্মানি নয় পুরো ইউরোপ জুড়েই বিদেশী বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের সাথে এমন আচরণ করা হচ্ছে। বেলজিয়ামের স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকু বিশ্বকাপের সময় প্লেয়ার্স ট্রিবিউনে লেখা এক নিবন্ধে বলেছেন, ‘যখন সবকিছু ভালোভাবে হয়, পত্রিকার পাতায় আমার সম্পর্কে লেখা হয় বেলজিয়ান স্ট্রাইকার লুকাকু। আর যখন দল খারাপ করে আমি হয়ে যাই কঙ্গোর বংশোদ্ভূত স্ট্রাইকার লুকাকু’।

দীর্ঘ ওই নিবন্ধে ইউরোপে খেলতে গিয়ে বর্ণবাদের শিকার হওয়ার আরো কিছু ঘট্না তুলে ধরেছেন রোমেলু লুকাকু। ফ্রান্স ও রিয়াল মাদ্রিদের স্ট্রাইকার করিম বেনজেমাও শিকার হয়েছেন এ ধরণের আচরণ। ২০১১ সালে তিনি বলেছিলেন, জাতীয় দলের হয়ে গোল করলে বলা হয় আমি একজন ফরাসি আর না পারলে তাদের কাছে আমি হয়ে যাই একজন আরব’।

মেসুত ওজিলও বলেছেন, জাতীয় দলের হয়ে যখন একের পর এক জয় পেয়েছি, তাদের কাছে আমি ছিলাম একজন জার্মান; কিন্তু দল হারলেই হয়ে যাই অভিবাসী। শুধু আমি একা নই, আরো বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় ফুটবলার এই ঘটনার শিকার হয়েছন। বিশ্বকাপে দল বাদ পরার পর থেকেই জার্মানির সংবাদ মাধ্যম আমার তুর্কি শেকড় নিয়ে এমন সমালোচনা করেছে, যেন আমার ওই পরিচয়ের কারণেই দল প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছে।

আর্ন্তজাতিক ফুটবলের বাইরে ক্লাব ফুটবরে হরহামেশাই দেখা যায় কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলারদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের বর্ণবাদী আচরণ। 

কয়েকদিন আগে রাশিয়ার ঘরোয়া ফুটবলে ঘটেছে ন্যাক্কারজনক একটি ঘটনা। রাশিয়ার তৃতীয় স্তরের ক্লাব টর্পেডো মস্কোর একাডেমিতে খেলতেন কঙ্গোলিজ বংশোদ্ভূত ডিফেন্ডার ইয়োবামা। মাঝে লোকোমোটিভ-কাজানকা মস্কোতে ক্যারিয়ার গড়ে আবার আগের ক্লাবে ফিরছিলেন ১৯ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়। কঙ্গোলিজ বংশোদ্ভূত হলেও তিনি এখন রাশিয়ার নাগরিক। এই ডিফেন্ডারকে দলে ফেরানোর খবর গত ১৪ তারিখ ঘটা করে জানিয়েছিল টর্পেডো। কিন্তু নতুন এই খেলোয়াড়কে দলে নেওয়ায় প্রতিবাদ মিছিলে নেমেছিল ক্লাবের সমর্থকেরা! ১৭ তারিখ নতুন করে খবর আসে ইয়োবামাকে দলে টানার চিন্তা বাদ দিয়েছে টর্পেডো। সে সময় অর্থের কারণ দেখানো হলেও জানা গেছে, কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার কারনেই তাকে আবার বাদ দেয়া হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement