০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনায় শেখ হাসিনা

আমাদের বাড়িতে যারা খাওয়া-দাওয়া করেছে তারাই বঙ্গবন্ধুকে খুন করে

শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রদর্শনী ঘুরে দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ও শেখ রেহানা
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বক্তৃতা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : পিআইডি -

এদেশীয় দালালরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে হারের প্রতিশোধ নিয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্য যারা আমাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া করেছে, মা যাদের রান্না করে খাওয়াতেন, সেই খুনি মোশতাকসহ তাদের দোসর জিয়াউর রহমানই বঙ্গবন্ধু হত্যার মদদদাতা। যে সাথে না থাকলে কখনোই এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করল। হত্যার সাথে সব নাম-নিশানাসহ মুছে দিলো। ভাষা আন্দোলন থেকে তাকে মুছে দিলো, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকেও মুছে দিলো। কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। আজকে তা প্রমাণিত সত্য।’
গতকাল শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভা থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাশাপাশি বাংলাদেশের একটা মানুষও যেন গৃহহারা বা গৃহহীন না থাকে, সেজন্য প্রতিটি গ্রামে খোঁজ নিয়ে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘরবাড়ি করে দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে স্বাধীন জাতি। আর সবচেয়ে সৌভাগ্যের বিষয়, আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করছি। যিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। একটা অস্তিত্ব দিয়ে গেছেন। আমাদের ঠিকানা দিয়ে গেছেন। আমাদের আত্মমর্যাদা দিয়ে গেছেন। আর দীর্ঘ এক দশক ক্ষমতায় থাকার ফলে আজকে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। যেখানে এক সময় সবাই অবহেলার চোখে দেখত। বাংলাদেশ শুনলেই বলত দুর্ভিক্ষের দেশ, জলোচ্ছ্বাসের দেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ, দারিদ্র্যের দেশ। আল্লাহর রহমতে আর কেউ বলতে পারবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের জন্য রক্ত দিয়ে যারা রক্তের অক্ষরে আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছিল, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। লাখো শহীদের সেই আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায় না, বৃথা যেতে দেবো নাÑ এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়; আমরা প্রযুক্তিগত শিক্ষাকেও গুরুত্ব দিয়েছি। সারা দেশে আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার ও ইন্টারনেট সার্ভিস দেয়া থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন সব কিছু ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছি। আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন একটা জাতি হিসেবে বাঙালি জাতিকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার সাথে প্রযুক্তিগত জ্ঞান নিয়ে সারা বিশ্বে একটা সম্মানিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলে ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন।’
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ভূমিকা ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি যখন ছাত্ররা মিছিল করে, সেই সময় পুলিশ গুলি চালায়। এই গুলিতেই আমাদের শহীদরা রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার কথা রক্তের অক্ষরে লিখে যান।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাষার অধিকার এটা মানুষের অধিকার। আর এই উপমহাদেশে বাংলাদেশ হচ্ছে একটি মাত্র দেশ, যেটা একটা ভাষাভিক্তিক রাষ্ট্র। ইউরোপীয় অনেকগুলো রাষ্ট্র আছে ভাষাভিত্তিক কিন্তু আমাদের দেশ এই উপমহাদেশে এটাই হচ্ছে সর্বপ্রথম ভাষাভিত্তিক একটি রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কারণ ১৯৪৮ সাল থেকে তিনি যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, সেই সংগ্রামে তার লক্ষ্যই ছিল এই ভূখণ্ডকে স্বাধীন করতে হবে। পাকিস্তানিদের সাথে আর নয়। তবে তিনি যেটা করেছিলেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে তিনি প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।’
স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত হয়েও পাকিস্তানিরা তাদের এই আত্মসমর্পণ ভুলে যায়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারাও পরাজয়ের প্রতিশোধ নিলো। ওই পাকিস্তানি সেনা শাসকরা তো বটেই, আমাদের দেশের যারা কিছু দালাল। যারা এই ভূখণ্ড থেকে চিরদিন ওই পাকিস্তানিদের পদলেহন করেছে, তোষামোদি করেছে, খোষামোদি করেছে, চাটুকারের দল ছিল। তাদের দাসত্ব মেনে নিয়ে চলত। তারা ভুলতে পারেনি ওই পাকিস্তানি প্রভুদের। পাকিস্তানি প্রভুদের দাসত্ব করাই তাদের কাছে ভালো লাগত, বরং স্বাধীন জাতি হিসেবে পরিচয় দেয়ার থেকে। যে কারণে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যখন সারা দেশে গণহত্যা চালায়, এরা তাদের দোসর ছিল।’
বঙ্গবন্ধু-কন্যা আরো বলেন, ‘তাদের ধারণা ছিল, এভাবে করলেই বুঝি বাঙালিকে দাবানো যাবে। কিন্তু ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু যে কথা বলেছিলেনÑ কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি। তিনি এ দেশকে স্বাধীন করেন।’
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বারবার তারা ভোট দিয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। সবথেকে বড় পাওয়া। আজকে ২০২০ সাল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করতে যাচ্ছি।’
চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদযাপনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘২১টা বছর (১৯৭৫-৯৬ পর্যন্ত) জাতির পিতাকে ইতিহাস থেকে সম্পূর্ণভাবে নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। পরবর্তীকালে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি যখন আবার ক্ষমতায় তখনো আবার সেই নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সত্যকে কেউ কখনো মুছে ফেলতে পারে না।’
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেনÑ দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ডেনভারের অর্থনীতির শিক্ষক অধ্যাপক হায়দার আলী খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিনা জামান কবিতা, ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও দক্ষিণের সভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফী এবং ভাষাশহীদদের স্মরণে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি তারিক সুজাত। আলোচনা সভা যৌথভাবে পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রদর্শনী ঘুরে দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ও শেখ রেহানা : শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় ‘লাইটিং দ্য ফায়ার অব ফ্রিডম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শিরোনামে আয়োজিত প্রদর্শনী ঘুরে দেখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নিজের বক্তব্য শেষে এই প্রদর্শনী ঘুরে দেখার সময় তাদের সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
প্রদর্শনীতে এসে বিভিন্ন চিত্রকর্ম ও আলোকচিত্র দেখার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ। এ সময় চিত্রকর্মগুলো নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করার পর তৎকালীন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রদর্শনীতে দেখে সরাসরি আন্দোলনে অংশ নেয়ার স্মৃতিচারণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানান, তাদের আন্দোলনে অংশ নেয়ার ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হলে কয়েক দিন বাসা থেকে বের হতে দিতেন না মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব।
এ সময় প্রদর্শনীতে দেখানো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা। একে অপরকে জরিয়ে ধরে সম্পূর্ণ ভাষণ শোনেন। সবশেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত অন্যান্য শিল্পকর্ম ঘুরে দেখেন তারা।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে ‘লাইটিং দ্য ফায়ার অব ফ্রিডম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ প্রদর্শনীর কার্যক্রম।
শিল্পকলা একাডেমিতে ৭ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি সিসমিক মুভমেন্ট নিয়ে আয়োজন করা হয় ঢাকা আর্ট সামিট। মুজিববর্ষ পালনের অংশ হিসেবে এই আয়োজনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রাখা হয় বিশেষ প্রদর্শনী ‘লাইটিং দ্য ফায়ার অব ফ্রিডম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’। ঢাকা আর্ট সামিট শেষ হয়ে গেলেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আয়োজিত এই প্রদর্শনী সাধারণ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে তথ্যগত সহয়তা প্রদান করেছে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)।


আরো সংবাদ



premium cement
সিরিজে এগিয়ে যাবার লক্ষ্যে আজ মাঠে নামছে বাংলাদেশ গ্রিড লাইনের ত্রুটিতে সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ভুক্তভোগী নারী ও তার পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের হয়রানির প্রতিবাদ বাড্ডায় নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার কথিত স্বামী পলাতক গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করবে খতমে নবুওয়ত ঝিনাইদহ-১ আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নায়েব আলী জাতীয় গ্রিডে ত্রু‌টি, সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাবিতে নিয়মিত ২০ আসন বরাদ্দ রেকর্ড গড়ে সাদিক খান আবারো লন্ডনের মেয়র আগামী ২ মাসের মধ্যে ভাঙ্গা-খুলনা-যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালু হবে : জিল্লুল হাকিম ফতুল্লায় ব্যবসায়ী অপহরণ, গ্রেফতার ৭

সকল