০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সুরক্ষা ও উন্নয়নে কাজ করতে আনসার বাহিনীর প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুরে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাতীয় সমাবেশে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করছেন : বাসস -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনসার বাহিনীকে সততা, আন্তরিকতা এবং সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জনগণের সুরক্ষা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই আপনারা (আনসার বাহিনী) দেশের সর্ববৃহৎ বাহিনী হিসেবে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততা, আন্তরিকতা ও সাহসিকতার সাথে পালন করে জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে সমর্থ হবেন।’ তিনি গতকাল সকালে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমি, সফিপুরে আনসার ও ভিডিপির ৪০তম জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী একই সাথে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে আনসার বাহিনীর সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানান। কেননা, তার সরকার এ ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সবার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখা এবং এ পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে আনসার সদস্যরাও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন এবং বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ তাকে অভ্যর্থনা জানান। প্রধানমন্ত্রীকে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ থেকে অভিবাদন জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী একটি সুসজ্জিত খোলা জিপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন।
দৃষ্টান্তমূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর আটটি ক্যাটাগরিতে ১৪৩ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্যের মধ্যে ‘সেবা’ ও ‘সাহসিকতা’ পদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে মরহুম আনসার সদস্য গোলাম মোস্তফার সহধর্মিণীর হাতে তার (গোলাম মোস্তফা) মরণোত্তর পদক তুলে দেন। পরে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অন্ষ্ঠুান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী এবং আনসার সদস্যদের দরবারেও যোগ দেন। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে এই বাহিনীকে সম্পৃক্ত করতে তার সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আনসার ও ভিডিপি বাহিনীকে উন্নয়ন কাজে আরো সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। আপনারা আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাবেন, আমি সে আশাই করছি।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনসহ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও মৌলবাদ নির্মূলে আনসার বাহিনী বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।’
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীকে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ ও জনসম্পৃক্ত একটি বৃহৎ শৃঙ্খলাবাহিনী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ বাহিনীর কার্যক্রম তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬১ লাখ। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি গ্রামে বা মহল্লায় এ বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। কাজেই সরকারের যেকোনো সচেতনতামূলক কার্যক্রম আনসার-ভিডিপির সদস্যদের মাধ্যমে খুব সহজেই তৃণমূলপর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার অঙ্গীভূত আনসার সদস্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধান করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অনন্য ভূমিকা পালন করছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আনসার বাহিনীকে ১৯৯৮ সালে সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় পতাকা প্রদান ছাড়াও ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়েছে।’
‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন’ প্রণয়ন করার কার্যক্রম সরকার হাতে নিয়েছে এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স ও আম্রকাননের নিরাপত্তার জন্য দু’টি আনসার ব্যাটালিয়ন গঠনের কার্যক্রম প্রায় চূড়ান্তপর্যায়ে রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। একটি গার্ড ব্যাটালিয়নসহ চারটি আনসার ব্যাটালিয়ন গঠন, ব্যাটালিয়নের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করে জনবল বৃদ্ধি, আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, ঝুঁকিভাতা বৃদ্ধিসহ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের ও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পাশাপাশি বিগত বছরে বাহিনীর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদবির ৯৬৬ জন আনসার সদস্য পদোন্নতি পেয়েছেন বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘এ বাহিনীর গর্বিত সদস্য ভাষাশহীদ আনসার কমান্ডার আব্দুল জব্বার ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য জীবন বিসর্জন দেন।’ ‘এ বাহিনীর এক হাজার ২২৯ বীর সদস্য ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারপ্রধানকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন’, বলেও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
চীনে করোনাভাইরাসে প্রাণহানিতে শোক : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের উহান শহর ও অন্যান্য স্থানে ‘করোনাভাইরাস’ সংক্রমণে প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করে আক্রান্তদের দুর্দশা লাঘবে যেকোনো ধরনের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই শোক প্রকাশ করেন। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনার সুযোগ্য নেতৃত্বে চীন সরকার সর্বোচ্চ দক্ষতা ও নিয়ন্ত্রণের সাথে পরিস্থিতির অবনতি মোকাবেলা করতে এবং থামাতে সক্ষম হবে। তিনি আরো বলেন, সঙ্কট নিরসনে একটি টাস্কফোর্স গঠন ও জরুরি হাসপাতাল স্থাপন সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সরকার আক্রান্তদের দুর্দশা লাঘবে যেকোনো ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এই ভাইরাসের সংক্রমণে মারা যাওয়া ও আক্রান্তদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের এই সঙ্কটজনক মুহূর্তে চীনে বসবাসরত প্রচুর বাংলাদেশী নাগরিককে সুরক্ষা দেয়ায় চীনের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য, চীনে মারাত্মক করোনাভাইরাস সংক্রমণে দেশব্যাপী এ পর্যন্ত অন্তত এক হাজার ৩৫৫ জন মারা গেছে এবং প্রায় ৬০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। হুবেইয়ের স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে ওই প্রদেশে নতুন করে আরো ১৪ হাজার ৮৪০ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement