৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দুই হাজারের হাতে ৪৬০ কোটি মানুষের অর্থ

অক্সফামের রিপোর্ট
-

আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা অক্সফাম বলেছে, মাত্র দুই হাজার মানুষের হাতেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বিশ্বের বেশির ভাগ অর্থ। গতকাল সোমবার প্রকাশিত সংস্থাটির অক্সফামের এক পর্যবেক্ষণে এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ২,১৫৩ জন মানুষ দরিদ্রতম ৪৬০ কোটি মানুষের চেয়ে বেশি অর্থ নিয়ন্ত্রণ করেছে।
অক্সফাম বলছে, মজুরিবিহীন ও কম মজুরি পাওয়া নারী ও মেয়েদের শ্রম প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রযুক্তি শিল্পগুলোর চেয়ে তিনগুণ বেশি মূল্য সংযোজন করছে। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতাদের বার্ষিক বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম সম্মেলনের আগে সোমবার এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অক্সফাম। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী নারীরা বিনা বেতনে বা স্বীকৃতি ছাড়াই প্রতিদিন মোট এক হাজার ২৫০ কোটি ঘণ্টা কাজ করছে।
‘টাইম টু কেয়ার’ শিরোনামের ওই রিপোর্টে অক্সফাম জানায়, তাদের হিসাবে নারীদের মজুরিহীন সেবাকাজ প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে অন্তত ১০ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার মূল্য যোগ করছে, এটি প্রযুক্তি শিল্পের যোগ করা মূলের তিনগুণেরও বেশি।
অক্সফাম ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী আমিতাভ বেহার রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা যে অর্থনীতিতে আছি, নারীদের মজুরিহীন সেবাই তার অলক্ষ্যে থাকা ইঞ্জিন। এই জায়গাটায় আমাদের নজর দেয়া উচিত। এটির পরিবর্তন হওয়া দরকার।’
বিশ্ব অর্থনীতির অসাম্যের মাত্রাকে সামনে আনার জন্য বুচু দেবী নামে ভারতীয় এক নারীর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন বেহার। তিনি জানান, বুচু প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা কাজ করেন। তিনি হেঁটে তিন কিলোমিটার দূর গিয়ে সেখান থেকে পানি নিয়ে আসেন, তারপর রান্না করেন, ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করেন এবং নি¤œমজুরির একটি কাজ করেন। ‘অপর দিকে আপনি দেখেন, দাভোসে জমায়েত হওয়া বিলিওনিয়াররা তাদের ব্যক্তিগত বিমান, ব্যক্তিগত জেট ও বিলাসবহুল জীবনধারা নিয়ে আছেন।’
আমিতাভ বেহার রয়টার্সকে বলেন, ‘এই বুচু দেবী শুধু একজনই নন। ভারতে প্রায় প্রতিদিন এ ধরনের নারীদের সাথে আমার দেখা হয়, আর বিশ্বজুড়েই এই একই গল্প। আমাদের এটি পরিবর্তন করা দরকার আর নিশ্চিতভাবে এই বিলিওনিয়ারের বাড়বাড়ন্তেরও অবসান ঘটানো দরকার।’
এর প্রতিকারের জন্য ধনীদের কর দেয়া সরকারগুলোর নিশ্চিত করা উচিত বলে মনে করেন বেহার। ওই করের টাকা পরিষ্কার পানি, স্বাস্থ্যসেবা ও উন্নতমানের স্কুলের মতো সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখুন, ৩০টিরও বেশি দেশে প্রতিবাদ হচ্ছে। লোকজন রাস্তায় নেমে এসেছে। কী বলছে তারা? তারা এই বৈষম্যকে মেনে নেবে না, তারা এ ধরনের পরিস্থিতিতে আর জীবনযাপন করতে চায় না।’
ভালোর চেয়ে খারাপই করছে পুঁজিবাদ : তা ছাড়া বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই মনে করেন বর্তমান অবস্থায় পুঁজিবাদ যতটুকু ভালো করছে তার চেয়ে খারাপই করছে বেশি। ডাভোসে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকের আগেই এ বিষয়ে একটি বৈশ্বিক জরিপের তথ্য সামনে এলো।
এ বছরই প্রথমবারের মতো পুঁজিবাদ সম্পর্কে এ ধরনের তথ্য তুলে ধরল এডেলম্যান ট্রাস্ট ব্যারোমিটার। গত দুই দশক ধরে কয়েক হাজার লোকের কাছ থেকে জনমত গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। পুঁজিবাদকে কিভাবে দেখা হচ্ছে সে বিষয়টি বোঝার জন্যই এই জরিপ হয়েছে। ২০০০ সালে এই জরিপ শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ সংস্থা এডেলম্যানের ওই গবেষণার প্রধান ডেভিড বেরসফ বলেছেন, লোকজন তাদের জায়গা থেকে প্রশ্ন করছে যে আমাদের এখন কী আছে এবং আমরা যেখানে বাস করছি, এই পৃথিবীতে তারা একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ আশা করে।
বিশ্বের ২৮টি পশ্চিমা উদার গণতান্ত্রিক যেমন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের মতো ২৮টি দেশের ৩৪ হাজার মানুষ এই জরিপে অংশ নিয়েছে। এদের মধ্যে ৫৬ ভাগই মনে করে, আজকের বিশ্বে পুঁজিবাদের অস্তিত্ব ভালোর চেয়ে খারাপই ডেকে আনছে। তবে এ ক্ষেত্রে ভিন্ন মতাদর্শ রয়েছে চীন এবং রাশিয়ার। পুঁজিবাদে আস্থা নেই এমন দেশের শীর্ষে রয়েছে থাইল্যান্ড এবং ভারত। দেশ দু’টিতে যথাক্রমে ৭৫ শতাংশ এবং ৭৪ শতাংশ মানুষের পুঁজিবাদের নীতিতে কোনো আস্থা নেই।
অপর দিকে ফ্রান্সের ৬৯ ভাগ মানুষের পুঁজিবাদে অনাস্থা রয়েছে। তবে পুঁজিবাদে ভালোর চেয়ে খারাপ হচ্ছে এই দাবি মানতে নারাজ অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং এবং জাপান। ওই জরিপের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এশিয়ার লোকজন তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়ে বেশি আশাবাদী।


আরো সংবাদ



premium cement