২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নেতারা পরিস্থিতি বুঝতে পারলে ১৫ আগস্ট হতো না : শেখ হাসিনা

-

রাজনৈতিক নেতারা সে সময়ে পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারলে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের আঘাত আসতো না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক রাজনৈতিক নেতা তখনকার সেই অবস্থা বুঝতেই পারেননি। তিনি দেশ স্বাধীনপূর্ব পরিস্থিতির উল্লেখ করে বলেন, যাদের শোষণ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ১৯৭১ মহান বিজয় অর্জন করা হয়েছিল তাদের দোসররা এত সহজে ছাড়বে না, তখনকার দিনে আমাদের অনেক নেতার মধ্যেই এই উপলব্ধিটা আসেনি। বরং তারা এটা হয় নাই, ওটা হয় নাই এ ধরনের নানা প্রশ্ন কথকতা ও লেখালেখি শুরু করেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাথে জিয়াউর রহমানের যোগাযোগ ছিল। তারা জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে ইশারা পেয়েছিল। খুনিদের এমন মনোভাব ছিল যে, তাদের কিছুই হবে না।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনামলকে অবৈধ হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এলেন জিয়াউর রহমান। বন্দুকের নলের জোরে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সায়েমকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতা দখল করেন তিনি। তিনি হ্যাঁ/না ভোটের আয়োজন করে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। এরপর তিনি রাজনৈতিক দল গঠন করলেন। জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামল ছিল অবৈধ। হাইকোর্ট রায় দিয়ে তাদের শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। সুতরাং, তাদের রাষ্ট্রপতি বলা যায় না। তারা হলেন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী।
বঙ্গবন্ধুর দেশ শাসনকালে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে বলেন, সেই সময় নানা চক্রান্ত চলেছে। পাটের গুদামে আগুন, থানা লুট করা, আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সাত সংসদ সদস্যকে হত্যার ঘটনা ঘটে। উপরন্তু স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, আলবদর বাহিনীর অনেকেই দেশ ছেড়ে ভেগে যায়। অনেকেই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছিল। আন্ডারগ্রাউন্ডে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তারা একের পর এক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে শুরু করে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশ, অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু একটা দেশ, সেই দেশটাকে গড়ে তোলা যে অত্যন্ত দুরূহ কাজ। এটা যে একদিনেই, একটা কথায় গড়ে ওঠে না- এই উপলব্ধিটা যদি সবার মধ্যে সে সময়ে থাকত তাহলে হয়তো ১৫ আগস্টের মতো এত বড় একটা আঘাত এ দেশের ওপর আসত না। কিন্তু তখন কেউ সেই উপলব্ধিটা করেনি, এটা উপলব্ধি করতে অনেক সময় লেগেছিল তাদের। কেন তারা উপলব্ধি করতে পারেননি, আমি জানি না।
শেখ হাসিনা বলেন, বাহাত্তর সালের পর থেকে পঁচাত্তর সাল পর্যন্ত অনেক লেখালেখি আছে। কেউ যদি একবার চোখ বুলান, পড়েন তখন দেখবেন কত ভুল সিদ্ধান্ত এবং ভুল কথা তারা বলে গিয়েছিলেন আর সেই খেসারতটা জাতিকে দিতে হলো পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল সেই আলবদর, রাজাকার, আলশামস এবং পাকিস্তানি বাহিনীর দালাল-দোসর তাদের হাতে চলে গেল ক্ষমতা। তাদের হাতে যে ক্ষমতা চলে গেছে সেটাও বোধহয় অনেকে উপলব্ধি করতে পারেননি।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এক বছর বাংলাদেশে এক ফোঁটা ফসল উৎপাদন হয়নি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষের জীবন-জীবিকার কোনো পথ ছিল না। সব শিল্প-কলকারখানা সব বন্ধ ছিল। একটা দেশ সম্পূর্ণভাবে অচল হয়ে পড়ে। নদীর পানি লাল হয়ে গিয়েছিল বাঙালির রক্তে। সেই ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে যখন ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা ফিরে এসে দায়িত্বভার নিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এই সাড়ে তিন বছরের মধ্যে এই ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে যেখানে এক ফোঁটা খাদ্য গোলায় ছিল না, এক টাকা রিজার্ভ মানি নেই। কারেন্সি নোট নেই, রাস্তা ঘাট, রেল, স্কুল-কলেজ সবই ধ্বংসপ্রাপ্ত। আর লাখো শহীদের কান্না, স্বজনদের পরিবারগুলো আর নির্যাতিত মা-বোন, আহত মুক্তিযোদ্ধা, আহত সাধারণ মানুষ তাদের পুনর্বাসন। তিন কোটি গৃহহারা মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, শরণার্থীদের পুনর্বাসন। বঙ্গবন্ধু একে একে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছিলেন।
১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমরা মনে করি এটা আমাদের দুর্ভাগ্য ছিল। দু’টি বাচ্চাকে নিয়ে আর রেহানাকে সাথে নিয়ে স্বামীর কর্মস্থলে থাকায় আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেই বাঁচাটা বাঁচা নয়, সেই বাঁচার যন্ত্রণাটা মৃত্যু থেকে অনেক বেশি। ছয় বছর দেশে আসতে পারিনি। অন্য দেশে রিফিউজি হয়ে আশ্রয় নিয়ে থাকতে হয়েছিল।
দলের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাকে প্রথম যখন দলের প্রধান হিসেবে তারা নির্বাচিত করল আমি তখন গ্রহণ করতে পারিনি। কাজ করেছি, থেমে থাকিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান আজকে আমাদের অনেক পেছনে পড়ে আছে। এই স্বাধীনতাই যে আমাদের এই সুযোগ এনে দিয়েছে। আমরা যদি স্বাধীন না হতাম এটা আমরা করতে পারতাম না।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমীন। আলোচনায় আরো অংশ নেনÑ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, আব্দুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, মো: আব্দুর রহমান ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।

 


আরো সংবাদ



premium cement