২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পশুর হাটে চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা

-

কোরবানির পশুর হাটে চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে সরব প্রতিটি হাটই। বিক্রিও বেড়েছে। দাম গতবারের তুলনায় বেশি বলে মনে করছেন ক্রেতারা। তবে বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতারা যে দাম বলছেন তাতে পুঁজি উঠছে না। তার পরও বেচাকেনা চলছে। সড়কগুলোতে এখন গরু কিনে নিয়ে যাওয়ার চিত্র সর্বত্র। তিন-চারজন মিলে দড়ি ধরে গরু নিয়ে যাচ্ছেন। আর পাশ থেকে কেউ হাঁক ডেকে দাম শুনছেন। ভাই দাম কত? তবে বিক্রেতারা এখনো তাদের সব পশু ছাড়ছে না। কিছু পশু বিক্রি করে দিচ্ছেন। শেষ দিনের লাভের আশায় কিছু পশু রেখেও দিচ্ছেন। অবশ্য হাট ঘুরে দেখা গেছে প্রচুর দেশী গরু রয়েছে। আজ শেষ দিনে ক্রেতার উপস্থিতির ওপর নির্ভর করবে দাম ওঠানামা।
গতকাল রাজধানীর কমলাপুর, বছিলা, হাজারীবাগ, শাহজাহানপুর, মেরাদিয়া ও গাবতলী হাট ঘুরে দেখা গেছে, পশু বিক্রি বেড়েছে। সাধ্য ও সাধ্যের সমন্বয় করে পশু কেনার চেষ্টা করছেন ক্রেতারা। বিক্রি জমে ওঠায় বিক্রেতাদের মুখেও হাসি ফুটেছে। তবে তারা প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
কমলাপুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে প্রচুর গরু রয়েছে। ক্রেতাদেরও ভিড় বেড়েছে। তবে দাম বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। তবে বিক্রেতারা বলছেন ক্রেতারা অনেক দাম কম বলছেন। এ দামে পুঁজিও উঠবে না। মেহেরপুরের ব্যবসায়ী চাঁদ আলি নয়া দিগন্তকে বলেন, আটজন মিলে ১৫টি গরু এনেছি। এর মধ্যে মাত্র চারটি চার লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু চারটিতেই ক্ষতি হয়েছে। এখন মাত্র দুই দিন আছে। কিছু না বিক্রি করেও উপায় নেই। বাসাবো থেকে এ হাটে আসা হামিদ হোসেন বলেন, একটি গরুর দাম চাচ্ছে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। এ গরু এক লাখ ৩০ হাজার টাকা হলেও কেনা যেত। কিন্তু বিক্রেতা কোনো সাড়াই দিচ্ছে না। এ হাটে ৩০ হাজার টাকায়ও গরু মিলছে। আবার দেড়-দুই লাখ থেকে ৮-১০ লাখ টাকার গরুও রয়েছে। তবে মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। এ ধরনের গরু ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
বছিলা হাট ঘুরে দেখা গেছে, পুলিশের জন্য বরাদ্দ খালি জায়গা, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দকৃত খালি জায়গা এবং বছিলা সিটির পরিত্যক্ত জমি ও সড়কের দু’পাশে শত শত গরুর সারি। ক্রেতাদের পছন্দের পশু কিনে ট্রাকে বা দড়ি ধরে দৌড়ে দৌড়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
বছিলার ওয়াশপুরের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম হাট থেকে একটি ষাঁড় কিনেছেন ৯০ হাজার টাকা দিয়ে। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বলেন, গত বছরের চেয়ে গরুর দাম কিছুটা বেশি বলছে। তবে এখন দাম ছাড়া শুরু করেছেন বিক্রেতারা। হাটে প্রচুর দেশি গরু রয়েছে। আমাদের বাজেটে পছন্দের গরু কিনতে পারায় আমরা খুশি।
হাজারীবাগ জিগাতলার হাট প্রসারিত হয়েছে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন হাটে একটি গরু বিক্রি হতে দেখা যায়। পাবনার বেড়া থেকে গরু নিয়ে আসা সিরাজুল ইসলাম গরুর দাম বলেন, ৭৫ হাজার টাকা। ক্রেতা সিকদার মেডিক্যাল এলাকার বাসিন্দা মো: ফারুক হোসেন। ১০-১৫ মিনিট দামদরের পর ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি হলো। এ বিষয়ে বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভাই, হাটে এত গরু। কোনো রকম খরচ উঠিয়ে বিক্রি করে দিলাম।
দুই দিন থেকে শাহজাহানপুর হাট ঘুরে পশুর দরদাম যাচাই করে পশু কিনেছেন দক্ষিণ শাহজাহানপুরের বাসিন্দা প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ভাই শুক্রবার রাতে যে গরু এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখেছি, সেই গরু আজ (শনিবার) কিনলাম ৯৫ হাজার টাকা। রোববার গরুর দাম আরো কম হতে পারে মনে হচ্ছে।
উত্তর বাড্ডার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন গতকাল শনিবার মেরাদিয়া পশুহাট থেকে একটি ষাঁড় কিনেছেন ৭০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, আশপাশের আফতাবনগরসহ বেশ কয়েকটি হাট ঘুরে মনে হয়েছে মেরাদিয়া হাটে গরুর দাম কম। গত বছর এমন আকৃতির গরু কিনেছি ৮০ হাজার টাকা।
দেশের সর্ববৃহৎ পশুর হাট গাবতলীতেও বিক্রি জমে উঠেছে। হাটভর্তি পশু রয়েছে, ক্রেতার উপস্থিতিও বেশ। সময় গড়ানোর সাথে সাথে এটা আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। গাবতলী হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সানোয়ার হোসেন জানান, বিক্রি জমে উঠেছে। শুক্রবার থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত প্রচুর গরু বিক্রি হয়েছে। ক্রেতার উপস্থিতি বাড়ছে, আশা করি রোববার দুপুরের মধ্যে বেশির ভাগ গরু বিক্রি হয়ে যাবে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্ধারিত হাটের বাইরেও মহানগরীর পাড়া মহল্লার খালি জায়গায় গরু উঠিয়ে বিক্রি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এ কারণে অনেকে হাটের ঝামেলা এড়াতে এসব অবৈধ হাট থেকেও গরু কিনছেন।
মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকার বাসিন্দা মকছেদুল কামাল বলেন, এবার কোরবানির জন্য পশু কিনতে হাটের ঝামেলা এড়াতে টাউন হল এবং আশপাশের এলাকা থেকে গরু কিনতে চাচ্ছি। এরই মধ্যে বেশ কিছু স্পটও ঘুরে দেখেছি, এসব জায়গায়ও ভালো মানের পশু পাওয়া যাচ্ছে।
চট্টগ্রামে কোরবানির হাটে পশু বিক্রির ধুম
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, এত দিন কোরবানিদাতারা ব্যস্ত ছিলেন পশু দেখাদেখিতে। তা ছাড়া বিক্রেতারা দাম হাঁকাচ্ছিলেনও বেশ চড়াভাবে। ফলে তেমন বিকিকিনি হয়নি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। তবে আস্তে আস্তে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে শুক্রবার থেকে। এক দিকে বাজারে কোরবানির পশুর সরবরাহ বৃদ্ধি, অন্য দিকে বিক্রেতারাও পশুর দাম হাঁকানোর ক্ষেত্রে অনমনীয় অবস্থান থেকে সরে আসায় বেড়েছে বিক্রি। গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন পশুর হাটে ব্যাপকহারে পশু বিক্রি হয়েছে। তবে অনেকেই আরো দাম কমার জন্য আজ শেষ দিনে কেনার অপেক্ষায় রয়েছেন।
ব্যাপারীরা জানিয়েছেন, শুরুতে বিক্রি তেমন ভালো না হলেও শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় ক্রেতা সমাগম বেশ ভালো। এ বছর বড় গরুর চেয়ে ছোট গরুর চাহিদা বেশি বলেও জানিয়েছেন ব্যাপারীরা। নগরীর বিভিন্ন পশুরহাট ঘুরে দেখা গেছে, এবার হাটে আনা বেশির ভাগই নিজেদের খামারের গরু। কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারীরা। এ ছাড়া কুষ্টিয়া, বগুড়া, কুমিল্লা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও গরু আনা হয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আড়াই থেকে সাড়ে তিন মণ ওজনের দেশী গরু ৭০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার, চার মণ থেকে পাঁচ মণ ওজনের গরু ৮০ থেকে ৯০ হাজার, পাঁচ থেকে আট মণ ওজনের গরু এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছাগলের দাম অস্বাভাবিক বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। ১০-১২ কেজি ওজনের একটি ছাগলের দাম হাঁকা হচ্ছে ১৮-২০ হাজার টাকা!
নগরীর চন্দরপুরা থেকে বিবিরহাট গরুর বাজারে কোরবানির পশু কিনতে আসা সেলিম শেখ জানিয়েছেন, বাজার ঘুরে যে কয়েকটি পছন্দ হয়েছে, দাম শুনেই চোখ কপালে উঠার মতো অবস্থা। দাম অনেক বেশি।
চকবাজার এলাকার পশু ক্রেতা খোরশেদুল আলম এ প্রতিবেদককে বলেন, শনিবার বিকেলে হাটে এসেছিলাম। গতকাল যেটি ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দাম চেয়েছিল সেটি আজকে এক লাখ টাকা বলছে। দাম কিছুটা কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, রোববারে তা আরো কমবে। তাই এখনো অপেক্ষা করছি।
এবার কোরবানি উপলক্ষে মহানগরীর ছয়টিসহ জেলার ৬৩টি স্থায়ী এবং ১৪৬টি অস্থায়ী গরুর বাজার বসছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবার চট্টগ্রামে ৭ হাজার ৫৭টি খামারে ৬ লাখ ১০ হাজার ২১৯টি পশু রয়েছে। গত ৩১ জুলাইয়ের হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রামে বিক্রয়যোগ্য ৪ লাখ ১৪ হাজার ৩৮৭টি গরু, ৪২ হাজার ২৮৪টি মহিষ, ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৪৮টি ছাগল ও ভেড়া রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement