২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিশেষ নজরদারিতে শতকোটি টাকার ঋণখেলাপি

-

খেলাপি ঋণ আদায়ে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে শতকোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব অঙ্কের ঋণখেলাপিদের বিশেষ নজরদারিতে আনার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে এসব খেলাপির তথ্য আলাদা করে ত্রৈমাসিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে দিতে হবে। চলতি বছরে আলাদা কাগজে লিখে দিলেও আগামী বছর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সফটওয়্যারে দিতে হবে।
গতকাল এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে, শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে তফসিলি ব্যাংকগুলোর অপরাপর সব শ্রেণিকৃত ঋণসহ ১০০ কোটি টাকা এবং তদূর্ধ্ব স্থিতি বিশিষ্ট শ্রেণিকৃত ঋণ হিসাবগুলো নিবিড় তদারকি একান্ত আবশ্যক। তাই শ্রেণিকৃত ঋণ হিসাব তদারকির নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের একজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রধান করে একটি বিশেষ তদারকি সেল বা ‘স্পেশাল মনিটরিং সেল’ গঠন করতে হবে; যারা ১০০ কোটি টাকা বা তার বেশি শ্রেণিকৃত ঋণ হিসাব তদারকি করবে। তদারকি সেল ত্রৈমাসিক বিবরণীতে বর্ণিত শ্রেণিকৃত ঋণ হিসাব আদায় অগ্রগতিসহ যাবতীয় তথ্য নিজ নিজ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে জানাবে। এ ছাড়া ত্রৈমাসিক বিবরণী পরবর্তী মাসের শেষ কর্মদিবসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের টাস্কফোর্স সেলে দাখিল করবে।
এ বিবরণীতে প্রদর্শিত শ্রেণিকৃত ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ কিংবা অন্য কোনো কারণে নিয়মিত বলে গণ্য হলেও নিয়মিত হওয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী ৮টি (আট) ত্রৈমাসিক পর্যন্ত তা বিবরণীতে রাখতে হবে।
সার্কুলারে আরো বলা হয়, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ওই বিবরণীর যথাযথ পর্যালোচনা নিশ্চিত করবে। এ ক্ষেত্রে ঋণের বকেয়া আদায়ের নিমিত্তে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। পরিচালনা পর্ষদ নিয়মিতভাবে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে পর্যালোচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
আগামী অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০১৯ থেকে এপ্রিল-জুন, ২০২০ ত্রৈমাসিক পর্যন্ত ওই বিবরণীর হার্ড ও সফট (এক্সএল সিট) কপি দাখিল করতে হবে। আগামী এপ্রিল-জুন, ২০২০ ত্রৈমাসিক থেকে আলোচ্য বিবরণী বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে শ্রেণিকৃত ঋণ ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা ওই সময় পর্যন্ত ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এর বাইরে খেলাপি হওয়া ঋণ অবলোপন হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া খেলাপি থেকে বাঁচতে ঋণ পুনঃতফসিল ও আদালতের নির্দেশে খেলাপি দেখানো হয়নি আরো প্রায় লাখো কোটি টাকা। এসব মিলিয়ে প্রকৃত খেলাপির পরিমাণ দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে গত ১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এক শ’ কোটি টাকার বেশি ঋণ গ্রহীতাদের বিশেষ নজরদারির মধ্যে আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা যায়। ওই সিদ্ধান্তের আলোকেই গতকাল এই সার্কুলারটি জারি করে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ।
খেলাপি ঋণ নিয়ে নানামুখী আলোচনার মধ্যে গত ২২ জুন জাতীয় সংসদে শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিল পর্যন্ত ১৭৭টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটির নামে এক শ’ কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement