২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন সেতু ও সড়ক সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন : বাসস -

অবকাঠামো খাতে সরকারের নানা উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ইনশা আল্লাহ এগিয়ে নিয়ে যাবো। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এই উন্নয়নের গতিধারাটা অব্যাহত থাকুক সেটাই আমরা চাই।
গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের শুরুতে তিনি এ কথা বলেন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন এই প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করা হয়। এসব প্রকল্পকে দেশবাসীর জন্য ঈদ উপহার হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় আওয়ামী লীগকে একটি পরিবার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি তারা শুধু রাজনীতিই করি না, আমরা একটা পরিবার। একটা পরিবারের মতোই চলি। এভাবেই যেন এই সংগঠনটা এগিয়ে যেতে পারে।
কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গোমতী দ্বিতীয় সেতু ও মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দ্বিতীয় মেঘনা সেতু, সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) সড়ক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা ফ্লাইওভার, কালিয়াকৈর, দেওহাটা, মির্জাপুর ও ঘারিন্দা আন্ডারপাস এবং কড্ডা-১ সেতু ও বাইমাইল সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
পবিত্র রমজানের মোবারকবাদ এবং ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমি খুব আনন্দিত। আজকে বিভিন্ন সেতু , আন্ডারপাস-ওভারপাস, ফ্লাইওভার উদ্বোধন করছি। আমাদের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া আদায় করি। দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ সবাই তার জন্য দোয়া করেছেন।
ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সে ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করে যাচ্ছে এবং দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছে। আমি একটি কথা বলতে চাই, আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি তারা শুধু রাজনীতিই করি না, আমরা একটা পরিবার। আমি ছোট বেলা থেকে আমার বাবাকে দেখেছি, মাকে দেখেছি, প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে দেখেছি, আমরা একটা পরিবারের মতো। কাজেই যখনি কোনো সমস্যা হয়, সুখে-দুঃখে সবসময় আমরা সাথী হয়ে চলি। আমি সেটিই বলব, এভাবেই যেন এই সংগঠনটা এগিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় তিনি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছি। আমাদের দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা করা হয়। সেই হত্যার ফলে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীন জাতি হিসেবে যে অগ্রযাত্রা ছিল, একটা স্বাধীন জাতি হিসেবে যে মর্যাদা পাওয়ার কথা ছিল বা দেশটা যতটা উন্নত হওয়ার কথা ছিল, সেই উন্নতটা হতে পারেনি, এটাই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য।
শেখ হাসিনা বলেন, এরপর ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এর পরেই দেশের মানুষের জীবনে উন্নয়নের ছোঁয়া আমরা পৌঁছে দিতে পেরেছি। সরকারে আসার পর থেকে বঙ্গবন্ধু সেই আদর্শ মাথায় নিয়েই আমরা কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি। যার ফলে আজকে দেশের মানুষ তার সুফল পাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকায় মেট্রোরেল ফ্লাইওভারসহ নানা উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় ঢাকাবাসীকে এখন একটু কষ্ট পেতে হচ্ছে। একটু কষ্ট সহ্য করলে ভবিষ্যতে যাতায়াত আরো আরামদায়ক হবে।
রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে যাত্রী সাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু গাড়িচালককে দোষ দেবেন না। ট্রাফিক আইন মেনে চলবেন। গাড়িচালক ও পথচারী কেউই যদি ট্রাফিক আইন না মানে তাহলে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটবে। তিনি বলেন, মহাসড়কগুলোতে চালকের বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা নেই। আমরা অদূর ভবিষ্যতে এ ব্যবস্থা এবং খাওয়া-দাওয়াসহ যেকোনো গাড়িচালক যাতে বিশ্রাম নিতে পারে সে ব্যবস্থা করে দেবো।
উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব প্রকল্প বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অত্যন্ত উপযোগী। পাশাপাশি আমাদের যে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রটা তৈরি করেছি, সেখানেও একটা বিরাট অবদান রাখবে। বর্তমান বিশ্বটা একটা গ্লোবাল ভিলেজ। আর্থসামাজিক উন্নতি করতে হলে সবাইকে সাথে নিয়েই চলতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আমরা মনে করি এই কাজগুলো শুধু আমাদের জন্য নয়, আমাদের আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্যও একটা বিরাট অবদান রাখবে। এ সময় জাপান সরকার, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে উন্নয়ন সহযোগী সব সংস্থাকে সহযোগিতা করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের যোগাযোগ নির্বিঘœ করার জন্য সারা দেশে সড়ক, নৌ, রেল ও বিমান সচল করা হচ্ছে। সারা দেশেই সড়ক, রেল, নৌ ও বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ চলছে। যেভাবে সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন হচ্ছে তাতে ইনশা আল্লাহ প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষ কম সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাপানের রাষ্ট্রদূত এইচ ই মি হিরোয়াসু ইজুমি। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো: নজিবুর রহমান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, মুক্তিযুদ্ধবিষষকমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পঞ্চগড়-ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন পঞ্চগড় এক্সপ্রেসও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

 


আরো সংবাদ



premium cement