সব ধর্মের মানুষকে সমান সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে : প্রধানমন্ত্রী
- বাসস
- ২১ মে ২০১৯, ০০:০০
সব ধর্মের লোকজনকে ধর্ম-কর্ম পালনের সমান সুযোগ প্রদানে বাংলাদেশ একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর ফলে কেউ আর নিজেদের অবহেলার শিকার ভাবতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনো সম্প্রদায়ই নিজেকে কখনো অবহেলিত যেন মনে না করে, সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখি। আর সেদিক থেকে আমি বলব, বাংলাদেশ আজ সমগ্র বিশ্বেই একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সমর্থ হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে গণভবনে বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপন উপলক্ষে সারা দেশ থেকে আগত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, বৌদ্ধ ভিক্ষু, সঙ্ঘ সদস্য, সঙ্ঘ প্রধানদের সাথে শুভেচ্ছাবিনিময়কালে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশের মাটিতে যারা বসবাস করেন সবাই যার যার ধর্ম সম্মানের সাথে, নিষ্ঠার সাথে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারবে, সেটিই আমরা চাই এবং এই সহনশীলতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ সবার মাঝে থাকবে, এটিই আমাদের লক্ষ্য। সরকার প্রধান বলেন, ‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব আমি মনে করি সব ধর্ম সবাই যেন শান্তিপূর্ণভাবে সম্মানের সাথে স্বাধীনভাবে পালন করতে পারে সেটি নিশ্চিত করা। সেটিই হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা বা অসাম্প্রদায়িক চেতনা।’
শেখ হাসিনা এ সময় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যায়িত করে এ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রেখে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলাই তার সরকারের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি নিজে আমার নিজের ধর্ম পালন করি তাই অন্য ধর্মের প্রতি আামি সম্মান জানাই। আর কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সেটার সিদ্ধান্ত তো আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নেবেন। সে সিদ্ধান্তের দায়িত্ব তিনি কিন্তু কোনো মানুষকে দেননি। তিনি এ সম্পর্কে কোনোরূপ মন্তব্য করার ক্ষমতা তিনি মানুষকে প্রদান করেন নাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন, ধর্ম, বর্ণ, দল, মত নির্বিশেষে সব মানুষের জীবনমান উন্নত হোক সেটিই আমরা চাই। সে লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কাজ, আমাদের রাজনৈতিক আদর্শও সেটা। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দেশ স্বাধীন করে যে সংবিধান দিয়ে গেছেন সেখানেও এই কথাটাই বলে গেছেন। সবার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা তিনিই নিশ্চিত করে গেছেন।
বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গৌতম বুদ্ধের যে বাণী সেটা মানুষের শান্তির জন্য। আর সব ধর্মের মর্মবাণীই হচ্ছে শান্তি। আর আমরা সেটিই বিশ্বাস করি। আর বাংলাদেশে আমরা সাম্প্রদায়িত সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’ তিনি বলেন, ‘এটা কিন্তু বাংলাদেশে খুব সুন্দরভাবেই পালন করা হয়। যে ধর্মেরই উৎসব হোক সবাই মিলেই সেটি উদযাপন করে।’ তিনি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের গণভবনে আগমন প্রসঙ্গে বলেন, আপনাদের আগমনে গণভবনের মাটি ধন্য হয়েছে। তিনি এ সময় জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশে সিং, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, দীপংকর তালুকদার এমপি, বান্দরবন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৈশ হ্লা, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ধুমকেতু চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজুরী মারমা, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সঙ্ঘের সভাপতি শুদ্ধানন্দ মহাথের, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ধর্মমিত্র মহাথের, শাক্যমুনি বৌদ্ধবিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রজ্ঞানন্দ মহাথের, বাংলাদেশ বুদ্ধিষ্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রীমৎ সুনন্দ প্রিয় ভিক্ষু, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সঙ্ঘের সিনিয়র সহসভাপতি শ্রীমৎ বুদ্ধিপ্রিয় মহাথের, ঢাকা বৌদ্ধ সমিতির সহসভাপতি কর্নেল সুমন বড়–য়া, সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা: কনক কান্তি বড়–য়া, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়–য়া উপস্থিত ছিলেন।
জাপানের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইয়াসু ইজুমি বলেছেন, জাপান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার চলমান সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
জাপানের রাষ্ট্রদূত গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন। সাক্ষাতের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, জাপানের দূত প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন জাপান সফরে দুই দেশের মধ্যে আড়াই বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ৪০তম অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স (ওডিএ) চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে; যা গত বছরের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি।
রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে জাপানে তার আসন্ন সফরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। বিগত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ী হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়ে জাপানের দূত বলেন, আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশ ও দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সময়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতি আরো এগিয়ে যাবে।
জাপানের রাষ্ট্রদূত এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে জানান, জাপানের সহায়তার নির্মাণাধীন কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের আগ্রগতিতে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবেকে তার শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, তিনিও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জাপানের বিভিন্ন অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান বাংলাদেশের এক মহান বন্ধু। তিনি এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে দেশে রূপসা সেতু নির্মাণে জাপানের সহযোগিতার কথাও স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো: নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো: আবুল কালাম আজাদ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা