তৃণমূল থেকে আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানো হবে : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে আওয়ামী লীগকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হবে। এ জন্য আমরা আট বিভাগের জন্য আটটি কমিটি করেছি। এই কমিটিগুলোর দায়িত্ব থাকবে তৃণমূলকে নতুন করে ঢেলে সাজানো।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভার সূচনাবক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী করতে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, আজকে উপদেষ্টা পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ একসাথে বসেছি, সেই সাথে সাথে আমরা আরেকটি কাজ করতে চাই। ইতোমধ্যে আমাদের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নিয়ে মিটিং করেছি, ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করেছি। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, প্রেসিডিয়াম ও কার্যকরী সদস্যদের নিয়ে আটটি বিভাগে কমিটি গঠন করেছি। তিনি বলেন, এই কমিটির দায়িত্ব থাকবে আমাদের সংগঠনগুলো একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে নতুন করে ঢেলে সাজানো। কোথায় কমিটি আছে না আছে সেগুলো দেখা। সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগকে আরো মজবুত করে গড়ে তোলা। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণত রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গেলে অনেক সময় সরকার ধীরে ধীরে মানুষের কাছ থেকে হারিয়ে যায় বা তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমরা আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে জনগণের আস্থা বিশ্বাস আমরা অর্জন করেছি, জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈঠক প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব। এই উদযাপনের লক্ষ্য নিয়েই আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আমরা সরকারিভাবেও কমিটি করেছি, ব্যবস্থা নিয়েছি। পার্টির পক্ষেও আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমরা একটা কমিটিও করেছি। সেই কমিটির মাধ্যমে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা উদযাপন করব। এই সময়টাকে আমরা মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজকে এখানে আলাপ আলোচনা করব।
জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এবারের নির্বাচন, যেটা হয়ে গেল; যদি নির্বাচনের দিকে তাকান দেখবেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। যেটা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। তিনি বলেন, এবার সব শ্রেণি- পেশার মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানায়। এমনকি ব্যবসায়ী সম্প্র্রদায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, ছাত্র; সবচেয়ে বড় কথা যারা প্রথমবারের ভোটার, নবীন ভোটার সবাই আওয়ামী লীগ সরকারকে আবার চেয়েছে, তাদের সেবা করার জন্য, মানুষ ভোট দিয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের ভরাডুবির কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অবস্থান- যেহেতু মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় গিয়ে এসব দল গঠন করেছে, খুব স্বাভাবিকভাবে এরা হচ্ছে পরজীবীর মতো। নির্বাচনকে তারা মনে করেছে ব্যবসা। টিকিট বেচে তারা কিছু পয়সা কামাই করে নিয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের প্রতি তাদের খুব একটা নজর ছিল না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে যখন সার্ভে করা হয়েছিল, সেই সার্ভেতে তখন থেকে স্পষ্ট যে আওয়ামী লীগকে জনগণ চায়। জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে এবং আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। তারা নির্বাচন করার চেয়ে বাণিজ্য করার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। যার জন্য তাদের এই হাল। বিএনপি-জামায়াত আমলের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যাই হোক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এগুলোই ছিল তাদের কাজ। আজকে দেশের মানুষ অন্তত শান্তি পাচ্ছে।
এবারের নববর্ষ সবাই উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদযাপন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার ব্যাপকভাবে নববর্ষ উদযাপন হয়েছে। শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সবাই এই উৎসবটা পালন করেছে। আমরা কিন্তু নববর্ষ ভাতাও দিচ্ছি। বাংলাদেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। বক্তব্যের শুরুতেই ঐতিহাসিক ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, সেই স্বাধীন রাষ্ট্র, একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলে দেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে যখন বঙ্গবন্ধু যাত্রা শুরু করেন। ঠিক সেই সময় ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটে এবং বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তখন জাতির জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। কাক্সিক্ষত কোনো অগ্রগতি দেশের মানুষের জীবনে হয়নি। কেবলমাত্র আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করেছে, তখনই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হতে শুরু করে। ৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ, এর পর ২০০৮ সালে নির্বাচনে আবারো বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করি এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করেছি। বাংলাদেশ আজকে ক্ষুধামুক্ত, বাংলাদেশ আজকে দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার পথে। আমরা প্রায় ৪০ ভাগ থেকে ২১ ভাগে দারিদ্র্যের হার নামিয়ে এনেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সাথে সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের ছোঁয়া আজকে গ্রামপর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আজকে গ্রামের মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হচ্ছে, মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বাড়ছে। এটাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল, যেটা তিনি চেয়েছিলেন যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ।
দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের সঞ্চালনায় সভায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রায় সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকা ও রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে ব্যাপক শোডাউন করে দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মৎস্যভবন থেকে শুরু করে গুলিস্তানের নূর হোসেন চত্বর পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতো। যুবলীগের লাল-সবুজের পতাকা, সবুজ ক্যাপ ও গেঞ্জি পরিহিত নেতাকর্মীরা রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ ছাড়াও পতাকা নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান নেতাকর্মীরা। নূর হোসেন চত্বরে দাঁড়িয়ে শোডাউনের নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী স¤্রাট।