২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘ভারত ৭২ বছরেও পাকিস্তানকে মেনে নিতে পারেনি’ সেনাবাহিনীকে যুদ্ধ প্রস্তুতির নির্দেশ ইমরান খানের

-

ভারত আক্রমণ করলে তার চূড়ান্ত ও সর্বাত্মক জবাব দিতে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বৃহস্পতিবার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সম্মেলনে তিনি এ নির্দেশ দেন। সম্মেলনে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। খবর আলজাজিরা ও ডন নিউজ।
এ দিকে গতকাল শুক্রবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারত যদি পাকিস্তানে আক্রমণ করে তাহলে তারা সমুচিত জবাব পাবে। গতকাল আইএসপিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসাদ গফুর সেনা সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই ভারত পুলওয়ামা হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করছে। ভারতের উচিত ওই হামলার ব্যাপারে তাদের নিরাপত্তাবাহিনীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে পাকিস্তানকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না ভারত। সে জন্যই দেশটি বারবার নানা সময়ে পাকিস্তানে ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে; কিন্তু আবারো যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হলে সমুচিত জবাব পাবে ভারত।
অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরের পুলওয়ামায় নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর ১৪ ফ্রেব্রুয়ারির আত্মঘাতী হামলায় ৪২ জন নিহত হওয়ার পর ভারত এ জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনুমতি দেন। এরপরই ইমরান খান তার দেশের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিলেন। যদিও মোদির এ বক্তব্যের পর এ পর্যন্ত অবশ্য ভারতের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
পুলওয়ামার হামলার ঘটনার পর বৃহস্পতিবার সেনাপ্রধানের সাথে বৈঠকে বসেন ইমরান খান। এরপর জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ জানায়, পাকিস্তান এ কথা সুস্পষ্টভাবে সবাইকে জানাতে চায় যে, তারা তাদের জনগণকে রক্ষা করতে সক্ষম। নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, এটি নতুন পাকিস্তান। আমরা জনগণকে দেখাতে চাই যে, আমরা তাদেরকে যেকোনো ধরনের হুমকি থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। পুলওয়ামার হামলার ঘটনা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে এক ভিডিও বার্তায় ইমরান খান বলেছিলেন, কাশ্মিরে হামলার সাথে পাকিস্তানের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তখন হুমকিতে বলেছিলেন, ভারত কোনো কিছু করলে পাকিস্তান চুপ করে বসে থাকবে না। তারাও এর পাল্টা জবাব দেবে। তিনি হামলার ব্যাপারে ভারতের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য-প্রমাণ চান এবং এ ব্যাপারে যেকোনো ধরনের তদন্তে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ারও প্রস্তাব দেয়া হয়; কিন্তু তার এ বক্তব্য গ্রহণ করেনি ভারত।
কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে এখনো পর্যন্ত হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার ব্যাপারে কোনো প্রমাণ পেশ করা হয়নি। তবে ভারত সফরের সময় সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানকে দিল্লি এ ধরনের কিছু প্রমাণ দেখিয়েছে বলে কোনো কোনো খবরে বলা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় অবশ্য সৌদি যুবরাজ পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ী করে কিছু বলেননি। বরং তিনি এ অঞ্চলের শীর্ষ সমস্যা হিসেবে সন্ত্রাসবাদকে চিহ্নিত করে তা সমাধানে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে কাজ করার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মিরের স্থানীয় প্রশাসনকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। ওই চিঠিতে স্থানীয় প্রশাসনকে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। বেলুচিস্তানের মিলিটারি বেসকেও প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
খবরে উল্লেখ করা হয়, কোয়েটা ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত পাকিস্তানি সেনার বেস হেডকোয়ার্টার্স কোটা লজিস্টিকস এরিয়ার পক্ষ থেকে গত বুধবার জিলানি হাসপাতালে একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের কথা মাথায় রেখে চিকিৎসাসংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলা হয়েছে। খবরে বলা হয়, যুদ্ধের পরিস্থিতিতে সিন্ধু এবং পাঞ্জাবের সিভিল বা মিলিটারি হাসপাতালে আহত সেনাদের নিয়ে আসা হতে পারে। এ জন্য ২৫ শতাংশ বেড খালি করে তা সংরক্ষিত রাখা ও জরুরি সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থাও রাখতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement