২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একাদশ নির্বাচন জনগণ ও বিশ্ব প্রত্যাখ্যান করেছে : ফখরুল

মরহুম ড. টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরীর স্মরণসভায় বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -

একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোট দেয়ার অধিকার হারানোর বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই নির্বাচন ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা নিয়ে আর কোনো প্রশ্নের সুযোগ নেই।
গতকাল বিকেলে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ভোটবিহীন সরকারকে পরাজিত করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের সেতুবন্ধন আরো দৃঢ় করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, একটি কথা আপনাদের স্পষ্ট করে বলতে চাই, যারা যে কথাই মনে করুন না কেন ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। ২০ দলীয় জোট যখন গঠন হয় তখন একই কথা ছিল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যখন গঠন হয় তখন এই একই কথা এসেছে। ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের মধ্যে যে সেতুবন্ধন সেটাই বিএনপি তৈরি করেছে। সেটার অবশ্যই ঐতিহাসিকভাবে প্রয়োজন ছিল এবং প্রয়োজন আছে। আমরা মনে করি এখন আরো বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন।
জাতীয় প্রেস ক্লবের কনফারেন্স লাউঞ্জে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মরহুম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ টি এম ফজলে রাব্বী চৌধুরীর স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়। গত ২৭ ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বী চৌধুরী।
জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব এস এম এম শামীমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এস এম এস আলম, নওয়াব আলী আব্বাস খান, শফি উদ্দিন ভূঁইয়া, মাওলানা রুহুল আমিন, সেলিম মাস্টার, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মহসিন সরকার, কাজী মো: নজরুল, ভাসানী স্মৃতি ফোরামের কামরুল হুদা ও মরহুম নেতার মেজ ছেলে মইনুল রাব্বি চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই নির্বাচন আমরা মানি না। এখন রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে কোনো মতেই যাতে হতাশার সৃষ্টি না হয় সেজন্য সজাগ থাকা এবং প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলকে সচেতনভাবে জাতীয় ঐক্যকে আরো বেশি দৃঢ় করা। কেউ যদি মনে করে থাকেন, একা বা এককভাবে ভয়াবহ দানবের সাথে সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক বিজয় লাভ করবেন তিনি সত্যটা উপলব্ধি করতে পারছেন না। এটাই বাস্তবতা। যে ভয়াবহ দানব আমাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করেছে, গণতান্ত্রিক চেতনাকে ধ্বংস করেছে তাদের পরাজিত করতে হলে জনগণের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। জনগণের ঐক্যের মধ্য দিয়ে আপনাকে বিজয় অর্জন করতে হবে।
ঐক্যের বিষয় বিভিন্ন প্রশ্নের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, অনেক প্রশ্ন আছে। রাজনীতি করলে প্রশ্ন থাকবে। প্রশ্ন থাকলে তো রাজনীতি হবে না। রাজনীতির চর্চার প্রয়োজন আছে। কোন পরিস্থিতিতে কোন পর্যায়ে কোন উদ্যোগ সঠিক কি বেঠিক সে বিষয়ে আলোচনা আছে। সে আলোচনার জন্য ফোরাম রয়েছে। আমরা আশা করব, সেসব ফোরামে বিষয়গুলো সঠিকভাবে আলোচনা হবে।
নতুন প্রজন্মের প্রতি প্রত্যাশা রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বন্ধুগণ হতাশ হবেন না। আমি জানি আমাদের অনেকের বয়স হয়ে গেছে, সত্তর-ঊর্ধ্ব বয়স অনেকের। আর বোধ হয় কিছুই হবে না। অবশ্যই হবে। হতাশাই তো শেষ কথা হতে পারে না। কারণ আমাদের যাদের বয়স হয়ে গেছে, আমাদের সামনে নতুন প্রজন্ম আছে। তাদের সামনে বিরাট ভবিষ্যৎ আছে। তারা আরো বেশি করে ঐক্যবদ্ধ হবে, আরো বেশি করে দেশকে তারা ভালোবাসবে। দেশকে ভালোবেসে তারা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আমি একটা কথা প্রায়ই বলিÑ এটাকে আমার যেন একটা দর্শন মনে হয়। রবি ঠাকুরের ‘দুরন্ত আশা’ কবিতার শেষের দুইটি ছত্র প্রায় মনে হয়। যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ-মন্থরে, সব সঙ্গীত গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া। তবু বিহঙ্গ ওরে বিহঙ্গ মোর এখনই অন্ধ, বন্ধ করো না পাখাÑ এটাই হচ্ছে মূল কথা। পাখা বন্ধ করবেন না। এগিয়ে যাবেন। সূর্য উদয় হবেই। সামনের যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সেটা আপনার, আপনাদের।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন, তারা দেখেছেন, এটা নির্বাচন হয়নি, তামাশা হয়েছে, প্রহসন হয়েছে এবং এটা একটা নিষ্ঠুর প্রহসন। ক্রুয়েল মোকারি হলো মানুষের লিগ্যালিটিকে হত্যা করা। এটা আওয়ামী লীগ কেন করল অনেকেই এই প্রশ্ন করেছেন? গত ১০ বছর ধরে তারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে, যেভাবে খুশি দেশ পরিচালনা করেছে। তাদের ভাষায় উন্নয়ন হয়েছে। তাহলে নির্বাচনে এভাবে সমস্ত জনগণকে বঞ্চিত করে তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার প্রয়োজন কি ছিল?
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের একটা বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জনগণের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। আজকে আওয়ামী লীগের যারা সমর্থক তারাও পর্যন্ত বলেছেন আমি আমার ভোট দিতে পারলাম না কেন? কারণ তারা ভোট দিতে পারেনি। এটা সমগ্র দেশের চিত্র।

 


আরো সংবাদ



premium cement