২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রায়পুরায় আ’লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত অর্ধশত

-

নরসিংদীর রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্বশত্রুতার জেরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের পৃথক সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোরে উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী গ্রামে এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একই উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পৃথক সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন : বাঁশগাড়ী বালুয়াকান্দি এলাকার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ফকিরের ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল হোসেন রানা (১৭) এবং অপর দিকে একই নিলক্ষা ইউনিয়নের বীরগাঁও এলাকার মৃত উসমান মিয়ার ছেলে সোহরাব হোসেন (৩০), গোপীনাথপুর এলাকার মৃত সোবহান মিয়ার ছেলে মো: স্বপন মিয়া (২৫) ও আমিরাবাদ গ্রামের রেদোয়ান (৩০)।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ৬ বারের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সিরাজুল হক ও সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহেদ সরকারের সমর্থকদের মধ্যে প্রায় দেড় যুগ ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধের জেরে গত মার্চে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান শাহেদ সরকার। এর ৪০ দিন পর গত ৩ মে দুর্বৃত্তদের অর্থাৎ প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক। ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক হত্যার পর থেকে প্রতিপক্ষের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় শাহেদ সরকার সমর্থকেরা। দুই গ্রুপের দলপ্রধান মারা গেলেও এখনো পক্ষদ্বয়ের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়।
জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক হত্যার পর দীর্ঘদিন শাহেদ সরকার সমর্থকেরা পলাতক থাকার পর শুক্রবার সকালে তার সমর্থকেরা ভোরে এলাকায় ফিরলে প্রতিপক্ষ সিরাজুল হকের সমর্থক ও শাহেদ সরকার- জাকির হোসেন সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় এই ঘটনায় উভয় পক্ষে ১০ জন আহত হয়। এর মধ্যে ৪ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তোফায়েল আহম্মদ রানা নামে একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। তোফায়েল সম্প্রতি বাঁশগাড়ী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী হিসেবে নির্বাচনী পরীক্ষা শেষে ফরম পূরণ করে। সে শাহেদ সরকারের সমর্থক হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এ ছাড়া গুরুতর আহতাবস্থায় সুমন মিয়া (২৬), মামুন মিয়া (২৫) ও সুমন মিয়া (২৬) নামে ৩ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ দিকে একই উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নেও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হকের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। তাদের সমর্থকেরা আবার বাঁশগাড়ী এলাকায় বিভিন্ন পক্ষকে সমর্থন দিয়ে সংঘর্ষে অংশ নিয়ে থাকে। এর মধ্যে নিলক্ষা এলাকার তাজুল ইসলামের সমর্থকরা বাঁশগাড়ী এলাকার সিরাজুল হক সমর্থক এবং আবদুল হকের লোকজন শাহেদ সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সমর্থকেরা বাঁশগাড়ীর সংঘর্ষের ঘটনায় অংশ নেয়ার পর নিজ এলাকায় ফিরে প্রতিপক্ষ আবদুল হকের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। প্রতিপক্ষের লোকজন তাদেরকে প্রতিহত করতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষটি দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রথমে তাজুল ইসলামের সমর্থক সোহরাব হোসেন ও পরে আবদুল হক সরকারের সমর্থক স্বপন মিয়া নামে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হয় কমপক্ষে ৫০ জন। এর মধ্যে ১৫-১৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন।
এ ব্যাপারে নিলক্ষা ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘একপক্ষ অতর্কিতে তাদের প্রতিপক্ষের ওপর হামলা করে। পরে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে উভয়পক্ষের একজন করে দু’জন নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ ও টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫০ জন।’
নিলক্ষা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘নিহতদের লাশ রায়পুরা থানা হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাঁশগাড়ীর সংঘর্ষের ঘটনার জেরেই তাজুল চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা আবদুল হক চেয়ারম্যানের সমর্থকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তবে আজকের সংঘর্ষটি পূর্ব পরিকল্পিত ছিল না। হঠাত করেই এই সংঘর্ষ। ’
রায়পুরা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘সকালে বাঁশগাড়ীর ঘটনার খবর পেয়ে রায়পুরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এরই মধ্যে নিলক্ষা ইউনিয়নের প্রথমে বীরগাঁও ও পরে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষ শুরু হয়। পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হলেও তা নিয়ন্ত্রণ করতে সময় লেগে যায়। পৃথক দু’টি সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
রায়পুরা থানা ওসি মহসিনুল কাদের জানান, বাঁশগাড়ী ও নিলক্ষা ইউনিয়নে দুই গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। তাদের সেই বিরোধের জের হিসেবে এ সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিট্রেট মো: সাদেকুর রহমান সবুজের নেতৃত্বে এলাকায় দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement