২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিএনপি স্বরূপে ফিরেছে : শেখ হাসিনা

ছোট বোন রেহানাকে সাথে নিয়ে তোষাখানা জাদুঘর উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : বাসস -

নির্বাচন উৎসবমুখর হলে বিএনপির খারাপ লাগে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যখন বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনে উৎসবমুখর, যখন সবাই খুশি, ঠিক সে সময় বিএনপি তাদের স্বরূপে ফিরেছে। তারা আবার আগুন দিয়ে গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।
রাজধানীর ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সংসদীয় বোর্ডের সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সবাই দাবি করল বলেই নির্বাচন কমিশন সময় পিছিয়ে দিয়েছে। সবাই যখন এলো তখন একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হলো নির্বাচনে। কিন্তু জনগণ যখন নির্বাচন নিয়ে উৎসবমুখর হয় তখন বিএনপির খুব খারাপ লাগে। সেটাই দেশবাসী দেখল। কোনো কথা নেই বার্তা নেই বিএনপি একটা মিছিল নিয়ে এলো। যেখানে মিছিল নিয়ে আসার কথা না। তারপর মারপিট, পুলিশকে আহত করল এবং পুলিশের গাড়ি পোড়াল। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে তারা একইভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। অগ্নিসন্ত্রাস এবং মানুষ পোড়ানো ছাড়া বিএনপি কোনো কাজ করতে পারে না এটাই প্রমাণ করেছে; যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির প্রতি অনুরোধ-তারা যেন নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র না করে। আর ষড়যন্ত্র করেও লাভ হবে না, তারা পার পাবে না। কারণ জনগণ আমাদের সাথে আছে। তারাই সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এ ধরনের কাজ করার পর একজনের দোষ আরেকজনের ঘাড়ে দেয়া উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে দেয়া। এ বিষয়ে তারা পারদর্শী। যেখানে ভিডিও ফুটেজে দেখা গেল তাদের পরিবারের লোকজন এ কাজ করছে, সেখানে তারা হুট করে বলে দিলো ছাত্রলীগ যুবলীগের ছেলেরা করেছে। ছাত্রলীগ গেল কখন এবং যাবে কেন? ভিডিও ফুটেজে তো সবার চেহারা দেখা যাচ্ছে একটাও কি ছাত্রলীগ-যুবলীগের কারো চেহারা আছে! সবই তো বিএনপির গুণ্ডাদের চেহারা। সবাই তো বিএনপির।
আওয়ামী লীগের ৪ হাজার ২৩ জন প্রার্থীর বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের সাথে কিছু কথা বলেছি। এত প্রার্থীর মাঝে প্রার্থী বেছে নেয়া কঠিন কাজ। ৪ হাজারের মধ্যে ৩০০ বেছে নেয়া কঠিন কাজ। তারপরও আমরা মনোনয়ন বোর্ডে বসেছি যাচাই বাছাই করে ঠিক করব। আমি আশা করি জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, পার্লামেন্টারি বোর্ডের দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই দু’টি সভায় নির্বাচনÑ মনোনয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কাছে দেশী-বিদেশী ৫-৬ টি সার্ভে রিপোর্ট আছে। আমরা এ রিপোর্টগুলো স্টাডি করছি। এখনো আমরা আনুষ্ঠানিক মনোনয়নপর্ব শুরু করিনি। দুই-এক দিনের মধ্যে শুরু করব।
তিনি বলেন, মনোনয়নে যাতে জনমতের প্রতিফলন হয়, সেই জন্য বোর্ডের আমরা সব সদস্য রিপোর্টগুলো স্টাডি করছি। আগামীকাল (আজ) অনানুষ্ঠানিকভাবে রিপোর্ট পর্যালোচনা হতে পারে। আমরা আশা করছি দুই-এক দিন পরে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে আমরা মনোনয়ন চূড়ান্ত করব।
কাদের বলেন, ৬৫ থেকে ৭০টি আসন শরিকদের মধ্যে ভাগাভাগি হবে এ ল্য নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। এটা কমতেও পারে, বাড়তেও পারে। সেটা নির্ভর করছে ইলেক্টেবল ক্যান্ডিডেটের ওপর। আমাদের শরিকরা কতজন ইলেক্টেবল ক্যান্ডিডেট দিতে পারে তার ওপর। আবার আওয়ামী লীগের সবাইতো মনোনয়ন পাবে না। আওয়ামী লীগেরও যারা ইলেক্টেবল তারা মনোনয়ন পাবেন।
তিনি বলেন, বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট আমাদের জোটে আসবে এটাতে কোনো সন্দেহ নাই। যুক্তফ্রন্ট এখনো আমাদের কাছে আসন তালিকা পাঠায়নি, তালিকা পাঠানো হলে আমরা তাদের সাথে বসব।
তোষাখানার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে এবং দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর বিজয় সরণিতে বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের পাশে নবনির্মিত তোষাখানার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের কেবল স্বাধীনতাই দিয়ে যাননি তিনি আমাদের মর্যাদাও দিয়ে গেছেন। এই মর্যাদাকে আমাদের সমুন্নত রাখতে হবে। গত ১০ বছরে তার সরকারের শাসনে দেশের জনগণের জীব-নমান উন্নত হয়েছে এবং তিনি এই জীবন-মানের আরো উন্নয়ন ঘটাতে চান।
তিনি বলেন, আমরা ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করব এবং ওই সময়ের মধ্যে দেশকে আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে গড়ে তুলব। আর ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ।
বিজয় সরণিতে রাষ্ট্রীয় তোষাখানার পাঁচতলার অত্যাধুনিক ভবনটির আয়তন ৫০ হাজার স্কয়ার ফুট। ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই তোষাখানায় দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ ও কর্মকর্তারা যেসব রাষ্ট্রীয় উপহার পাবেন তা সংরক্ষণ করা হবে।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো: নজিবুর রহমান, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, সেনাবাহিনী প্রকৌশল বিভাগের প্রধান মেজর জেনারেল সিদ্দিকুর রহমান সরকার অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রধান এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো: শফিউল আলম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
রাষ্ট্রীয় পদাধিকারীদের দেশ-বিদেশ থেকে প্রাপ্ত উপহারসামগ্রী সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ উপহারসামগ্রী দেশের সম্পত্তি এবং দেশের সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। কাজেই এসবকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, অতীতে তার নামে এবং নৌকার প্রতীকসংবলিত অনেক উপহার, বিভিন্ন দুর্লভ আলোকচিত্র বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সেনবাহিনীর কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এই তোষাখানার নির্মাণকাজ যথাযথভাবে সম্পন্নের জন্য ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীনতার পরপরই দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রীয় উপহারসামগ্রী সংরক্ষণের জন্য তোষাখানা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement