জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনেই ছাত্রসংসদ নেই
- সাহাদাত হোসাইন, জবি
- ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:৪৩
কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরিত হলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্রসংসদের বিধানই যোগ করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকতা, কর্মচারী সবার নির্বাচন হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছাত্রসংসদ (জকসু) নির্বাচন হয় না। আর নির্বাচন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জবি আইনে ছাত্রসংসদ বিধান যোগ করার কোন সময় উদ্যোগও নেয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়ার পর নড়ে চড়ে বসেছে রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলাও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন (জকসু) আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সভায় ছাত্রসংসদের বিধান পাস করে তা একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে অনুমোদনের জন্য পাঠানোর দাবি জানিয়েছে। অন্যথায় দাবী আদায়ে আন্দোলনে নামার কথা জানান তারা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন শুরু হলে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ ডাকসুর নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হলে তা পর্যবেক্ষণ করে তারাও বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে ছাত্রসংসদের আইন পাস করে আইনটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদে পাঠাবে। অন্যদিকে বিশেষ অনুমোদন নিয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, যেহেতু অনেক বছর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলাতে কোন সংসদ ছিলনা। আর নির্বাচনের যে প্রক্রিয়া তা অনেক বিস্তৃত। তাই আমরা দেখতে চাচ্ছি ডাকসু নির্বাচনটা কেমন হয়, কি ধরনের সমস্যা হয় সবকিছু বুঝে শুনে আমরাও ডাকসুর আদলেই একটা ছাত্রসংসদ নীতিমালা আয়োজন করব।
তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে বর্তমানে ছাত্রসংসদের অধ্যাদেশটি যুক্ত নেই। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন শুরু হলে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন হয়ে গেলে আমরাও একই আদলে গঠনতন্ত্র তৈরি করে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে এটি পাস করে এটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদে পাঠাব। অন্যদিকে অনুমোদন সাপেক্ষে নির্বাচন আয়োজন করব।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৪ সালে প্রথম জগন্নাথ কলেজ ছাত্রসংসদ (জকসু) এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ভিপি এ.আর.ইউসুফ আর জিএস সালাউদ্দিন আহমেদ নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত জগন্নাথ কলেজ ছাত্রসংসদের ১০টি কমিটি নির্বাচিত হয়। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৭ সালে আরও চারটি ছাত্রসংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ১৯৮৭ সালের নির্বাচনে নির্বাচনে আলমগীর সিকদার লোটন ও জাহাঙ্গীর সিকদার জোটন নামে দুই ভাই ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হন।
এর আগে জগন্নাথ কলেজ ছাত্রসংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু, ঢাকা-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এবং জিএস নির্বাচিত হন ঢাকা-৭ আসনের সাবের সংসদ ও ছাত্রলীগের সবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন প্রমুখ।
এর পরে ২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রুপান্তরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ১৮ বছর জগন্নাথ কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়নি। আর জগন্নাথ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরিত হওয়ার সময়ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ এ ছাত্রসংসদের অধ্যাদেশযুক্ত হয়নি। ফলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্রসংসদ অধ্যাদেশ যুক্ত ও নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
জবি ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এম এন জুনায়েদ বলেন, জবি ছাত্র ইউনিয়নের বার্ষিক পরিকল্পনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান আইনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ এর বিষয়টি যুক্ত নেই। ছাত্রসংসদ নির্বাচনের আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্রসংসদের অধ্যাদেশের বিষয়টি যুক্ত এবং গঠনতন্ত্র তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, আগামী মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচন হবে তা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আর ছাত্রসংসদ নির্বাচনও যদি এক দলীয় হয়ে যায় তা হলে কোনও ফলাফল আসবে না। তাই আমরা আগে ডাকসু নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছি।
জবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ছাত্রসংসদ নির্বাচন হউক এটা আমরা চাই। কিন্তু সদ্য অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারী দল যে কারচুপি করেছে তাতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন যে সুষ্ঠ হবে তাতে আমরা সন্দিহান। আর সবচেয়ে বড় কথা ক্যাম্পাসে সব ছাত্রসংগঠনের সহ অবস্থান। ক্যাম্পাসে সব ছাত্রসংগঠনের সহ অবস্থান না থাকলে নির্বাচন আয়োজন করা অনর্থক। তাই আগে ক্যাম্পাসে সব ছাত্রসংগঠনের সহ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। তারপর ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের সাথে আলোচনা মতামত হতে পারে।
জবি শাখা ছাত্রফন্টের সভাপতি এম এম মুজাহিদ অনিক বলেন, জকসু নির্বাচন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সভায় ছাত্রসংসদের বিধান পাস করে তা একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে অনুমোদনের জন্য পাঠানোর দাবি জানিয়েছি আমরা। অতি শীঘ্রই ক্রিয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে লিখিতভাবে আমরা এর জোরালো দাবী জানাবো।
জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল বলেন, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হউক। ছাত্রসংসদ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ছাত্রদের কথা বলার একটা জায়গা থাকে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্রসংসদ অধ্যাদেশটি যুক্ত করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানাবো।
তিনি বলেন, ছাত্রসংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতার স্বপক্ষের সকল ছাত্রসংগঠন অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী ছাত্রসংগঠন শিবিরের অংশগ্রহণ মানা হবে না।
এদিকে মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন-জকসু’র দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে উন্মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
হল ও টিএসসি আন্দোলনের নেতা রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে উক্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জবি ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মিফতাহ আল ইহসান, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতা কামরুল ইসলাম ইমরান, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী খবির উদ্দীন লাঞ্চু, অর্থনীতি বিভাগের শালিন সৌরভ।
আলোচনা সভায় বক্তারা, বিশ্ববিদ্যালয়ে গনতান্ত্রিক পরিবেশ এবং ছাত্র সমাজের অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবী জানান। সভাপতির বক্তব্যে রুহুল আমিন বলেন, কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের সাথে শিক্ষার্থীদের সংযোগ বৃদ্ধি, জাতীয় নেতৃত্ব সৃষ্টি এবং সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি পরিচালনা করার জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রয়োজন।