২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পরিচালকদের ঋণ

ব্যাংক খাতের আরেক ঝুঁকি

-

দেশে খেলাপি ঋণের অপসংস্কৃতি এখন মহীরুহে পরিণত হয়েছে। যেনতেনভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেকে আর পরিশোধ করছেন না। আইনের মারপ্যাঁচে বছরের পর বছর আটকে রাখেন। ঋণের নামে জনগণের অর্থ প্রকারান্তরে লোপাট করছেন। এটি লুণ্ঠন ছাড়া আর কিছু নয়। ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বংলাদেশের ব্যাংক খাত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই প্রবণতা থেকে ব্যাংক খাত বেরিয়ে আসতে না পারায় সামষ্টিক অর্থনীতিও সঙ্কটে পড়েছে। এ জন্য ব্যাংক পরিচালকরাও কম দায়ী নন। তারা পরস্পরের যোগসাজশে একে অপরের ব্যাংক থেকে ঋণ দিয়ে পরিশোধ নিশ্চিত করছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিজের ও অন্য ব্যাংক থেকে পরিচালকরা ঋণ নিয়েছেন প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা; যা মোট ব্যাংক ঋণের ১২ শতাংশের বেশি। ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন’ অনুযায়ী, বর্তমানে একটি ব্যাংকের পরিচালক থাকতে পারেন সর্বোচ্চ ২০ জন। একটি ব্যাংক শুরু করতে পরিশোধিত মূলধন লাগে ৪০০ কোটি টাকা। ওই হিসাবে, একজন উদ্যোক্তাকে ব্যাংক পরিচালক হতে বিনিয়োগ করতে হয় সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকা। ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে নামে-বেনামে জনগণের শত শত কোটি টাকা আমানত ঋণ আকারে বের করে নিচ্ছেন কিছু পরিচালক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান, বেসরকারি খাতে ব্যাংক পরিচালক রয়েছেন সর্বোচ্চ ৮০০ জন। আমানতকারী প্রায় ১০ কোটি পাঁচ লাখ। ঋণগ্রহীতা এক কোটি ১০ লাখ। মোট ঋণ ৯ লাখ ৭০০ কোটি টাকা এবং আমানত ১০ লাখ কোটি টাকা। কিন্তু ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে ঋণের একটি বড় অংশ নিয়েছেন ব্যাংকের কিছু পরিচালক। এতে ব্যাংক খাতে অনাদায়ী ঋণ বাড়ছে।
ব্যাংক পরিচালকদের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ নিয়েছেন ৩০০ জন। ব্যাংকের এসব পরিচালকের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেছেন ২০ কোটি টাকা করে ছয় হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ঋণের নামে ব্যাংক থেকে তারা বের করে নিয়েছেন পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা। বিপুল এই অর্থের বেশির ভাগই পরিশোধ করা হয় না বছরের পর বছর। কখনো পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নবায়ন করা হচ্ছে ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই। একসময় পরিচালকরা নিজ ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিতেন। পরিচালনা পর্ষদে অনৈতিকভাবে নিজেদের সুদ মওকুফ করতেন। এমন কার্যক্রম ঠেকাতে কড়াকড়ি আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং এক নির্দেশ জারি করা হয়, কোনো পরিচালক নিজের মোট শেয়ারের ৫০ শতাংশের বেশি ঋণ নিজ ব্যাংক থেকে নিতে পারবেন না। এতে পরিচালকরা নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া কমিয়ে দেন। তবে পরস্পর যোগসাজশে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া অব্যাহত রেখেছেন।
পরিচালকদের বেশির ভাগ ঋণই পরিশোধ না করলেও ‘খেলাপি’ হিসেবে না দেখানোর কারণ হিসেবে জানা যায়, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৭(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক পরিচালক অন্য কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করলে ওই ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে খেলাপি পরিচালককে নোটিশ দেবে। নোটিশ দেয়ার দুই মাসের মধ্যে ঋণ পরিশোধ না করলে খেলাপি ব্যক্তি তার ব্যাংকে পরিচালকের পদ হারাবেন। তবে পরিচালকদের ঋণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সম্পর্ক, যোগসাজশ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে নেয়া হয়। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী হয় না অনেক ব্যাংক। তা ছাড়া, কোনো ব্যাংক আগ্রহ দেখালে সংশ্লিষ্ট পরিচালক আদালতের দ্বারস্থ হন।
পরিচালকরা ব্যাংক থেকে যেভাবে ঋণ নিচ্ছেন তা অনৈতিক এবং সুশাসনের পরিপন্থী। এটি আমানতকারীদের আমানতকে ঝুঁকিতে ফেলছে। ব্যাংকের পরিচালকদের বেশির ভাগের রয়েছে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা। তাই তাদের অনৈতিক ঋণ নেয়া বন্ধ করতে হলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের। এসব অনৈতিক ঋণ নেয়া প্রতিরোধ করতে না পারলে যেভাবে নামে-বেনামে ব্যাংক থেকে জনগণের অর্থ বের করে নেয়া হচ্ছে; এতে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য মহাবিপদ অপেক্ষা করছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলি হামলায় আহত শিশুর মুখে ২০০ সেলাই বিষখালীতে মৎস্য বিভাগের অভিযান : জেলে নিখোঁজ, আহত ২ দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোর তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ গাজীপুরে দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ডভ্যানে অটোরিকশার ধাক্কায় হতাহত ৫

সকল