২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ধুলোর নগরী ঢাকা

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নগরবাসী

-

বায়ুদূষণে রাজধানী ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। বায়ুদূষণ বর্তমানে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ঢাকার অবস্থান বেশির ভাগ সময়ই থাকছে শীর্ষে। একিউআইয়ের তথ্যমতে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে বিশ্বের সব দূষিত শহরকে পেছনে ফেলে শীর্ষে চলে আসে ঢাকা নগরী। এ সময় বায়ুদূষণের পরিমাণ ছিল ২৩৭ পিএম। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে এখন পর্যন্ত ১০ দিন ঢাকা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর। গত তিন মাস ধরে ঢাকার অবস্থান শীর্ষ পাঁচেই থাকছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশবিষয়ক সংস্থা ইপিএ’র হিসাবে কোনো একটি শহরের বায়ুর মানের সূচক ২০০-এর বেশি হলে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। কোনো শহরের বায়ুর মানের সূচক ২০০ ছাড়ালে ওই শহরের মানুষকে মাস্ক (মুখোশ) পরার পরামর্শ দেয়া হয়। এ ছাড়া ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হয়, সাইকেলে চড়া নিষেধ করা হয়। শিশু ও বৃদ্ধদের খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে নিরুৎসাহিত করা হয়।
রাজধানী ঢাকার চার দিক নিত্যদিন ধুলোয় আচ্ছন্ন থাকছে। ধুলোয় চলাফেরা করায় সব বয়সী মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে ধুলোদূষণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে নগরবাসী। বিশেষ করে শিশুদের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বিঘিœত হওয়ার পাশাপাশি নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিচ্ছে। ধুলো-বালির জন্য অনেকের সর্দি-কাশি কিছুতেই ভালো হচ্ছে না। চিকিৎসকদের অভিমত, বাতাসে ভারী ধাতু ও সূক্ষ্ম বস্তুকণা বেড়ে গেলে ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুজনিত সমস্যা বেড়ে যায়। আর শিশুদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তাও কমে যায়।
উন্নয়নের নামে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকার সবখানে বছরজুড়ে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির মহোৎসব চলছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ, ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের খোঁড়াখুঁড়ি, ঢাকার আশপাশের ইটভাটার কালো ধোঁয়া, গাড়ির কালো ধোঁয়া এবং কল-কারখানার ধোঁয়া ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য বিশেষভাবে দায়ী। এসব উন্নয়ন কাজ অপরিকল্পিতভাবে করায় ঢাকার চার পাশের পরিবেশ সব সময় ধুলোয় ধূসরিত থাকছে। ধুলো-বালির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায়, দোকানের জিনিসপত্র একটু পরপর পরিষ্কার না করলে সব কিছুতে ধুলোর আস্তর পড়ে যায়। নগরীতে চলাচলরতদের মাস্ক পরার হার অনেক বেড়ে গেছে। মাস্ক ব্যবহার না করে মানুষ বের হতে পারছে না।
ধুলোর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলোÑ যেসব ঠিকাদার উন্নয়নকাজ করছেন; তারা কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী কাজ করছেন না। অথচ বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে উচ্চ আদালত এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর রাস্তাসহ নির্মাণাধীন জায়গা ঘিরে দেয়া, ধুলোমাখা স্থানে দুই বেলা পানি ছিটানো এবং দূষণকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ওই নির্দেশও মানা হচ্ছে না। রাজধানীর বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে যথার্থ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে পরিবেশ অধিদফতরও। নগরীর রাস্তাঘাটে যত্রতত্র নির্মাণকাজ চলছে, খোঁড়াখুঁড়ি অব্যাহত আছে; পরিবেশ অধিদফতর এসব বিষয়ে কোনো নজরই দিচ্ছে না। ধূলিমাখা স্থানে প্রতিদিন পানি ছিটানোর কথা থাকলেও সিটি করপোরেশন তা করছে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নিজেদের অর্পিত দায়িত্ব পালনে উদাসীন হওয়ায় এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকার বায়ুদূষণে নগরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এখনো এই স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি। তবে এভাবে বায়ুদূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকলে ঢাকার জনস্বাস্থ্যের জন্য তা ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। এর আগেই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং ধূলিদূষণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দূষণের অন্যতম উৎস নির্মাণকাজের ধুলো নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে। যা মোটেও অসম্ভব নয়। শুধু প্রয়োজন সরকারি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ।


আরো সংবাদ



premium cement
৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের

সকল