৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সমাজে বেড়েছে সহিংসতা

অপরাধীদের কঠোর শাস্তি প্রয়োজন

-

সারা দেশে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ধর্ষণ ও হিংস্র প্রক্রিয়ায় খুনের মতো জঘন্য ঘটনা বেড়েছে। নিষ্ঠুরভাবে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা আগেও ঘটেছে; তবে এখন যে নজিরবিহীন বীভৎস প্রক্রিয়ায় ঘটাচ্ছে অপরাধীরা, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নিষ্ঠুরতা আগের সব রেকর্ড ছাপিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা ওল্টালেই দেখা যায়, ধর্ষণ ও গণধর্ষণের লজ্জাকর খবর। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা। সরকারি পরিসংখ্যানে অপরাধের হার কমলেও বেড়েছে বর্বরোচিত প্রক্রিয়ায় হত্যার নৃশংস ঘটনা। সন্ত্রাসীবাহিনীর হাতে খুন দৃশ্যত কমলেও ঘটছে নানা প্রকার সামাজিক অপরাধ। সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে, দু-একটি নির্মম ঘটনা ঘটে, যা সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে। কিন্তু বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যমের সূত্রে জানা যায়, মাত্র এক মাসে ঢাকাসহ সারা দেশে গলা কেটে খুনের শতাধিক ঘটনা ঘটেছে। গড়ে প্রতিদিন এক ডজন ধর্ষণের অভিযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি খোদ পুলিশের বিরুদ্ধেও উঠেছে ধর্ষণের অভিযোগ। খুলনার জিআরপি থানায় এক তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগে স্বয়ং ওসিসহ পুলিশবাহিনীর পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে ৪ আগস্ট আদালতে মামলা হয়েছে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ১১টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত ১১টি ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) গত আড়াই বছরে ৩৮ হাজার ১২৪ জন নারী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৪২৮ জনই যৌনপীড়নের শিকার। ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতেই চিকিৎসা নিয়েছে তিন হাজার ৬০১ নারী ও শিশু। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৫৭১টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে হয়েছে ৪৯৬ জন। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, চলতি বছরের ছয় মাসে ৩৯৯ শিশু ধর্ষণ ও এর চেষ্টার শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর মৃত্যু হয়েছে ২৬ শিশুর। ২০১৮ সালে ৩৫৬টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। এর মধ্যে মারা যায় ২২ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে মোট ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৭৩২টি এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় তাদের ৬৩ জনকে। ধর্ষণচেষ্টার পর হত্যা করা হয়েছে তিন নারীকে। গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২০৩টি। আর শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৮১টি। গত জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৭৯১টি। এ সংখ্যা আগের এক বছরের চেয়েও বেশি। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৬ জনকে। পশুর মতো দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৮৪টি। শিশু ধর্ষণের নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে ৩২৩টি। ২০১৭ সালে ধর্ষণের মোট সংখ্যা ছিল ৮১৮ এবং ২০১৬ সালে ৭২৪। শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালের চেয়ে ২০১৮ সালে শিশু ধর্ষণ ও গণধর্ষণ বেড়েছে কমপক্ষে ৩৪ শতাংশ। পুলিশ সদর দফতরের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ বছরের প্রথম চার মাসে সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের বিষয়ে মামলা হয়েছে এক হাজার ১৩৯টি এবং হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে ৩৫১টি।
এসব তথ্য-উপাত্তই বলে দেয় বাংলাদেশের সামাজিক অবক্ষয় ও মূল্যবোধের ধস কত তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এর কারণ অনুসন্ধান করে প্রতীয়মান হয়, নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অভাব এবং বিদেশী অপসংস্কৃতির প্রভাবে খুন, ধর্ষণসহ নিষ্ঠুর সব সামাজিক অপরাধ অবাধে বাড়ছে। এ ছাড়া মনোসামাজিক অসুস্থতা এবং অপরাধ করে পার পাওয়ার প্রবণতাও এর জন্য দায়ী।
আমরা মনে করি, সহিংস ও নিষ্ঠুর ঘটনা রোধে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। সর্বপ্রথম দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। আদালতের রায়ের বাস্তবায়ন করে যত দ্রুত সম্ভব বিচার নিশ্চিত করা।


আরো সংবাদ



premium cement