২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি

আল্লাহপ্রেমের অনুপম নিদর্শন

-

মুসলিম উম্মাহর জন্য ঈদুল আজহা আর কোরবানি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আগামীকাল সোমবার আমাদের দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা পালন করা হবে। আল্লাহপ্রেমের পরম নিদর্শন উপলক্ষে বায়তুল্লাহর হজ আর তাঁর রাহে নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু বিলিয়ে দেয়ার বিধান হিসেবে কোরবানি বিশ্বাসীর জীবনের অন্যতম প্রধান দিক। মহান আল্লাহ দুনিয়ায় মানবজাতিকে পাঠিয়েছেন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে। ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবনে মানুষকে এক ও অদ্বিতীয় স্রষ্টার অধীনতা-বাধ্যতা স্বীকার করে তাঁর বিধান অনুসারে চলতে হবে। এভাবে পরকালীন স্থায়ী জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করবে। কুরআন মজিদে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য।
‘মুসলিম’ অর্থ আল্লাহতে সমর্পিত হওয়া। এর অর্থ হলো স্রষ্টার নাজিল করা আয়াতের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ। আল্লাহতে বিশ্বাসীর জীবনের অন্যতম প্রধান ইবাদত হচ্ছে বায়তুল্লাহর হজ। স্রষ্টার প্রতি বান্দার আনুগত্য আর অনুরাগের যে ক্রমোন্নতি অর্জিত হয়, এর পরম অভিব্যক্তি ঘটে হজে। তাই প্রত্যেক মুমিনের জীবনে অন্যতম আকাক্সিক্ষত বিষয় এটি। পৃথিবীর প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মুমিন বান্দারা সমবেত হন প্রাচীন নগরী মক্কায়। হজ আল্লাহপ্রেমে ব্যাকুল বান্দার আকুল অভিব্যক্তি। তাঁর সান্নিধ্যে উপনীত হওয়ার প্রচেষ্টা চলে সব ভূষণ ত্যাগের মাধ্যমে। ধনী-গরিব সবাই সাদাসিধা একই পোশাকে আল্লাহর ঘরের চার পাশে তাওয়াফ করে থাকেন। একই আদমের সন্তান হিসেবে তারা সাম্য ও মৈত্রীর যে নমুনা পেশ করেন, দুনিয়ায় তা অতুলনীয়। এ জন্য বায়তুল্লাহর হজ এক দিকে যেমন ইবাদত ও আধ্যাত্মিক সাধনার উচ্চ অবস্থান, তেমনি সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্বের উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত।
বায়তুল্লাহর হজের মাস জিলহজের সাথে রয়েছে আরেক ইবাদত। ৯ তারিখে আরাফায় অবস্থান আর ১০ তারিখে তাওয়াফে জিয়ারত হজের দু’টি প্রধান কর্তব্য। ১০ তারিখে হাজীদের জন্য আরো একটি অতি জরুরি করণীয় হচ্ছে, কোরবানি করা। যারা হজে যাননি, তাদেরও হাজীদের মতোই একই দিনে কোরবানি করতে হয়। কোরবানি হচ্ছে হজরত ইবরাহিম আ:-এর স্মারক। বস্তুত তাঁর অনুসরণে নিজের প্রিয় বস্তু আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার আহ্বান নিয়ে আগমন ঈদুল আজহার। মিল্লাতে মুসলিমার রূহানি পিতা হজরত ইবরাহিম আ: যেসব কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তার একটি হলোÑ প্রিয়তম সন্তানকে আল্লাহর রাহে কোরবানি করা। তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করেছিলেন এবং আল্লাহর নির্দেশ পালনে সব উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু মহান আল্লাহ চাইছিলেন তার আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার পরীক্ষা নিতে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ইবরাহিম, তুমি তো দেখছি স্বপ্নকেও বাস্তবায়ন করলে।’ বস্তুত আল্লাহ অশেষ করুণায় পুত্রের পরিবর্তে পশু কোরবানি কবুল করলেন ইবরাহিম আ: থেকে।
হজরত ইবরাহিম আ:-এর আদর্শ চিরস্মরণীয় করে রাখার ব্যবস্থা করলেন আল্লাহ। পরবর্তী মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহ পালনীয় সাব্যস্ত করলেন পশু কোরবানি দেয়াকে। কিন্তু নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা কামনা করা হয়েছে হজরত ইবরাহিম আ:-এর মতোই। পবিত্র কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘এসবের (পশু) গোশত কিংবা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।’ অর্থাৎ পশু কোরবানি করা হলেও এমন মনোভাব থাকতে হবে যে, সবচেয়ে প্রিয় বস্তু এমনকি প্রিয়জনকে আল্লাহর উদ্দেশে নিবেদন করতে প্রস্তুত থাকা চাই। তাহলেই কোরবানি সার্থক হবে।
নবী ইবরাহিম আ:-এর প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ও পর্যায়ে নিজের প্রাপ্য, বক্তব্য, অভিমত আর প্রস্তাবের প্রাধান্যের দাবি পরিহার করলেই তাঁর প্রকৃত অনুসরণ করা হয়। তেমনি অন্তরে পোষণ করতে হয় একাগ্রতা ও আল্লাহপ্রেমের ব্যাকুলতা। পার্থিব জীবনের প্রতি মোহ ও আকাক্সক্ষা যেন বদ্ধমূল না থাকে; বরং তা যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত আমানত হিসেবে বিবেচনা করে তার ইচ্ছা ও আদেশ অনুযায়ী ফেরত দেয়ার আগ্রহ পোষণ করা হয়, ঈদুল আজহা সে আহ্বান নিয়েই আগমন করে প্রতি বছর।


আরো সংবাদ



premium cement