০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


উপজেলা নির্বাচনে নানা অনিয়ম

নির্বাচনকে আস্থাযোগ্য স্থানে ফিরিয়ে আনতে হবে

-

শেষ হলো ৪৮৬টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। না, সুষ্ঠুভাবে শেষ হতে পারেনি এ নির্বাচন। সন্ত্রাস, ভোট কারচুপি, প্রার্থীর বাড়িতে হামলা, ইভিএম মেশিন লুট ও কম ভোটার উপস্থিতির মধ্য দিয়ে বিতর্কিত হয়ে থাকল এবারের উপজেলা নির্বাচন। এ নির্বাচনে ৪৮৬টি উপজেলার ১১২টিতে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। সর্বশেষ গতকাল পঞ্চম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০টি উপজেলায়। পঞ্চম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এসে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) লুট হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী লাঞ্ছিত হয়েছেন। অনিয়মের অভিযোগে গাজীপুর সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জন করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। খুলনার ডুমুরিয়ায় নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের সময় এক পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে পিস্তল ও গুলি খোয়া গেছে। এর আগের চার দফা উপজেলা নির্বাচনে একইভাবে নানা অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, ভোট কারচুপি, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, সরকারি দলের প্রার্থীর প্রতি পুলিশের পক্ষপাতদুষ্টতাসহ আরো বহু অভিযোগের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
এবারের উপজেলা নির্বাচন সরকারবিরোধী দলগুলো বর্জন করার ফলে মূলত এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় সরকারি দল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও এর বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে। এরপরও নির্বাচনটি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এ নির্বাচনেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলেছে এবং অনেক প্রার্থীর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দলগুলোসহ, বাম দলগুলো ও ইসলামপন্থী দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করে। বলা চলে, সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনের বাইরে থেকেছে। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে সরকারি দলের ব্যাপক ভোট কারচুপির প্রতিবাদে সরকারবিরোধী দলগুলো এবারের উপজেলা নির্বাচন বয়কট করে। গত ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে মধ্যরাতে সরকারদলীয় প্রার্থীদের লোকজন ব্যালটবাক্স ভর্তি করে ভোট কারচুপির এক অভাবনীয় নজির স্থাপন করে। এতে তাদের সহযোগিতা করে সরকারের প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী। বিশ্বের কোনো দেশ এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু নির্বাচন বলে স্বীকৃতি জানায়নি বরং এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দাবি করেছে নতুন নির্বাচন।
মোট কথা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচনের ভিত ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন কেউ আর বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে মেনে নিতে নারাজ। নির্বাচন কমিশনের ওপর সাধারণ মানুষের বিন্দুমাত্র আস্থা নেই। একইভাবে আস্থা নেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর। এটি আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য একটি মহাক্ষত। আমাদের উচিত, এই মহাক্ষত থেকে উত্তরণ ঘটানো। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন সরকারপক্ষের আন্তরিক প্রতিশ্রুতি। নয়তো তা থেকে উত্তরণ ঘটানো কখনোই সম্ভব হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement