০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সাতক্ষীরায় চিংড়ি চাষে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি

যেকোনো মূল্যে মড়ক ঠেকাতে হবে

-

চলতি মওসুমে সাতক্ষীরা অঞ্চলে ভাইরাসে চিংড়ি আক্রান্ত হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট চাষিদের পথে বসার উপক্রম। ‘সাদা সোনা’ খ্যাত চিংড়ি বাংলাদেশের জন্য বিপুল সম্ভাবনাময় খাত এবং এ দেশের অন্যতম প্রধান রফতানিপণ্য। যে চিংড়ি বিদেশে বিক্রি করে আমরা কোটি কোটি টাকা আয় করছি, রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাবে এবং দাম পড়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন এর উৎপাদকেরা। একটি জাতীয় দৈনিক তাদের প্রতিবেদনে আরো জানায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশেষ করে সাতক্ষীরা জেলার বহু চিংড়িচাষি পুঁজি হারিয়ে হয়ে পড়েছেন সর্বস্বান্ত। ভাইরাসের শিকার হয়ে ইতোমধ্যে যত চিংড়ি মরে গেছে, এর মূল্য ১০০ কোটি টাকারও বেশি।
মৎস্য দফতর এই ভাইরাসের কারণ হিসেবে চিংড়ি ঘেরে পানির ঘাটতি, পরিবেশসম্মত ঘের না থাকা এবং জীবাণুযুক্ত রেণুপোনাকে দায়ী করেছে। একই সূত্রে জানা গেছে, এবার সাতক্ষীরা জেলায় ৪৯ হাজার ১৬৩টি নিবন্ধিত ঘেরে চাষ করা হয়েছে রফতানির উপযোগী বাগদা চিংড়ি। এর উৎপাদন টার্গেট ২৭ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু মড়কের দরুন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ তো দূরের কথা, চিংড়ি চাষের ভবিষ্যৎ নিয়ে চাষি থেকে কর্তৃপক্ষ সবাই উদ্বিগ্ন।
পত্রিকার প্রতিবেদনে পরিস্থিতি বুঝানোর জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে আশাশুনি উপজেলার একজন চিংড়িচাষির বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। তিনি এই মওসুমে আড়াই হাজার বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ির চাষ করেছেন। কিন্তু এবার তাকে দুই কোটি টাকার মতো লোকসান গুনতে হয়েছে। গত এক দশকেও এমন অবস্থা তিনি দেখেননি। বাংলাদেশ চিংড়িচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানালেন, ভাইরাসের প্রকোপে ঘেরের বেশির ভাগ চিংড়ি মরে যাওয়ার ফলে তিনি আরো প্রায় ১০০ বিঘা পুকুরে বাগদা চাষ করেছেন। মড়কে এই চিংড়িও শেষ হয়ে গেছে। তার ক্ষতির পরিমাণ এক কোটি টাকা। জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির প্রধান জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ইদানীং চিংড়ির চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে চাষিরা আগের মতো দাম পাচ্ছেন না। দুই মাস আগেও চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা কেজি দরে। তার দাম এখন মাত্র ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। এ অবস্থায় উৎপাদক ও ব্যবসায়ী উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার মতে, চিংড়ি ঘেরে এত রোগজীবাণুর সংক্রমণের কারণ হলো, বেশির ভাগ ঘেরে প্রয়োজনমাফিক তিন ফুট পানি থাকে না। পরিবেশ স্বাস্থ্যকর নয় এবং ঘেরের তলা ভেজা থেকে যায়। তদুপরি রেণুপোনা জীবাণুমুক্ত নয়। কর্তৃপক্ষ এ সমস্যা মোকাবেলায় চাষিদের দরকার মতো পরামর্শ দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে চিংড়ির অবদান বিরাট। গত কয়েক দশকে গার্মেন্টের সাথে হিমায়িত মৎস্য শিল্পপণ্যও দেশের জন্য বিপুল অর্থ আয় করছে বিভিন্ন দেশে রফতানির মাধ্যমে। হিমায়িত মৎস্যজাত পণ্যের একটা বড় অংশই চিংড়ি। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা সাতক্ষীরা ও কক্সবাজারের কয়েক হাজার মানুষ চিংড়ি চাষের সাথে জড়িত। কিন্তু আলোচ্য ভাইরাসসমেত বিভিন্ন রোগব্যাধি সময়মতো নির্মূল করা না গেলে মড়কের কবলে পড়ে চিংড়ি শিল্প নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। এটা হবে আমাদের দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তাই অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে চিংড়ি চাষ এবং সংশ্লিষ্ট চাষিদের বাঁচানোর বিকল্প নেই।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement