২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব বেশি

শিক্ষার লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট নয় কেন?

-

শিক্ষা নিয়ে অনেক বড় বড় বুলি আওড়ানো হয়। ব্যক্তি নিজেকে বদলাবে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রকে বদলাবে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে। দেখা যাচ্ছে, আমাদের শিক্ষা এটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ দেশে শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ব্যক্তিগত অর্জন। আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে, নিজের বেকারত্ব ঘোচানো। একজন শিক্ষার্থী একটি চাকরিকে সামনে রেখে পড়ালেখা নিয়ে অগ্রসর হয়। দেশে ব্যবসায় শিক্ষার ব্যাপক চাহিদা ও প্রসার এ প্রবণতার কারণেই হয়েছে। কিন্তু এমন প্রবণতা শিক্ষিতদের কর্মসংস্থান করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষা এখন আর বাংলাদেশে কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। তরুণেরা যত বেশি পড়ালেখা করছেন, তাদের বেকার থাকার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে তত বেশি। এ কারণে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি।
‘এশিয়া-প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল আউটলুক-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আইএলও ২০০০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলের ২৮টি দেশের বেকারত্বের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছে। বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এখানে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয়। আমাদের তরুণদের ব্যাপারে আরো হতাশাজনক খবর হচ্ছে, তাদের বড় একটি অংশই নিষ্ক্রিয়। দেশের ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ কোনো ধরনের শিক্ষায় যুক্ত নয়, প্রশিক্ষণ নিচ্ছে না, আবার কাজও খুঁজছে না। মেয়েদের মধ্যে এই হার আরো বেশি, প্রায় ৪৫ শতাংশ। সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর গত এপ্রিলে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। আগের বছরের তুলনায় এই সংখ্যা ৮৭ হাজার বেশি। ওই সময় স্নাতক ডিগ্রি নিয়েও কমপক্ষে সাড়ে ৪০ হাজার তরুণ-তরুণী বেকার ছিলেন। একই সময় উচ্চমাধ্যমিক পাস করা বেকার ছয় লাখ ৩৮ হাজার। আইএলও’র মতে, ২০০০ সালে বাংলাদেশে সার্বিক বেকারত্বের হার ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১০ সালে তা ৩ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়ায়। আইএলও’র মানদণ্ড অনুযায়ী, সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলেই একজন ব্যক্তি আর বেকারের তালিকায় থাকে না। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর পার হয়নি, এমন মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম, ১ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রাথমিক পর্যায় শেষ করা মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। যারা মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষিত, তাদের মধ্যে বেকারের হার ৮ শতাংশ। আর উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশে যার শিক্ষা যত বেশি, তার বেকার থাকার আশঙ্কাও তত বেশি।
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে উচ্চশিক্ষার প্রবণতা বেড়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই প্রবণতার কারণ হলো, ভালো কর্মসংস্থান। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, যারা শিক্ষা একেবারে গ্রহণ করেইনি তাদের মধ্যেই বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম। অন্য দিকে, ভালো কর্মসংস্থানের আশায় বেশি ডিগ্রি যারা নিয়েছে, তাদের মধ্যে বেকার হয়ে থাকা মানুষের হার বেশি। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা মানুষের কর্মসংস্থান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে শিক্ষার যে মূল লক্ষ্য, সেটিও অর্জিত হচ্ছে না। উন্নত মূল্যবোধ, নিজেকে বদলে দেয়া, সমাজ ও রাষ্ট্রকে বদলে দেয়া; তাই এখন থেকেই সেগুলোও হচ্ছে না। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা নিয়ে গভীরভাবে ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। জাতীয় পর্যায় থেকে তা শুরু হওয়া প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষা থেকে আসলে আমরা কী অর্জন করতে চাই? সর্বাগ্রে, শিক্ষার লক্ষ্য স্থির করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল