২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কর্মকর্তার স্ত্রী আহত, ইটের আঘাতে ভেঙ্গে গেছে বাঁধানো প্রধানমন্ত্রীর ছবির গ্লাস

ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তার বাসায় দালালচক্রের হামলা!

ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তার বাসায় দালালচক্রের হামলা! - ছবি : সংগৃহীত

দালালচক্রের থাবায় হুমকীর মুখে ব্রুনাই দারুসসালামে বাংলাদেশের শ্রমবাজার। সংসারে সুখ আনতে যাওয়া বাংলাদেশীরা চক্রের খপ্পড়ে পড়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাছেন সেখানে। স্থানীয় কিছু প্রতারক চক্রের সহযোগিতায় এরা এতটাই শক্তিশালী যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও হিমশিম খেতে হয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের।

সম্প্রতি দালালচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সেদেশের বাংলাদেশ হাইকমিশন। গত সোমবার বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম উইংয়ে নিযুক্ত অনুবাদক মো. আবু নাঈমের বাসাতে হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। ওই সময় ছোরা এলোপাতারি ইট ও পাথরে ওই কর্মকর্তার স্ত্রী আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে ভেঙ্গে গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যের গ্রুপ ছবির বাঁধাই করা গ্লাসও (ফটোফ্রেম)।

ইটের আঘাতে ভেঙ্গে গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যের গ্রুপ ছবির বাঁধাই করা গ্লাসও (ফটোফ্রেম)



এ ব্যাপারে আবু নাঈম মঙ্গলবার ব্রুনাই দারুসসালামের বন্দর থানায় একটি মামলা করেছেন। অন্যদিকে নিজে ও তার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে বুধবার ব্রুনাই দারুসসালামস্থ বাংলাদেশের হাইকমিশনার হাইকমিশনার এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) মাহমুদ হোসেনের কাছে লিখিত আবেদনও করেছেন।

তার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘...বিগত দুই বছর যাবত শ্রম উইংয়ে অনুবাদক হিসেবে কর্মরত আছি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর (সোমবার) আনুমানিক রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে কে বা কারা আমার বাসার জানালা দিয়ে এলোপাতারি ইট ও পাথর ছুড়ে মারে। প্রথম একটি ইট আমার স্ত্রীর পায়ে লাগে এবং পরবর্তী দু’টি পাথরের আঘাতে টেবিলের উপর রাখা একটি ফটোফ্রেমের গ্লাস ও একটি ক্রোরিজ মগ ভেঙ্গে যায়। প্রবল বৃষ্টি ও প্রচণ্ড অন্ধকার থাকার কারণে কাউকে দেখা যায়নি। তবে আমি আশঙ্কা করি যে ব্রুনাইতে অবস্থানরত দালালদের বিরুদ্ধে শ্রম উইং-এর চলমান অভিযানের কারণেই এ হামলা করা হয়েছে। হামলার নেপথ্যে সক্রিয় দালালচক্রের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে আমার সন্দেহ। যাদের মধ্যে মুন্না, মেহেদী, ইসমাঈল, জসিম ও ফয়সাল অন্যতম।এহেন জরুরি পরিস্থিতিতে আমি ও আমার পরিবার ভীষণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এমতাবস্থায়, আমি ও আমার পরিবারের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে মর্জি হয়।’

বাংলাদেশ হাইকমিশনসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ ব্রুনাই দারুসালাম বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার। বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, দেশটিতে প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছেন। তবে এ সংখ্যা আরো বেশি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক হিসেবে গিয়ে ব্রুনাইতে নামে-বেনামে কোম্পানি খুলে বসেছে এক শ্রেণীর অসাধু চক্র। এ সংখ্যা তিন হাজারের মতো হবে। যারা স্থানীয় (বিশেষ করে চাইনিজ) কিছু অসৎ লোকের সাথে আঁতাত করে সাবকন্ট্রাক্টে শ্রমিক ভিসা বের করে বাংলাদেশ থেকে ভালো বেতনের লোভ দেখিয়ে লোক নিয়ে যাচ্ছে। তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকায় ভালো কাজ ও বেতনের কথা বলে শ্রমিক নিয়ে গেলেও তাদের বেশির ভাগই কাজ-কর্ম পাচ্ছে না। নিজের কোম্পানির নামে শ্রমিক নিয়ে অন্যের কাছে ভাড়া দিচ্ছে এই চক্র। দূতাবাসের সত্যায়ন ছাড়া শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ না থাকলেও ব্রুনাই এবং বাংলাদেশে গড়ে ওঠা বাংলাদেশী দালালচক্র ‘বিমানবন্দর কন্ট্রাক্ট’করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাইকশিনের শ্রম উইংয়ের কর্মকর্তাদের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে বিএমইটির স্মার্টকার্ড তৈরি করে শ্রমিক ব্রুনাই নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়গুলো দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ব্রুনাইয়ের লেবার ডিপার্টমেন্টেও অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু, তাদের থামাতে পারছেনা কেউ।

প্রতারণার শিকার শ্রমিকরা দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের সহযোগিতা চাইলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গিয়েও নানা হুমকি-ধামকির শিকার হচ্ছেন কর্মকর্তারা। স্থানীয়দের নিয়ে বাংলাদেশী দালালচক্র এতটা শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দূতাবাস তাদের সাথে পেরে উঠছে না।

নাম না প্রকাশে ইচ্ছুক ব্রুনাইস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, দুই দফায় ১৭-১৮ জন দালাল বা প্রতারকের পাসপোর্ট ও ভিসা বাতিলের জন্য বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ব্রুনাইয়ের লেবার ডিপার্টমেন্টে চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রথম দফায় পাঠানো ৫জনের পাসপোর্ট বাতিল করেছে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।বাকীদের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, দালালচক্র এতোটাই বেপরোয়া যে, কোনো শ্রমিক দূতাবাসে অভিযোগ দিলে তদন্তে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ প্রয়োগ করে, এমনকী জীবননাশেরও হুমকী দেয়। সম্প্রতি কিছু দালালের বিরুদ্ধে দূতাবাস অ্যাকশনে গিয়েছে। ফলে তারা আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি সময় লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, দূতাবাসের কোনো কর্মকর্তা কোথাও গেলে তারাও গাড়ি নিয়ে আমাদের ফলো করে এবং গাড়ি ধাক্কা দেয়ারও চেষ্টা করে।

এ বিষয়ে কথা বলতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) মাহমুদ হোসেনকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে, ব্রুনাইস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে নিযুক্ত প্রথম সচিব (শ্রম) জিলাল হোসেন, হাইকমিশনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কিছু দালাল বা দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদেরই কেউ শ্রম উইংয়ের অনুবাদক মো. আবু নাঈমের বাসায় হামলা করতে পারে।ভুক্তভোগীও এটা জানিয়েছন।তিনি হাইকমিশনার বরাবর নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন এবং স্থানীয় থানায়ও মামলা করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
জামিন নামঞ্জুর, কারাগার যুবদল সভাপতি সালাউদ্দিন টুকু তীব্র তাপপ্রবাহ : স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখতে নির্দেশ হাইকোর্টের মুরাদনগরে গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ তীব্র তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, পুড়ছে ক্ষেতের ফসল স্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ১১৫৫ টাকা গাজায় গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানালো উত্তর আয়ারল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার হোসেনপুরে চাঞ্চল্যকর সবুজ মিয়ার হত্যায় ভাতিজা গ্রেফতার দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় সীমান্তে গুলির শব্দ নেই, তবুও আতঙ্কে স্থানীয়রা রাঙ্গাবালীর খালে পাওয়া টর্পেডো উদ্ধার করেছে নৌ-বাহিনী লক্ষ্মীপুরে বিজয়ী ও পরাজিত উভয় চেয়ারম্যান প্রার্থী আটক

সকল