২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিশ্বখ্যাত মহাকাব্য ও মহাকবি

-

ডিভাইন কমেডিকে ইতালিয়ানরা তাদের ভাষায় বলে, দ্য দিভাইনা কোম্মেদিয়া। এই মহাকাব্যটি মহাকবি দান্তে আলিঘিয়েরি রচনা শুরু করেন ১৩০৮ সালে এবং শেষ করেন ১৩২০ সালে তার মৃত্যুর ঠিক এক বছর আগে। অর্থাৎ এই মহাকাব্যটি রচনার জন্য লেগে যায় প্রায় ১২টি বছর। তিনি মারা যান ১৩২১ সালে। এর ভাষা মূলত লাতিন। এটি একেবারে ইতালির প্রাচীন ভাষায় রচিত। শুধু তাই নয়, দান্তে এই মহাকাব্যে প্রচুর পরিমাণে ইতালির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যেরও স্থানীয় প্রচুর শব্দ ব্যবহার করেছেন। যে কারণে ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পাঠকের কাছে এটি বেশ দুরূহ বলে মনে হয়।
মূল কাহিনী : দান্তের মহাকাব্য দ্য ডিভাইন কমেডির কাব্য শুরুই হয়েছে গুড ফ্রাইডের আগের রাতের বেলার একটি বিবরণ দিয়ে। দান্তের বয়স তখন মাত্র ৩৫ বছর (১৩০০ সাল)। এটিকে বাইবেলের মতে জীবনের মধ্য ভাগ বলা হয়, দান্তে সেই বিশ্বাস নিয়েই এই কাহিনী নির্মাণে ব্রত হন।
তিনি ডিভাইন কমেডিকে সাজিয়েছেন খ্রিষ্টধর্মের অবতার প্রভু যিশু খ্রিষ্টের কথা দিয়ে, নানা বাণী দিয়ে। মূলত ডিভাইন কমেডির কাহিনীকে, বাইবেলে উল্লিখিত পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাসের আদম-হওয়ার গল্পের ছায়া অবলম্বনেই বানানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। মানুষের পাপের কথা টেনেছেন ঠিক পবিত্র বাইবেলের মতো কোরেই বারবার।
মহাকাব্যের চাহিদা অনুসারে সাহিত্যের ধ্রুপদী বিষয়গুলো ব্যবহার না করে, আরো বেশি করে তৈরি করা হয়েছে খ্রিষ্টধর্মের নানা কাহিনী এবং ভালো দিকগুলোর মনোমুগ্ধকর বর্ণনা। শুধু তাই নয়, দান্তে স্বর্গ এবং নরকের নানা বর্ণনায় যেমন ইসলামিক বইপত্রের ওপর নির্ভর করেছেন, তেমন একেবারে সরাসরি বাইবেলে বর্ণিত স্বর্গ এবং নরকের বর্ণনা এনেছেন প্রতি পদে পদে। পাশপাশি তৎকালীন নানা ধরনের ঘটে যাওয়া অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী বিষয়গুলোও এনেছেন তার দ্য ডিভাইন কমেডিতে।
যিশুখ্রিষ্ট, বাইবেল এবং ঈশ্বরের ওপর তার ছিল প্রবল বিশ্বাস। তাই তার রচিত মহাকাব্য দ্য ডিভাইন কমেডিতে সেগুলোই চলে এসেছে বারবার। দান্তে গির্জার বেশ কজন বড় বড় সেইন্টদের সঙ্গে দেখা করেন, এদের মধ্যে থমাস একুইনাস, বোনাভেনচার, সেইন্ট পিটার এবং সেইন্ট জনের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা যায়। যে কারণে দান্তের প্যারাদিসো পর্বটি ইনফার্নো বা পুরগেটোরিও পর্বের চেয়ে বেশি জীবন্ত ও শিল্পসম্মত বলে ধরে নেয়া যায়। দান্তে তার ডিভাইন কমেডি শেষ করেছেন যিশুখ্রিষ্টের পবিত্রতার কথা বলে। তিনি জয়গান গেয়েছেন যিশুর পবিত্র জন্মের। তার মানবতার এবং যিশুতেই তার সব ভালোবাসা এবং নশ্বর জীবনকে সঁপে দেয়ার কথাও বলেছেন তিনি বারবার।
১৯১৯ সালে, মিগুয়েল আসিন প্যালাসিওস নামক একজন স্পেনীয় দান্তে গবেষক এবং খ্রিষ্টিয়ান ধর্মযাজক তার লা এস্কাতোলোজিয়া মুসুলমানা এন লা ডিভাইন কমেডিয়া গ্রন্থে লিখেছেন “দান্তের এই ডিভাইন কমেডি গ্রন্থটিতে, কেন জানি না, নানা ধরনের মহামূল্যবান সব ইসলামী দর্শনের কথা, অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে তার রচনার ছত্রে ছত্রে। প্যালাসিয়াস আরো লিখেছেন যে, দান্তের ডিভাইন কমেডিতে উল্লিখিত মৃত্যুর পরের জীবনের আধ্যাত্মিক ধারণার সবটুকু তিনি গ্রহণ করেছেন, ইবনে আরাবিয়া এবং ইসরা ও মহানবীর মিরাজে গমন, অর্থাৎ মহানবীর স্বর্গে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করার সেই যাত্রা থেকে। এর পর পরেই তিনি লিখেছেন, যদিও দান্তে হাদিস এবং কিতাব আল মিরাজ (লাইবার স্কেলাই ম্যাখোমিটি যে গ্রন্থটি ১২৬৪ সালে একটু সংক্ষিপ্ত আকারেই বলা যায় প্রকাশিত হয়েছিল ল্যাটিন ভাষায়, যার ইংরেজি নাম হচ্ছেÑ দ্য বুক অব মুহাম্মদ’স ল্যাডার) সেখান থেকেও অনেক ধারণা গ্রহণ করেছেন, কিন্তু সেগুলো হাদিসের মতো সুন্দর করে তিনি লিখতে পারেননি। বিশেষ করে দান্তের ডিভাইন কমেডির প্যারাদিসো অর্থাৎ প্যারাডাইস পর্বের সপ্তম খণ্ডটি পাঠ করলে, তা বেশ ভালো করেই বোঝা যায়।
দান্তের ডিভাইন কমেডি’তে বেশ কিছু বিষয় আছে, যেগুলো সরাসরি অতি মানবিক বা দৈবিক ঘটনার বলে ধরে নেয়া যায়। যেমন আল-মারি’র লিখিত গ্রন্থ রিসালাত আল গুফরান এর ক্ষমা বিষয়ক রচনার কথা বলা যায়। দান্তে তার থেকে অসাবধানতার ছলেই হোক, আর সচেতনভাবেই হোক, ক্ষমার বিষয়টি গ্রহণ করেছেন এবং তার ডিভাইন কমেডির সাথে হুবহু মিলও রয়েছে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বর্গ ও নরক সম্পর্কে যে সব কথা দান্তে তার ডিভাইন কমেডিতে বলেছেন, তার সবটুকুই কিতাব আর মিরাজ নামক গ্রন্থ থেকে নেয়া। ডিভাইন কমেডি’তে অবশ্য স্বর্গ নরকের এই বর্ণনা অল্প পরিমাণ আছে, তবে তা সম্পূর্ণভাবে এই সব গ্রন্থ থেকেই নেয়া। এখন প্রশ্ন হচ্ছেÑ দান্তে ইসলামিক দর্শনের এসব গ্রন্থ পেলেন কিভাবে বা কেনই বা এর প্রতি এত অনুরক্ত হয়ে উঠেছিলেন? এই প্রশ্নের জবাবে বলা যায় যে, দান্তে ইওরোপে বসবাসকালে ইসলামিক জীবন এবং নানা ধরনের দর্শনের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন। তাই তার ছাপ এসে পড়ে তার রচনায়।
মহাকবি দান্তে তার প্যারাদিসোর দশম পর্ব রচনাকালে দার্শনিক অ্যারিস্টটল সম্পর্কে আরবী ভাষায় লিখিত, আরবীয় পণ্ডিতদের মতামত পড়েন এবং প্রভাবিত হন হাদিস কুরআন দ্বারা। এর সাথে অবশ্য প্রাচীন খ্রিষ্টতত্ত্বের যথেষ্ট মিল রয়েছে। যেখানে আধুনিক সুফি তত্ত্বের কথা উঠে এসেছে। যেমন: ইবন আরাবিয়া, তৎকালীন আরবীয় একজন বিজ্ঞ সুফি। তার বর্ণিত মুসলিম দর্শনে দান্তে প্রভাবিত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি। দান্তেকে আরবীয় সুফি পণ্ডিতরা ইসলামী দর্শনের উপযুক্ত ব্যবহারের অত্যন্ত সম্মানের সাথে যে স্বীকারোক্তি দান করেছেন, জগৎবিখ্যাত দার্শনিক ফ্রেডরিক কোপেলস্টোন ১৯৫০ সালে বলেছেন, তা যথাযথ যুক্তি সঙ্গত। যদিও এই ইতিহাস সর্ব্বৈব সত্য, কিন্তু কিছু কিছু দুর্জন তার নানা ধরনের ব্যাখ্যা তুললেন। তাদের প্রশ্ন হলো, দান্তে আরবি বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো ভাষাই জানতেন না। আবার যে বইগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলো সবই আরবি ভাষায় লিখিত। তো তিনি পড়ে বুঝলেন কিভাবে? তিনি তো আরবি জানতেন না।
তবে দান্তে গবেষক গাব্রিয়েলির মতে, এমনও হতে পারে যে, দান্তে শুধুমাত্র ইলামিক দর্শন বোঝার জন্যেই লাতিন ভাষায় অনূদিত এই বইগুলো পড়েছিলেন! এবং পড়েছিলেন বলেই তিনি তার ডিভাইন কমেডি’তে ব্যবহার করতে পেরেছিলেন বেশ সার্থকভাবে। তার প্রমানও মেলে দান্তের জীবন থেকেই। দান্তে যখন দশম আলফানসোর সভায় সভাসদ ছিলেন, তখন তার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল একজন তুসকান দর্শন শাস্ত্র বেত্তার। তার নাম ছিল মারিয়া কোর্তি, তিনি কিতাব আল মিরাজকে আরবি থেকে লাতিন ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। কোর্তিও ঠিক এই কথাটাই বলেছেন, দান্তে সেই বই থেকেই মূলত, মুসলিম সুফি বাদের সব কিছু গ্রহণ করেছেন। অন্যদিকে রেনে গুইনোন একজন পণ্ডিত আবার সে কথাকে অস্বীকার করেছেন। তবে এটা সত্য যে, দান্তে তার লেখায় প্রচুর পরিমাণে ইসলামিক দর্শন এবং হাদিস ও কুরআনের নানা কাহিনী ব্যবহার করেছেন। এ কথা এখন বিশ্বব্যাপী সব পণ্ডিতরাই মেনে নেন।
মহাকবি দান্তের জন্ম ১২৬৫ সালে, রিপাবলিক অব ফ্লোরেন্সের খোদ ফ্লোরেন্স শহরে। মারা যান ১৩ বা ১৪ সেপ্টেম্বর ১৩২১ সালে প্যাপাল অঙ্গরাজ্যের র্যাভেন্নায় মাত্র ৫৬ বছর বয়সে। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিক এবং রাজনৈতিক উপদেষ্টাও বটে। তিনি ছিলেন একজন খাঁটি ইতালিয়ান। তিনি ইতালির সাহিত্যের মধ্যযুগের কবি ছিলেন। তিনি ইতালির বিখ্যাত সাহিত্য আন্দোলন দোলসি স্তিল নোভোর প্রবক্তা। অসম্ভব জেদি এবং একরোখা প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। বিশ্বসাহিত্যে তার অমর সৃষ্টি দ্য ডিভাইন কমেডি। যে লেখা লিখে তিনি আজ সারা বিশ্বে মহাকবি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। ইতালির সাহিত্যের মধ্যযুগের একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং উঁচু মানের মহাকবি ছিলেন দান্তে আলিঘিয়েরি। যার সমতুল্য লেখক বা কবি বোধ করি আজো ইতালির সাহিত্য জগতে আসেননি। তাকে রেনেসাঁর পূর্ব সময়ের কবিও বলা হয়। তার রচিত মহাকাব্য ডিভাইন কমেডি ইতালির সাহিত্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যের সম্পদ বলে বিবেচনা করা হয়। মধ্যযুগের পরবর্তী ইতালীয় সাহিত্যে, বেশির ভাগ কাব্যই রচিত হয় লাতিন ভাষায়। যেগুলো কেবল শিক্ষিত সম্প্রদায়ের পাঠকদের জন্যই রচিত হত। তবু দান্তে কিন্তু দেশীয় ভাষা ব্যবহারে ছিলেন তৎপর। এমনকি তিনি সাহিত্যে দেশীয় শব্দ ব্যবহারের পক্ষে কথাও বলেছেন।
দান্তেকে এক কথায় ইতালীয়ান ভাষার জনক বলা হয়। শুধু তাই নয়, তাকে পশ্চিমা সভ্যতার একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখক বলে বিবেচনা করা হয়। ইতালীতে তাকে প্রায়ই ‘ইল সোমো পোয়েতো’ অর্থাৎ মহান কবি বল হয়। ‘ইল পেয়েতো’ অর্থাৎ মহান কবি। তাই পের্টাক এবং বোকাচ্চিও, এই তিনজনকে একত্রে ‘তিনটি ঝর্ণা বা তিনটি মুকুট’ বলা হয়। বর্তমানে যে এলাকাটি রিপাবলিক অব ফ্লোরেন্স হিসেবে পরিচিত, তার পূর্ব নাম হচ্ছে- ফ্লোরেন্স, মহাকবি দান্তে, এই শহরেই জন্মেছিলেন।
মহাকবি দান্তের মায়ের নাম ছিল বেল্লা। সম্ভবত : তিনি ইতালির বিখ্যাত বংশ আবাতি পরিবারের বংশধর ছিলেন। দান্তের যখন মাত্র দশ বছর বয়স তখনই তার মা মারা যান এবং তার পিতা আলিঘিয়েরি অল্পদিনের মধ্যে পুনরায় লাপা দি সিয়ারিসিয়ানো সিয়াউ লুফফি নামক এক মহিলাকে বিবাহ করেন।
দান্তের যখন মাত্র দশ বছর বয়স তখনই তার মা মারা যান এবং তার পিতা আলিঘিয়েরি অল্পদিনের মধ্যে পুনরায় লাপা ডি সিয়ারিসিয়ানো সিয়াউ লুফফি নামক এক মহিলাকে বিবাহ করেন। অবশ্য তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করেছিলেন কি না, এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে দান্তের যে একজন সৎভাই ফ্রানসেসকো এবং সৎবোন টানা (গাইটানা) ছিল, এটা নিশ্চিত। দান্তের যখন বারো বছর বয়স, তখন তিনি জেম্মা ডি মেনিট্টো ডোনি, নামের এক কন্যাকে বিবাহের জন্য প্রতীজ্ঞাবদ্ধ হয়ে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মেনিট্টো ডোনাটি নামক এক সম্ভ্রান্ত মহিলার কন্যা, যিনি সেই আমলের ক্ষমতাধর ডোনাটি পরিবারের সদস্য ছিলেন। এখনকার দিনে এটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, সেই আমলে এই অল্প বয়সেই বিবাহের রেওয়াজ ছিল। তাই তিনি এই কাজটি করেছিলেন। অবশ্য তিনি রাজার একজন এশবজন আইনকে সামনে রেখেই তিনি এই কাজটি করেছিলেন।
কিন্তু কি কারণে তা জানা যায় না, দান্তে হঠাৎ করেই বিয়াত্রিসে পোর্টিনারি বা বাইসি নামক এক নারীর প্রেমে পড়ে গেলেন। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার এই নারীর সাথে যখন দান্তের প্রথম পরিচয় ঘটে তখন তার বয়স ছিল মাত্র নয়। জেম্মাকে বিবাহের ঠিক পরের বছরেই বিয়াট্রিসেকে নিয়ে তিনি বিবাদে পড়ে গেলেন। এই কবি দান্তে তার বহু সনেটে বিয়াট্রিসের কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু কোথাও জেম্মার কথা তিনি বলেননি। দান্তের সঠিক বিবাহের দিন আজো জানা যায়নি। তবে সঠিক তথ্য হলো এই যে, তিনি ১৩০১ সালে যখন নির্বাসনে যান, তখন তার সাথে ছিল তিন সন্তান, যেমন পিয়েট্রো, জ্যাক্কো এবং অ্যান্টোনিও। দান্তে ১২৮৯ সালে ১১ জুন তারিখে, একটি মল্লযুদ্ধে জয়লাভ করেন। এই মল্লযুদ্ধের জয়ই তার জীবনে এনে দেয় এক মস্ত বড় সুযোগ। তিনি স¤্রাটের নজরে পড়ে যান এবং ফ্লোরেন্টাইনের সংসদীয় বিষয়ে জনসংযোগ দায়িত্বে ন্যস্ত হন। যেখানে তিনি নগরের ব্যবসায় এবং শিল্পের দিকটি বেশি কোরে দেখতে শুরু করলেন।
এর ফলে পরবর্তী বছরেই, সমাজে, রাজপরিবারে, এমনকি রাজদরবারেও ক্ষমতার কোনো এক গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য, দান্তেকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা শুরু হয়ে গেল। আলোচনার বিষয় বস্তু হচ্ছে, দান্তেকে কোনো ক্ষমতার কোনো একটি জায়গায় বসিয়ে দেয় হোক। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই যে, ১২৯৮ থেকে ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেল, যে কারণে তার নির্বাচনে অংশ নেয়াটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। জেম্মা এবং দান্তে পরিবারের বেশ কটি সন্তান ছিল। এদের মধ্যে জেকোপো, পিয়েত্রো, জিওভান্নি এবং আন্তোনিয়া প্রধান। যদিও ইতিহাসে আরো সন্তান-সন্তুতির সন্ধান মেলে, তবে তারা তার সঠিক সন্তান নয়। এই অ্যান্টোনিয়াই এক সময়ে সন্ন্যাসিনী হয়ে যান, তখন তার নাম হয় সিস্টার বিয়েত্রিচ।
শিক্ষা ও কাব্য রচনার ইতিহাস : দান্তের শিক্ষা জীবন সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। তবে তিনি বাড়িতে বা তার বাড়ির কাছে ফ্লোরেন্সের কোনো গির্জায় কিছু দিন পড়ালেখা করেছিলেন, এটা সত্য। ইতিহাস অনুসারে জানা যায় যে, তিনি তুসকান কবিতার বেশ বড় ভক্ত পাঠক ছিলেন এবং তিনি সেই ধারাতে কবিতা লেখাও শুরু করেছিলেন। এই ধারায় কাব্য রচনা করতে করতে এক সময়ে দান্তে বিশালাকার কাব্য রচনায় অনুরাগী হয়ে উঠলেন। এক সময়ে তিনি পরিচিত হলেন মহাকবি ওভিদ, সিসেরো এবং বিশেষ কোরে মহাকবি ভার্জিলের তিনি ভক্ত হয়ে উঠলেন সাঙ্ঘাতিকভাবে।
দান্তে বলেছিলেন যে, তিনি ফলকো পোর্টিনারির কন্যা, বিয়েত্রিচ পোর্টিনারিকে প্রথম দেখেন, তার মাত্র নয় বছর বয়সে। তিনি তখনই দাবি করেছিলেন যে, দান্তে বিয়েত্রিচের প্রথম চোখাচোখিতেই তার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সত্য কথা বলতে কি, দান্তে তার ১৮ বছর বয়সে বিয়েত্রিচকে একবার মাত্র পথের মধ্যে দেখে ছিলেন। কিন্তু তার সাথে কোনো ধরনের কথাও কোনোদিন সরাসরি হয়নি। সত্য কথা বলতে কি, বিয়েত্রিচের সাথে দান্তের ভালোভাবে কোনো দিন দেখাও হয়নি। ফলে হলো কি যে, দান্তে হয়ে উঠলেন মামুলি ভালোবাসার বিরুদ্ধে একজন স্বার্থক প্রেমিকের উদাহরণ পুরুষ। তিনি তার প্রেমকে শৈল্পিক বলে দাবিও করতেন। তিনি ধীরে ধীরে তার সমকালীন সব কবি এবং লেখকদের সাথে একটি সম্পর্ক গড়তে শুরু করলেন। বিয়েত্রিচের সাথে তার প্রেম শৈল্পিক ছিল বলে তিনি পরবর্তীকালে তার বহু কবিতায় বিয়েত্রিচের নাম উল্লেখ করেছেন। দান্তের কবিতায় বিয়েত্রিচ এসেছে নানা ভাবে। বিয়েত্রিচ ১২৯০ সালে যখন মৃত্যুবরণ করলেন, দান্তে তখন সাথে সাথে ল্যাটিন সাহিত্য থেকে যেন হঠাৎ করেই বিদায় নিলেন। তিনি নিজেকে সঁপে দিলেন ধর্ম দর্শন তত্ত্ব পাঠের দিকে। যে কারণে তিনি ভর্তি হলেন সান্তা মারিয়া নেভিল্লাতে।
নির্বাসন ও মৃত্যু : ১৩০১ সালের ১ নভেম্বর, ঠিক এই দিনে, ভেলোইসের চার্লস কালো গুয়েলফদের নিয়ে ফ্লোরেন্সে ঢুকে পড়লেন। যারা পরবর্তী ছয় দিনে জঘন্য ধরনের ধ্বংষ যজ্ঞ চালালো এবং তাদের শত্রুদেরকেও নির্বিচারে হত্যা করল। সঙ্গে সঙ্গে কালো গুয়েলফরা একটি নতুন সরকার গঠন কোরে ফেলল এবং কান্টে ডি গাব্বিওকে নগরের প্রধান বানানো হলো। ১৩০২ সালের মার্চে দান্তে সাদা গুয়েলফদের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে, সেরারডিনি পরিবারের সাথে দুই বছরের জন্য নির্বাসনে যাওয়ার শাস্তি পেলেন।
দান্তেকে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো অবশ্য ভিন্ন এক কারনে। দান্তে নাকি ১৩০০ সালে মাত্র দুই মাসের জন্যে ফ্লোরেন্সের নগর প্রধান থাকার সময়ে, কালো গুয়েলফদের সাথে বেশ বৈরী আচরণ করেছিলেন। কালোদের ব্যয়ভারের টাকা নিয়ে তিনি সাদাদের পেছনে খরচ করেছিলেন। দান্তে কিন্তু তার এই প্রিয় শহরে পরবর্তী দুই বছর অর্থাৎ ১৩০২ সাল পর্যন্ত ছিলেন। যেখানে স্বয়ং পোপ সব সময়েই দান্তোর বিরোধিতা করতেন। পোপ সার্বক্ষণিকভাবে দান্তের পেছনে কালো গুয়েলফদের লাগিয়ে রেখেছিলেন।
ফ্লোরেন্স যখন পুরোপুরি কালো গুয়েলফদের নিয়ন্ত্রণে, তখন দান্তেকে তারা পলাতক একজন জঘন্য অপরাধী বলে ঘোষণা করল। এমনকি তার বিরুদ্ধে জরিমিানা স্বরূপ এক বিশাল অঙ্কের টাকাও ধার্য করা হলো, কিন্তু দান্তে নিজে অপরাধী নয় বলে, তিনি জরিমানার সেই টাকা দেননি। যার জন্য কালো গুয়েলফরা পরবর্তীকালে ফ্লোরেন্সে অবস্থিত দান্তের যাবতীয় সম্পত্তি সব, লুট করে নিয়েছিল। বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে দান্তে ১৩০৮ থেকে ১৩১০ সালের মধ্যে, কোনো এক সময়ে প্যারিসেও বেড়াতে গিয়েছিলেন। আধুনিক দান্তে বিশারদদের ধারণা অবশ্য এটি। এই মতটি পাওয়া গেছে খোদ অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির দান্তে বিশারদদের কাছ থেকেই।
তবে একটি কথা এখানে না বললেই নয় যে, দান্তের জীবনে তিনি ভালো যা কিছু লিখেছেন, তার সবটাই হচ্ছে নির্বাসিত জীবনের সৃষ্টি। তিনি ওই সময়ে যেমন ছিলেন ফ্লোরেন্সোর স্থানীয় কুটিল ও জটিল রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত এবং বিকারগ্রস্ত, তেমন ছিলেন সাহিত্য চর্চায় মশগুল। অন্যদিকে দারিদ্র তখন তাকে কুরে কুরে খেয়েছে, যার শেষ নেই এমনভাবে। কিন্তু তিনি সেই সময়েই সৃষ্টি করেছেন তার সাহিত্যের সেরা সেরা সব রচনা। হ


আরো সংবাদ



premium cement
মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

সকল