২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাহিত্য কবিতাবলী

-

জাহাঙ্গীর ফিরোজ
ক্ষণিক আবাস

হাওরের জলমগ্ন ঘাসে
দমকা বাতাসে
একজোড়া গঙ্গাফড়িং
লেজে জল ছুঁয়ে দিয়ে উড়ে গিয়ে বসে
ঘন সবুজের দোল খাওয়া অবনত মাথার উপরে
জলে তার ছায়া
যেন কিশোরীর ঝাকড়া চুল ধরে আছে
একজোড়া ক্লিপ।

হাওরের জলমগ্ন ঘাসে
হেমন্তের ঠাণ্ডা বাতাসে
গিরিপর্বত পার হয়ে আসে
দলে দলে দলবেঁধে হাঁস
জলপিপি উড়ে যায় জ্যোৎস্নায়
এঁকে দিয়ে রাতের আকাশ।

হাওরের ডুব জলে ঘেঁচুবন
স্রোতে দোল খায় সারাক্ষণ
শুক্তি শামুক গুগলিÑ ছোট বড় মাছেদের ঘর
জলপিপি বালিহাঁস রাখে সে খবর।
তারা সব ডুবে ডুবে খুঁটে খায়
উঠে আসে শুষ্ক পালকে
কিভাবে যে মুছে ফেলে জল
দেখে বিস্মিত অভিভূত পাখিরা সকল।

হাওরের জলমগ্ন ঘাস
পরিযায়ী পাখিদের ক্ষণিক আবাস।

মাহফুজুর রহমান আখন্দ
স্বপ্নচাষি

স্বপ্ন দেখায় কবি
নিঃস্বার্থ স্বপ্নচাষির মতো সবুজের বীজ বুনে যায়
নতুন পৃথিবীর আশায়
ঝড়ের তাণ্ডব বুকে ধরেই এগিয়ে যায় নাবিকের বেশে সাহসের সীমানায়
একমুঠো শান্তি বিলাবে বলে

হিরোশিমা পুড়েছিল জ্বলেছিল নাগাসাকির স্বপ্নহৃদয়
মাতমের কুণ্ডলী উড়েছিল নীলের পর্দায়
সাহসের সবুজ আকাশ বেয়ে নেমেছিল কান্নার জল
আশার আলোতে অমবস্যার কালো মেঘ

দখলদার হায়েনার মেলা জমে আছে ফিলিস্তিনে
মানুষের লাশ থেকে কাবাব-রুটি ভক্ষণ করে উঁচুগলার শকুন
শিশুদের তুলোদেহ থেকে বানিয়ে ফেলে পানীয় মাদক, সুপেয় স্যুপ
নারী দেহের রক্তকণায় খোঁজে তৃপ্তির জুস
মুখোশ লাগিয়ে ঘৃণার বাতাস ওড়ায় সভ্য সমাজের নাবিক

রক্তখেকো দাঁতাল হায়েনার হাট বসেছে আরাকানে
গেরুয়া বসন পরে বন্যশুয়োরের মতো খুবলে খায় মানুষের দেহ
শান্তির অহিংস বার্তাগুলো আতঙ্ক তোলে ফাতেমাদের চোখের পর্দায়
মুহূর্তেই শেষ করে দেয় শমশের আলীর সুখের সংসার
পর হয় ভিটেমাটি, পৈতৃক নিবাস

কাশ্মির এক জ্বলন্ত লাভা, মৃত্যুস্বপ্ন এখন সিরিয়া-মিসর
বসনিয়া, চেচনিয়া, আজারবাইজান ঘুরে বাংলাদেশেও পড়ে শকুনের চোখ
আশাহত কবি কলম কামড়ায়, গেয়ে যায় মুক্তির গান
মানবতার উল্লাস খোঁজে তবুও

আকাশের চোখের তারায় ভাসে মানুষের মন
লতার ডগার মতো শিরদাঁড়াহীন কঙ্কাল
মুক্তোদানার সাথে দু’হাত বাড়িয়ে আজো
জাগায় বিবেক তবু সুদিনের খোঁজে
হিসেবের খাতা খুলে মেলে দেয় আঁখি
দীঘল রাতের শেষে উড়বেই ভোরডাকা পাখি।

অমিতাভ মীর
বৃক্ষের কাছে যাও ফিরে

কার্বনের বিষ তেজে ক্ষীয়মাণ আয়ু,
ভূগর্ভের জলস্তর গেছে নিচে নেমে।
লাভার স্রোতের মতো ধেয়ে আসে বায়ু,
প্রাণের স্পন্দন এই যায় বুঝি থেমে।

সবুজের সমারোহ ঝেঁটিয়ে বিদায়,
ধরিত্রীর বুক জুড়ে শ্মশানের তাপ।
অরণ্য উজাড় করে নগর সাজাই,
সেই সাথে বেড়ে চলে মানুষের চাপ।

জল ছাড়া বাঁচবে না প্রাণীর জীবন,
বায়ু-জল দু’য়ে মিলে প্রাণের স্পন্দন,
জল-অম্লজান করে বৃক্ষেরা সৃজন;
অরণ্যের বুক জুড়ে অসহ ক্রন্দন।

বিলাসী হাতের গড়া মৃত্যুজাল ছিঁড়ে,
বাঁচাতে প্রাণ বৃক্ষের কাছে যাও ফিরে।

মাহমুদুজ্জামান জামী
বর্ষায় ভীষণ অসুখ

বৃষ্টি তো পড়ছে এখনো এই শ্রাবণে;
বাংলায় গ্রামেগঞ্জে আর
অত্যাধুনিক নগরে
বৃষ্টির ছোঁয়ায় চার পাশে
দৃষ্টিনন্দন সবুজ।
সকালে-সন্ধ্যায় বৃষ্টির শব্দ হৃদয়ে
অনেক কথার ছবি আর ফুলের ফোয়ারা যেন
মনে দূর আলোকের আভা আনে!
আমাদের শহরে তবু এই বর্ষায়
হঠাৎ একটি রোগের আক্রমণে আজ
বিপর্যস্ত জীবন; ঘরে ঘরে
মানুষের ক্লান্তি আর অনেক মৃত্যুতে
শ্রাবণের ধারা আজ আকাশের অশ্রু হয়ে
পড়ছে মাটিতে।

নীলিম শেখ রাসেল
মহান

তুমি তো মহান
শিখিয়েছ কথার সমস্ত আবেগ।
আমার অস্তিত্বে দিয়েছ আলোকিত সোপান
ভাষার নানাবিধ ব্যবহারে আমি উজ্জীবিত।
তুমি সূর্য ও চাঁদের হিসাব কষেছ কী সূক্ষ্মতার সঙ্গে
তারা আর গাছপালা তোমার সুন্দরের গুণ গায় নির্ভুল।
ক্ষেতে শস্য আনাজ রাশি রাশি
ফলমূল খেজুর বৃক্ষরাজি শতসহস্র আহা।
ফুলের সুগন্ধে মন মাতোয়ারা
প্রাণভরে ওঠে আনন্দে।
শুষ্ক মাটির বুকে কিভাবে ফুটে ওঠে সজীবতার সুখ!
জন্মের টান যেন পোড়া মাটির তলে।
প্রাণ পেয়ে সে অদৃশ্য শক্তি জীবনকে
জাগিয়ে রাখে জীবনের কাছে।
তবুও হয় না মিলন, হয় না পার হওয়া
তাদের মুক্তা আর প্রবালে পৃথিবীটা ছাওয়া।


আরো সংবাদ



premium cement