২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিশ্বখ্যাত মহাকাব্য ও মহাকবি

-

মহাকাব্যের সংজ্ঞা নিরূপণ করতে গেলে প্রথমেই এই শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ এবং ইতিহাস জানা দরকার। ইংরেজি ভাষায় মহকাব্যকে এপিক বলা হয়। জানা যায়, এপিক শব্দটির উৎপত্তি হচ্ছে গ্রিক শব্দ এপিকোস থেকে। যার অর্থ হচ্ছেÑ একটি বীর রসাত্মক শব্দের মহাবিন্যাশ যা গানে গানে প্রকাশ করা হয়। ফলে একটি মহাকাব্য রচিত হয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাহিনীকে কেন্দ্র করে, দীর্ঘাকার এক ইতিহাসের ওপর নির্ভর করে। যে কাহিনী এবং ইতিহাসকে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সুন্দর ভাষায় প্রকাশ করা হয়।
ওয়েবস্টারের নিউ ওয়ার্লড ডিক্সনারির মতে এপিক হচ্ছেÑ দীর্ঘাকার কাব্য ধারা, যা নির্ভর করে ঐতিহ্য ও ইতিহাসের ওপরে নির্মিত কোনো হিরো বা হিরোদের প্রশংসা বাণীর ওপর। যার প্রকৃত উদাহরণ হচ্ছেÑ গ্রিক মহাকাব্যদ্বয় ইলিয়ড এবং ওডিসি। আরো খোলসা কোরে বলতে হয়, এপিক বা মহাকাব্য এবং শোকগাথা বা ব্যালাডের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, এই দুই কাব্য ধারার মধ্যকার দৈর্ঘ্যরে। এপিক বা মহাকাব্য হচ্ছে, ব্যালাড বা শোকগাথার চেয়ে দৈর্ঘ্যরে দিক থেকে অনেক বেশি বড়। সহজ কথায় বলা যায়, ব্যালাড বা শোকগাথা হচ্ছেÑ অল্প কথায় ছোট কাহিনীর কাব্য ধারা। আর এপিক বা মহকাব্য হচ্ছে, বিশাল গল্পের অনেক কথার শোকগাথার চেয়েও বিশেষ মানের কাব্যধারা।
এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকার মতে, এপিক বা মহাকাব্য হচ্ছেÑ একজন হিরোর হিরোইক কার্যকলাপ। সেই কার্যকলাপ মানুষের মুখে প্রচলিত থাকে। সাহিত্যে যার মান অতি উচ্চাসনে অবস্থান করে। এক সময়ে যা মানুষের মুখ থেকে লিখিত অবস্থায় এসে ধরা দেয় কোনো মহান কবির লেখনীতে। আর তখন তা হয়ে যায় ইলিয়ড বা ওডিসির মতো কালজয়ী এপিক বা মহাকাব্য।
মহাকাব্য সাধারণত দুই ধরনের। একটি হচ্ছেÑ লোক মহাকাব্যÑ যেটি সাধারণ জনগণের মুখে মুখে প্রচলিত থাকত। যেগুলো রচিত হতো জাতীয় উৎসবগুলোতে পাঠ করে শোনানোর জন্য। এ কারণে অল্প কিছু দিন পরে এসব মহাকাব্যগুলো মরেও যেত। আর একটি হচ্ছেÑ লিটারেরি মহাকাব্য। যেটি লোকমুখ থেকে গ্রন্থাকারে লিখিত রূপে প্রকাশ পেত। বিশ্ববাসীর হাতে এ পর্যন্ত যেসব মহাকাব্য এসেছে সেগুলোর মধ্যে প্রায় সবগুলোই লিটারেরি মহাকাব্য।
লিটারেরি এপিক বা সাহিত্যধর্মী মহাকাব্য নিয়ে বিশ্ববাসীর অতি সম্প্রতি জানা বিষয় হলো, ‘এপিক অব গিলগামেশ’ই হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম এবং সবচেয়ে প্রাচীন লিটারেরি এপিক বা সাহিত্যধর্মী মহাকাব্য। এর রচনাকাল ধরা যায়Ñ খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় তিন হাজার বছর আগে। এর পরেই আসে মহাকবি হোমারের লেখা লিটারেরি এপিক বা সাহিত্যধর্মী মহাকাব্যÑ ‘ইলিয়ড এবং ওডিসি’র কথা। এ দুই মহাকাব্যের রচনাকাল খ্রিষ্টপূর্ব অষ্টম শতকে। যেই লিটারেরি এপিক বা সাহিত্যধর্মী মহাকাব্যের মূল বিষয় ছিল ট্রোজানের যুদ্ধ নিয়ে। এরপরই লিটারেরি এপিক বা সাহিত্য ধর্মী মহাকাব্য হিসেবে ‘বেওউলফ’-এর কথা বলা যায়। যেখানে উল্লিখিত হয়েছে একজন মহান বীরের সাথে দেব-দানবের বেশ কয়েকটি মারাত্মক যুদ্ধের বিষয়। ইংরেজি সাহিত্যে লিটারেরি এই এপিক বা মহাকাব্যকেই একেবারে প্রাথমিক-পর্যায়ের এপিক বা মহাকাব্য বলে ধরে নেয়া হয়।
মহাকাব্য গিলগামেশ
প্রাচীন মেসোপটিয়ার অধিবাসীদের ধর্মের নানান নিয়ম-কানুন ও নীতি গল্প
এপিক অব গিলগামেশÑ প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার একটি জগৎবিখ্যাত মহাকাব্য। যাকে প্রাচীনকালের মেসোপটেমিয়ার লোকজন মেসোপটেমিয়ার সেরা সাহিত্যকর্ম বলে বিবেচনা করত। গিলগামেশ মহাকাব্যের কাহিনী ঐতিহাসিক। তার শুরু হয়েছে পাঁচটি সুমেরিয়ান কবিতার মধ্য দিয়ে। সেগুলো হচ্ছেÑ বিলগামেস (সুমেরিয়ানরা যাকে গিলগামেশ বলে বোঝায়), উরুকের রাজা (সময়কাল খ্রিষ্টপূর্ব ২১০০ শতক) উর বংশের তৃতীয় পুরুষের শাসনকাল চলছিল।
এসব আংশিক গল্প নিয়েই মহাকাব্যের এই বিশাল কাহিনী গড়ে উঠেছে। মহাকাব্যের প্রথম গল্পাংশটিকে ‘প্রাচীন ব্যাবিলনীয়’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছেÑ সময়কাল খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ১৮০০ শতক। যখন ইনসিপিত, স্তিতুর এলি সাররি (সব রাজাদের ছাড়িয়ে) শিরোনামে এর প্রকাশ ঘটে। কিন্তু এই প্রকাশিত গ্রন্থের খুব সামান্যই মানুষের হাতে আসে।
পরবর্তী একটি নির্ভরযোগ্য এবং মানসম্মত সংস্করণ প্রকাশিত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ১৩ থেকে ১০ শতকের মাঝামাঝি পর্যায়ে।
সর্বসম্মতিক্রমে মহাকাব্যের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মোট বারোটি খণ্ডে প্রকাশিত গ্রন্থাকারে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে সপ্তম শতকে আশিরিয়ান রাজা আসুরবানিপালকতৃক ধ্বংস প্রাপ্ত মহাকাব্যের বেশ কিছু বিরল এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্রিটিশ ন্যাশনাল মিউজিয়াম লাইব্রেরিতে পাওয়া যায়।
মহাকাব্যের শুরুতে কাহিনীর প্রথম অর্ধাংশজুড়ে রয়েছে গিলগামেশ, উরুকের রাজা এবং ইনকিদু দেবতার সৃষ্টি একজন বনমানুষÑ যে উরুকের জনগনকেগিলগামেসের অত্যাচার-অনাচারের হাত থেকে রোধ করবে। ইনকিদু কিন্তু আগে অসভ্য এক বর্বর মানুষ ছিল। কিন্তু এক রাজ নর্তকীর সাথে প্রেম ও দেহ মিলনের মাধ্যমে সে যখন সভ্য, সুন্দর একজন মানুষ হলোÑ তখন সে উরুকের উদ্দেশ্যে তার যাত্রা শুরু করল। সেখানে তার সাথে ভাগ্যক্রমে গিলগামেসের সাথে দেখা হয়ে যায়। অমনি উরুক তার শক্তি নির্ণয়ের জন্য গিলগামেশকে আক্রমণ কোরে বসে। এই সংঘর্ষে গিলগামেশ জয়ী হয় এবং দু’জনের মধ্যে অত্যন্ত সুন্দর এক বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এবার তারা দু’বন্ধু মিলে বিখ্যাত এক জঙ্গল সিদারের দিকে পুরো ছয় দিনের এক যাত্রা শুরু করল। তারপর সিদারে পৌঁছেই তারা দু’জনে প্রথমে দানব হামবাবাকে হত্যা করল। তারপর তারা সিদারকে পুণ্যস্থানে পরিণত করল।
এরপর তারা দু’জনে স্বর্গে লালিত-পালিত এক বিশালকায় ষাঁড়কে হত্যা করল। গিলগামেশকে চরম এক শাস্তি দেয়ার জন্য অবশ্য সেই ষাঁড়টি দেবী ইসতার পাঠিয়েছিলেন। কেননা গিলগামেশ দেবী ইসতারের সব কাজের যেন এক বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। গিলগামেসের সাথে স্বর্গের ষাঁড় হত্যা কাণ্ডে যোগ দেয়ার জন্য ইনকিদুর বিরুদ্ধে দেবী ইসতার হত্যার ফরমান জারি করলো।
মহাকাব্যের দ্বিতীয় অংশে এসে ইনকিদুকে হত্যা করার জন্য দেবী ইসতারের অভিশাপের দরুণ-গিলগামেসের ওপর নেমে আসে দুর্দশাগ্রস্ত যন্ত্রণাময় এক কষ্টের দীর্ঘ জীবন।
তখন গিলগামেসের এই দুর্দশাগ্রস্ত জীবন থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য পাতাল জীবনের রহস্য উদ্ধার করার জন্য যাত্রা শুরু করল। সেখানে গিলগামেশ কোনো জবাব পেল না। অবশেষে কোনো কূলকিনারা না পেয়ে গিলগামেশ ছুটল মানুষের পরলোকের জীবন অর্থাৎ শেষ বিচারের পর মানুষ যে জীবন পাবে, সেই জীবনের রহস্য উন্মোচন করার জন্য। সেখানে সে তার উত্তর পেল। সাথে শিখলÑ ‘জীবন হচ্ছে এমন একটি বিশেষ সময়ের যোগফল, যেখানে সারা জীবন তুমি অনেক কিছুই খুঁজে বেড়াবে; কিন্তু পাবে না কিছুই।’
কেননা স্রষ্টা যখন মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন তখনÑ মানুষকে প্রায় সব ক্ষমতা দিলেও জন্ম মৃত্যু এবং বিয়ের ক্ষমতাটা স্রষ্টা নিজেই তার হাতে রেখে দিয়েছিলেন। মানুষ নিজের হাতে তার জীবদ্দশায় অনেক কিছুই করে বা করতে পারে আর তাতেই সে তাকে অনেক কিছুই মনে করে। কিন্তু এই দুনিয়ায় মানুষ যে কিছুই করতে পারে না বা তার কোনো কিছু করার কোনো ক্ষমতাই নেইÑ তা সে জানে না। যা হোক, গিলগামেসের জীবনে কোথায় যেন এক পুণ্যকর্মের জন্য সে দেবতার চোখে প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠে। গিলগামেসের সেই অজানা কাজের জন্য দেবতা ইসতার অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন। তখন গিলগামেসের কাছে স্বর্গ থেকে দেবী ইসতার সিদুরির উপদেশগুলো পাঠিয়ে দিলো। অবশ্য এই উপদেশনামা অনেক আগেই মৃত্যুহীন এক মানুষ উতিœপিস্তিম গিলগামেশকে শুনিয়েছিলেন।
শুধু এ উপদেশ নামায় নয়Ñ উতিœপিস্তিম গিলগামেশকে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো এক মস্তবড় প্লাবনের কথাও শুনিয়েছিল। গিলগামেসের এই নাম-ধাম, শুনাম-সুখ্যাতি তার মৃত্যুকে জয় করল। মহাকাব্যের এই মনোগ্রাহী গল্প-উপাখ্যান যখন এই অবস্থায় শেষ হচ্ছেÑ তখন সারা দুনিয়াতেই গিলগামেশ এক চরম জনপ্রিয় চরিত্র হয়ে ওঠে। আধুনিকালে গিলগামেশ নিয়ে চলচ্চিত্রসহ কার্টুন এবং জনপ্রিয় সব টেলিভিশনের ধারাবাহিকও তৈরি হচ্ছে। দুই হাজার বছর আগে থেকেই এই সময়ে রচিত সব মহাকাব্য নিয়ে মহাকাব্য বিশারদদের মধ্যে বেশ মতভেদ রয়েছে। একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে, সুমেরিয় কাব্যে কাহিনীর ব্যবহার দেখা যায় অত্যন্ত বেশি। অর্থাৎ প্রাচীন সুমেরিয় কাব্য সাহিত্য ছিল কাহিনী নির্ভর। পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে তা মুক্তছন্দের দিকে চলে আসে। এরপরের সময় গুলোতে একক চরিত্র নির্ভর মহাকাব্য রচিত হতে থাকে। সেই সময়টা হচ্ছেÑ খ্রিষ্টপূর্ব ২১০০ শতকের রাজা তৃতীয় উরের শাসনামলে।
খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ১৮০০ শতকের দিকে প্রাচীন ব্যাবিলনীয় নথিপত্র অনুসারে পাওয়া যায়Ñ এপিক অব গিলগামেশ এক ধরনের বর্ণনাত্মক মহাকাব্য। এর রচনারীতি একেবারেই অন্যরকম। মহাকাব্য এপিক অব গিলগামেশ, আক্কাদিয় আমলে রচিত হয়। মহাকাব্য এপিক অব গিলগামেশ যথেষ্ট সহজবোধ্যে এবং অনুবাদের জন্যও যথেষ্ট সহজসাধ্য। বলা যায় এটি আধুনিককালে অনুবাদের উপযোগী একটি নির্ভরযোগ্য মহাকাব্য। যদিও আধুনিক কালের আবিষ্কৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সঙ্কলন প্রকাশিত হচ্ছেÑ তবু মহাকাব্য কিন্তু অসম্পূর্ণই থেকে যাচ্ছে। যে কারণে বলা হচ্ছেÑ এপিক অব গিলগামেসের আধুনিক সংস্করণ প্রয়োজন এবং তা সম্ভব। অতি সম্প্রতি কালে আবিষ্কৃত- খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ শতকের আক্কেদিও ভাষার সংস্করণকেই একেবারে নিখুঁত বলে আভিহিত করেছেন। যে সংস্করণে রয়েছে মোট ১২ খণ্ডের বারোটি পৃথক গ্রন্থ। এ গ্রন্থগুলো সম্পাদনা করেনÑ সিনলিকি উন্নিন্নি। এই গ্রন্থটি পাওয়া যায় নিনেভ এ অবস্থিত লাইব্রেরি অব আসুরবানিপলে।
এপিক অব গিলগামেসের পাণ্ডুলিপি আবিষ্কার করেনÑ হোরমুজদ রাসাম ১৮৫৩ সালে। এই মহাকাব্যের প্রধান চরিত্রগিলগামেশকে পৃথিবীর মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়Ñ ইজদুবার নামে। এপিক অব গিলগামেসের আধুনিক সংস্করণ প্রথম প্রকাশ করেনÑ জর্জ স্মিথ ১৮৭০ সালে। এপিক অব গিলগামেসের আর কোনো নতুন তথ্য পাওয়া যায় কি না স্মিথ তখনো খোঁজ করেছিলেন। যেগুলো ১৮৮০ সালে তার চূড়ান্ত অনূদিত গ্রন্থÑ দ্য চ্যালডিওন অ্যাকাউন্ট অব জেনেসিসে প্রকাশ করেন।
মতভেদে যে গ্রন্থটি প্রথম আধুনিক সংস্করণ তা দুই খণ্ডে অনুবাদ করেনÑ অ্যানড্রিউ জর্জ। গ্রন্থ খণ্ড দুটি ২০০৩ সালে প্রকাশ করেÑ অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাহিত্য সমালোচক- ইলিয়েনার রবসন বলেন, এপিক অব গিলগামেশ নিয়ে যেসব কাজ বিগত ৭০ বছরে হয়েছে, তার মধ্যে জর্জ স্মিথের কাজকে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচনা করা যায়। অ্যানড্রিউ জর্জ বলেছেন, এই কাজটি অত সহজসাধ্য নয়। কেননা দিনের পর দিন এভাবে এপিক অব গিলগামেসের আলাদা খণ্ডে, স্তবকের পর স্তবক, তার পাশে সেই স্তবকের অর্থ প্রকাশÑ নিঃসন্দেহে একটি দুরূহ কাজ বলা যায়।
১৯৬০ সালে ইরাকের বিশিষ্ট আরবি ভাষার পণ্ডিত ও প্রতœতাত্ত্বিক তাহা বাকির সরাসরি মূলগ্রন্থ থেকে এপিক অব গিলগামেসের আরবি ভাষায় অনুবাদ করেন। অ্যান্ড্রু জর্জের অনুবাদের ওপর ভিত্তি করে পুস্তক আকারে প্রকাশ করা হয়।
মহাকাব্যের শেষ প্রান্তে এসে পাঠকের ধারণা দাঁড়াচ্ছে, গিলগামেশ যেন দুটো চরিত্র এবং মজার ব্যাপার হচ্ছেÑ গিলগামেসের দুটো চরিত্রই যেন জীবন্ত। একজন নায়ক এবং রাজা। অন্যজন খলনায়ক এবং প্রজাবৎ কুপ্রবৃত্তির মানব বা পশুর মাঝামাঝি কোনো চরিত্র। তবে এপিক অব অব গিলগামেসের রচনাকারীর নাম না জানা থাকলেও বা রচনাকারীর কোনো পরিচয় না থাকলেও- রচনাকারী যে একজন প্রতীভাধর এবং অত্যন্ত উঁচু মানের মহাকবি; তা নিঃসন্দেহে স্বীকার করে নেয়া যায়। এ পুস্তিকায় দেখা যাচ্ছেÑ ইনকিদু পৃথিবীর মাটিতে ফিরে আসার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই সে তার পরিচিত দেব-দেবীদের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছেন, তাকে ফের পৃথিবীর মাটিতে ফেরত পাঠানোর জন্য। ইনকিদুর এ ইচ্ছা দেখে গিলগামেশ অত্যন্ত আনন্দ পেল। গিলগামেশ তখন পাপ এবং পুণ্যবান কিছু কাজের কথা বলল। যেসব কাজ করলে ফের পৃথিবীর মাটিতে ফিরে আসা যায়। ইনকিদুর সাথে পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য এবার গিলগামেশও দেবতার কাছে প্রার্থনা শুরু করে দিলেন। গিলগামেশ দেবতার কাছে তার প্রিয় বন্ধু ইনলিল এবং সুয়েনকেও ফেরত চাইল। কিন্তু কোনো উত্তর এলো না। কিন্তু দেবতা ইয়া এবং সামাসের কাছে প্রার্থনা না করা সত্ত্বেও তারা গিলগামেশ এবং ইনকিদুর পাশে এসে দাঁড়াল। সামাস তার সর্ব্বশক্তি নিয়োগ কোরে পৃথিবীর ওপরে এক মহাদুর্যোগ এবং প্রলয় পাঠাল। তাতে পৃথিবী লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল। এই সুযোগেই ইনকিদু পাতালপুরী থেকে ভূত হয়ে বেরিয়ে পৃথিবীর মাটিতে চলে এলো। গিলগামেশ ইনকিদুর কাছ থেকে পাতালপুরী সম্পর্কে জানার জন্য প্রশ্ন করতে লাগল। এই প্রশ্ন-উত্তরপর্বের মধ্য দিয়েই মহাকাব্যের সমাপ্তি ঘটে।
[চলবে]


আরো সংবাদ



premium cement