২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিজয়ের আনন্দ গান

-

বিজয় এলো বলেই আমাদের রোদেরা স্বাধীন/ আমাদের বাতাস স্বাধীন/ আমাদের মেঘ বৃষ্টি স্বাধীনভাবে ঝরে/ বিজয় আনন্দে ফোটে আমাদের গোলাপ। এভাবে বিজয় মুক্ত করে দিলো আমাদের আকাশ। এ বিজয় আমাদের বিজয়। আমাদের ইতিহাসের বিজয়। বাংলাদেশের বিজয়। এবং আমাদের স্বাধীন চিন্তা বিজয়। এই ঘটনা আমাদের ইতিহাসে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ঘটনা। বিজয়ের মাধ্যমে আমরা সম্মানিত হয়েছি বিশ্বের দরবারে। আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছি। পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ। স্বাধীন জাতি। বিজয় এনে দিলো নিজের মতো করে চলার বলার এবং দেখার স্বাধীনতা।
যেকোনো বিজয় মানুষের জন্য খুবই আনন্দের। লেখাপড়ার বিজয়, খেলাধুলায় বা কোন প্রতিযোগিতার বিজয় খুবই আনন্দের। কিন্তু দেশের বিজয়? আর সে দেশ যদি হয় নিজের জন্মভূমি তাহলে? তাহলে আর কী! এ আনন্দের আর কোন সীমা পরিসীমা নেই। বিশ্বজয়ের চেয়ে এ আনন্দ বেশি। এ আনন্দ স্বাধীনতার আনন্দ, মুক্ত হওয়ার আনন্দ। নিজের মতো করে চলার ও বলার আনন্দ এবং নিজের মতো করে বেড়ে ওঠার আনন্দ। বিজয়ের আনন্দের মতো আনন্দ খুব কমই আছে। দেশের বিজয়ের মতো আনন্দ নেই বললেই চলে। বিজয় দিলো নিজের মতো করে নতুন স্বাদ। নতুন উপস্থাপনা। নতুন করে স্বপ্নমুগ্ধ কবিতা।
পৃথিবীর যেকোনো কাজে মানুষকে সফলতা পেতে হলে পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রম ছাড়া কোনো কাজে সাফল্য অর্জন করা যায় না। সুতরাং বিজয় মানেই শ্রম, সাধনা এবং বিনিময়। আমাদের বিজয়ের পেছনে এক নদী রক্ত বিনিময় দিতে হয়েছে। লক্ষ শহীদের রক্ত ও জীবনের বদলে আমরা আমাদের বিজয় পেয়েছি। একটি বিজয়ের জন্য এত রক্ত! এত খুন! এত শহীদ! এক বিস্ময়কর বিষয়। ভাবতে গেলে অবাক হতে হয়। একটি পতাকার জন্য এত রক্ত! এত জীবন দিতে হল! এত কিছুর পর বিজয় পতাকা আমাদের হলো। এ বিজয় পতাকা এনেছে আমাদের কবিতায় অন্যরকম দ্যোতনা। রক্তের আখরে অংকিত কবিতা একটি জাতির উচ্ছ্বাস।
মানুষ কেন মানুষের উপর অন্যায় করে? কেন জুলুম করে? অন্যের অধিকার কেড়ে নিতে চায়? মানুষের স্বাধীনতা হরণ করে মানুষ। ঐসব মানুষেরাই বিভিন্ন সময় দেশে, সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বাড়িয়ে দেয়। বৃদ্ধি পায় হিংসা, হানাহানি। বাংলাদেশ আমাদের অতি প্রিয় মাতৃভূমি। আমরা এদেশকে অন্তরের গভীর দেশে ঠাঁই দিয়েছি। আমাদের হৃদয়ে এদেশের মানচিত্র আঁকা। আমরা শয়নে-স্বপনে জাগরণে এদেশকে ভালোবাসি। গানে গল্পে কবিতা ছড়ায় আমরা উচ্চকিত করি দেশ প্রেম। আমাদের ভালোবাসার কোনো ফাঁক নেই। একারণেই আমরা আমাদের দেশের জন্য লড়াই করি। যুদ্ধ করি। যুদ্ধের ভয়াবহতা উপেক্ষা করে বিজয় ছিনিয়ে আনি। আমাদের জীবনের চেয়ে আমাদের দেশের মূল্য অনেক বেশি। বেশি বলেই আমাদের পূর্বসূরিরা তাদের আশা-স্বপ্ন ও জীবন কোরবান করে আমাদের জন্য বিজয় এনে দিয়েছেন। সে বিজয়ের গৌরবে আমরা গর্বিত। আমরা স্বাধীন আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমাদের শিল্পসাহিত্য তারই আঙিকে নির্মিত। তারই গৌরবে উজ্জীবিত।
আমরা বিজয় পেয়েছি। বিজয়ের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করেছে। পেয়েছি স্বাধীনতার স্বাদ। সেই আনন্দে আমাদের কবিরা লিখেছেন কবিতা। গাইছেন শিল্পীরা গান। লিখছেন সাহিত্যিক বন্ধুরা।
আমরা বিজয়ের আনন্দের কথা বলেছি। বিজয় পেলে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। এ কথা ঠিক। কিন্তু সেই সাথে স্মরণ রাখতে হবে যে বিজয় অর্জন করাই সব কিছু নয়। সব সমস্যার সমাধান নয়। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে তবে আরো কী? এর উত্তর হলো বিজয়কে অর্থবহ করতে হবে। অর্থাৎ বিজয়ের মাধ্যমে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি তা কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশের সর্বক্ষেত্রে উন্নতি অর্জন করতে হবে। এ উন্নতি শুধু একদিকে নয়। সব দিকের। সব বিভাগের। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। এ বিজয় আনতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদদের স্বপ্ন ছিল শোষণহীন সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলা। যেখানে আর মানুষ মানুষকে গোলাম বা চাকর ভাববে না। কেউ কারো উপর অন্যায়, অত্যাচার করবে না। কারো অধিকার নষ্ট করবে না। একজন কবি স্বাধীনভাবে রচনা করবে তার কবিতা। গল্পকার লিখবেন তার সুন্দর গল্পটি। ঔপন্যাসিক লিখে যাবেন তার উপন্যাসের কাহিনী। এভাবেই থাকবে প্রতিটি কণ্ঠের স্বাধীনতা। এই কোমল মাটির গন্ধ বুকে নিয়ে প্রত্যেকে হয়ে উঠবে একজন আদর্শ যোগ্য নাগরিক। একজন দেশপ্রেমিক সুসন্তান শহীদদের এ স্বপ্ন আমাদের বাস্তবে রূপ দিতে হবে। আমরা যারা বর্তমানে জেগে আছি এই সবুজ বাংলাদেশের বুকে, আমাদের প্রত্যেককে বিজয় দিবসে নতুন করে শপথ নিতে হবে, আমরা আমাদের এই মাতৃভূমির উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করব। আমাদের বীর শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশকে স্বপ্নের মতো করে গড়ে তুলবো। বাংলাদেশের অগ্রগতিকে আরো এগিয়ে দেবো। আমরা আমাদের দেশকে সুন্দর ও উৎসবময় করে নেবো। এসব নিয়ে আমাদের সাহিত্য এবং কবিতা হবে বিশ্বজয়ী।
বাংলাদেশের এই শ্যামল চেহারা দেখে মায়া লাগে না, অথবা দেশপ্রেমে কারো মন মজে নাÑ এমন মানুষ এদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। দেশের দুঃখে দুঃখী হয় না কি আছে এমন? দেশের সুখে হতে হবে সুখী। দেশের জন্য কাঁদতে হবে। দেশের জন্য হাসতে হবে। প্রয়োজনে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার দৃঢ় ইচ্ছা থাকতে হবে। সাথে সাথে দেশের উন্নতি দেখে মনের ভেতর থেকে খুশি প্রকাশ করতে হবে। তবেই বোঝা যাবে দেশপ্রেমের সত্যিকারের রূপ। শুধু মুখে মুখে দেশদরদী হলে চলবে না। মুখে দাবি করে যদি তা কাজে প্রমাণ দেয়া না যায়, তবে তাকে দেশপ্রেম বলা যাবে না। যে কথা মুখে দাবি করব তা কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দেয়া চাই। কথা কাজে এক হয় এমন নাগরিক আজ আমাদের দেশের জন্য বড় বেশি প্রয়োজন। যারা সবকিছুর উপর দেশের স্বার্থ বড় করে দেখবে। যারা অকাতরে দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসবে, যারা দেশের মর্যাদা, সম্মান বৃদ্ধির জন্য কাজ করবে, বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা তুলে ধরবে। একবিংশ শতাব্দীর মানুষ আমরা। এ শতাব্দীতে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে নতুন করে সাজাতে হবে। গোটা বাংলাদেশ মিলে আমরা এক গ্রাম, এক সমাজ। আমাদের এই আধুনিক গ্রামের যত নাগরিক রয়েছে তারা প্রত্যেকে যদি এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে তাহলে কেন এগোবে না আমাদের দেশ। অবশ্যই আমরা এগিয়ে যাবো। এগিয়ে যেতেই হবে। এটাইতো বিজয়ের শিক্ষা। বিজয়ের এ শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে আমাদের। এমন সাহস রুয়ে দিতে চাই আমাদের সাহিত্যে। আমাদের গান-কবিতায়।
আমরা আমাদের ঘর ও আমাদের পরিবারকে যেভাবে ভাবি ঠিক দেশকেও সেভাবে ভাবতে হবে। আমরা দেশের সমস্ত নাগরিকেরা এক পরিবার। এক ভাষায় কথা বলি, এক ভাষায় হাসি, কাঁদি, গান-কবিতা লিখি, একে অপরের সাথে সুখ-দুঃখ বিনিময় করি, এই তো আমার বাংলাদেশ। এই তো আমার মায়া মাখা মাতৃভূমির মুখ। মায়েরা সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে চায়। সন্তানেরা মাকে সুখি করতে চায়। দেশ ও দেশের মানুষ সেই মা এবং সন্তানের মতো। মা এবং মাতৃভূমি একাকার হয়ে গেছে কবির ভাষায় এভাবেÑ
মা যে আমার মাতৃভূমি
মা-ই বাংলাদেশ
নাড়ির টানে বাঁধা পরান
হইনি নিরুদ্দেশ।
দেশের সুখ মানে আমার সুখ। দেশের উন্নতি মানে আমার উন্নতি, এমন মহান বাসনাই হবে দেশপ্রেমের শ্রেষ্ঠ উপমা। দেশের প্রতিটি নাগরিকের বুকের গভীরে এ বাসনা সজীব হয়ে উঠলে হয়ত এদেশ হবে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাবান দেশ। নাগরিক হিসেবে আমরা বুক ফুলিয়ে, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো। দাঁড়াতে হবে আমাদের। মর্যাদা ও সম্মানের জায়গা করে নিতে হবে। আমাদের সাহিত্যের মর্যাদাও বৃদ্ধি পাবে তখন।
এমন একটা স্বপ্ন দেখা যায় না যে, আমাদের দেশে কোন দুর্নীতি থাকবে না। স্বজনপ্রীতি থাকবে না। সবাই শান্তিতে বসবাস করবে। ভয়হীন রাত যাপন করবে। কেউ কারো প্রতি অবিচার করবে না। নিজের অধিকারের ব্যাপারে যেমন আপসহীন হবে অন্যের অধিকারের বিষয়েও সাবধান থাকবে। যোগ্যতা আর সততাই হবে সাফল্যের মাপকাঠি। যে যার যোগ্যতার আলোকে কাজ পাবে। তবে এদেশ, এদেশের মানুষ কত না সুখী হতো। সুখের সুবাতাস বয়ে যেত সবার ঘরে ঘরে। সেসব কথা গানে কবিতায় কি মজা করেই না বলা যেতো। তবুও আমরা সেই স্বপ্ন দেখতে চাই। দেখতে চাই কবিতায় সাহিত্যে।
আমাদের প্রত্যেককে বিজয়-চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে। আমরাই পারবো, আমরাই গড়বোÑ এমন সেøাগান উচ্চারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে ভবিষ্যতের দিকে। তাহলে যারা এখন ছোট কিংবা শিশু-কিশোর এবং যারা ভবিষ্যতে আসবে তাদের প্রত্যেকে এ প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হবে। তারা ভালো হবার পথ খুঁজে পাবে। যোগ্য হবার চেষ্টা করবে। সেই সাথে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করবে। এইভাবে সবাই যখন দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করবে। এইভাবে সবাই যখন দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে দাঁড়াবে তখন এদেশের উন্নতি কেউ ঠেকাতে পারবে না। দেশ এগিয়ে গেলে আমরাও এগিয়ে যাবো। দেশ ভালো থাকলে ভালো থাকবো আমরাও। দেশের ভালো আমাদের ভালো।
আমাদের নতুন পথে এগুতে হবে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি উদার করতে হবে। হৃদয়টা বিস্তৃত করতে হবে আকাশের মতো। আমরা ছোট মন বুকে রাখবো না। প্রত্যেকে বিশাল হৃদয়ের মানুষ হবো। তাহলে আমাদের বিজয় সার্থক হবে। সফল হবে। আমরা বিজয়ের স্বাদ-আনন্দ উপভোগ করতে পারবো। বিজয়ের ঔদার্য বুকে পুরে আমরা রচনা করবো নতুন কবিতা। নতুন গান।
ও বাংলাদেশ! তুমি আমাদের হৃদয়েরই আরেক রঙ/ তোমার কোন ভয় নেই/ তুমি আমাদের ভালোবাসার সবুজ ছবি/ তোমাকে হৃদয়ে এঁকে দেখো আমাদের সমস্ত হৃদয় সবুজে একাকার/ তুমি আমার এবং আমাদের/ তুমি প্রাণের গহীন থেকে জেগে ওঠা ভালোবাসার/ তোমার ভালোবাসা বুকে পুরে আমাদের পথ চলা/ তোমার বিজয় মানে আমাদের বিজয়/ তোমার আনন্দ মানে আমাদের আনন্দ/ এই আমাদের বিজয় আনন্দ গান! হ


আরো সংবাদ



premium cement