পাগড়ির খুটে চোখ মোছে ইবনে বতুতা। চোখে যেন মালুম হতে চায় না, কোনো দেশ কি এত সুন্দর হতে পারে? কী অপার সৌন্দর্যের এই দেশ। যেখানে যা কিছু প্রয়োজন বিধাতা নিজ হাতে যেন তা থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন। সবুজের কার্পেটে মোড়া চারিদিক। অথৈ নিলিমা নেতিয়ে পড়েছে গহিন অরণ্যে। বুনোঝোপঝাড় কাঁটাকেন্দুল্যা বনমোতরার মাঝপথে হারিয়ে গেছে ইতল বিতল পথ। নাম না জানা বনবাদারের ফাঁকফোকর ঘেঁষে উচ্ছল নদী কোল ভরা জল নিয়ে আছড়ে পড়ছে কূলে। নদীর উচ্ছল স্রোতধারায় হরেক কিসিমের পণ্য বোঝাই নাও পাল তুলে কোন চেনা অচেনা বন্দরের পানে হু হু করে হারিয়ে যাচ্ছে, এ বিশাল নাও কোথায় কোন বন্দরে গমনাগমন করে, বিস্মিত ইবনে বতুতা তা বলতে পারে না। সেই কবে কখন মরক্কোর এক দুরন্ত কিশোর মরুভূমিতে আপন মনে ভেড়ার পাল চরাতে গিয়ে উটবণিকদের দীর্ঘযাত্রা দেখে পুলকিত হয়েছিল। শুধু পুলকিত নয় হাঁসফাঁস করা মন জাগতিক কাজকর্মের শেকল ভেঙে মুক্ত হয়ে এ পৃথিবীর অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বেহুঁশ হয়ে ঘর থেকে দু-পা ফেলে বের হয়েছিল, ধূসর ক্যানভাসে ফুটে ওঠা অস্পষ্ট ছবি এখনো মাঝেমধ্যেই তা ভেসে ওঠে। এই অর্ধশত বছরের পথ চলায় কত শীত, বসন্ত, নিদাঘ অমানিশা, ফকফকা জ্যোৎস্না রাত ভ্রমণের পাগলা ঘোড়ার কাছে হার মেনে জীবন চলার পথে ফুঁৎকারে হারিয়ে গেছে, বাংলা মুলুকে এসে ইবনে বতুতার সেই হারিয়ে যাওয়া ধূসর স্মৃতি ক্ষণে ক্ষণে ভেসে আসছে কেন তা নিজেও বলতে পারে না। কত বিচিত্র দেশ বৈচিত্র্যময় মানুষ অজানা ভাষার কলগুঞ্জনে মুখর বিচিত্র জনপদের মানুষেরা কখনো তার জীবন নিতে চেয়েছে কখনো কোন দেশের রাজা তার ভ্রমণজীবনের বিচিত্র কথা শুনতে চেয়েছে, কখনো কোন রমণীর পটলচেরা চোখ ইঙ্গিত দিয়ে গেছে ভালোবাসার। সেই পটলচেরা চোখের রোমাঞ্চ ইবনে বতুতার পরাণের গহিনে দোলা লাগিয়েছিল ঠিকই তা অল্প কয়েক দিনের জন্য। ভিনদেশী বলে কথা, এসব তামাম বিষয়েই বুঝে শুনে অতি সাবধানে জীবনকে বাঁচাতে হয়েছে নতুবা ভিনদেশী রাজার জল্লাদের তলোয়ারে মুণ্ডু কাটা পড়ত যেকোনো সময়ে। ভাগ্য তার ভালো বলতেই হয়। ভিনদেশী রাজাদের দরবারে ভ্রমণের বিচিত্র কাহিনী শুনিয়ে পেশকাস লাভ, বাদশাহী খানাপিনা, সে দেশ থেকে বিদায় নেয়ার সময় পকেট ভর্তি মোহর বতুতার আলখেল্লার নিচে কখনো ঝনঝন করে বাজত না। শুধু কি তাই, কখনো পথপ্রদর্শকের অভাবও ছিল না। নতুবা দুর্গম বন,আসমুদ্র হিমাচল মরুভূমি, সীমাহীন পানির রাজ্য অতিক্রম করে এই অর্ধশত বছরে সত্তর হাজার মাইল ভ্রমণ করে অবশেষে এই বাংলা মুলুকে আগমন, এত জানবাজি রাখা এক সময়ের সাহসী সন্তানের গল্প। প্রতি পদে পদে মৃত্যুঝুঁকি, পথে কত নাম না জানা ভিনদেশী বন্ধুর সাথে পরিচয়, কত ভিনদেশী রমণীকে ভ্রমণের মায়াজালে আবদ্ধ করে অচীন দুর্গম পথে পাড়ি জমাতে হয়েছে, তা ক’জন জানবাজ পুরুষের পক্ষে সম্ভব? বাংলা মুলুকের মেঘনা নদীতে নৌকায় বসে এ ভাবনায় তার মন ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিল অনবরত। তার চলার পথের ইশিনিশির সাথী কিমনকেশকে একটি কথাই বলছিল বারবার।
কিমনকেশ বাঙ্গালা মুলুকের এ নদীটির নাম কি জান, বাঙ্গালার প্রাচুর্য কোন দেশের সাথে তুলনা করতে পারো?
কিমনকেশ হেসে উত্তর দেয়Ñ এ দেশকে তো মিসরের অবিকল মনে হয়, মনে হয় পৃথিবীর সব সম্পদ যেন বাঙ্গালায় জমাট হয়ে আছে। ইবনে বতুতা বিড়বিড় করে কি যেন বলে ওঠে, কিমনকেশ তা মালুম করতে পারে না। লোকটি এমনিই খেয়ালী, কখন কোন সময় কি বলে ওঠে, কখনো দিল্লির শাহেনশাহ তুঘলকের দেয়া শায়েরের কেতাবখানি সুর করে পড়ে কখনোবা আপন মনে দিলখুলে হাসতে থাকে। কখনো ঝোলা থেকে বের করে তুলোট কাগজে মিসর থেকে আনা প্যাপিরাসের ডগার কলম দিয়ে রাতভর লিখে চলে। বতুতার রমণী মোহন চেহারায় ভিনদেশী শাহজাদীরা কখনো ওর প্রেয়সী সেজে বসে। ওস্তাদও কোন শাহজাদীকে ভালোবাসার পরম সোহাগ বিলিয়ে দিতে বিমুখ করেন না। হরহামেশা রমণীদের সঙ্গ ছাড়া ওস্তাদের একদণ্ডও চলতে চায় না। কিমনকেশ এ নিয়ে আর এক মুহূর্তও ভাবতে চায় না। দিল্লির বোহেমিয়ান কিমনকেশ সেই যে সিন্ধুর থাট্টা থেকে ইবনে বতুতার সাথে জাহাজে করে সাতিগাং (চট্টগ্রাম) এসে পৌঁছেছিল, সেখান থেকে জাহাজে করে শ্রীহট্টের হবন্ক (হবীগন্জ) থেকে নদীপথে যাত্রা শুরু বাঙ্গালা মুলুকের রাজধানী সোনরকং (সোনারগাঁওয়ের) দিকে, নদীপথে যাত্রা যে এত নয়নাভিরাম হবে, দু’জনে তা কল্পনাও করতে পারেনি। দিল্লি থাকাকালীনই জেনেছিল বাঙ্গালা মুলুকে একজন রাজা আছেন, যিনি বিদ্রোহ করে সোনারগাঁও দখল করে সুলতান হয়েছেন। তার নাম নাকি ফকরা (ফকরুদ্দীন মোবারক শাহ)। সেই ফকরার রাজধানীর দিকে তাদের জাহাজ ছুটে চলেছে। ফকরার রাজ্যে জিনিসপত্রের দাম নাকি খুব সস্তা। পাচুর্যের কোনো ঘাটতি নেই। সেখানে নাকি মিলে এক মায়াবী কাপড়। সোনারগাঁওয়ের পটলচেরা চোখের কিশোরীরা মাকড়ের আঁশের মতো এক ধরনের সুতা তৈরি করে। সেই সুতায় তৈরি হয় মিহি কাপড় মসলিন। বাঁশের চোঙে ভরে শত শত গজ মিহিন কাপড় নেয়া যায়, তাহলে এই কাপড় কি আকাশ পরীরা তৈরি করে? ইবনে বতুতার চোখেও মায়াবী পর্দা দুলে ওঠে। শাবনাম মসলিনের ফিনফিনে মায়াবী পর্দা। জাহাজের পাটাতনে বসে নদীতীরের মসলিন কাপড়ের আড়ংয়ের কথা চিন্তা করে ইবনে বতুতা বিড়বিড় করে বলে ওঠেনÑ
“মসলিন মলমল, পাছাদার, কুস্তিদার, শাবনাম, জামদানীর লোভে
বেহুঁশ সওদাগর দরিয়ার নোনা পানি বারে বারে ডাকে।
ভাসালো কিস্তি সওদাগর, সোনারগাঁওয়ের পানে
উঠুন ইবনে বতুতা, যদি যেতে চান ‘জান্নাতুল বালাদ’ সোনারগাঁওয়ে।”
কি অপরূপ দৃশ্য নদীতীরের। সাঁই সাঁই করে বেড়ে ওঠা ফলভারানত বৃক্ষ দাঁড়িয়ে ভোরের মিষ্টি রোদ উপভোগ করছে। বৃক্ষের ছায়ায় মায়ায় বেড়ে ওঠা বাঙ্গালার জনপদ। এ জনপদের রহস্যময় শহর সোনারগাঁও। হাম্মাম, ইঁদারা, দরবার, সুরম্য অট্টলিকা, সুউচ্চ মিনার, মসজিদ, মন্দির, আমলকচুড়ো, দেউল, বাদশাহী বাজার... এক কথায় ফকরুদ্দীনের রাজধানী ... চমৎকার। সোনারগাঁওয়ে আসার পথে ফকরুদ্দীনের দেয়া কয়েকটি মোহরও জুটেছিল, বিদেশী মেহমানরা সোনারগাঁওয়ে এলে সুলতানের পক্ষ থেকে এ উপহার দেয়া হয়। মোহরের সাথে দেয়া হয়েছিল সুলতানের একটি চিঠি। আলখেল্লার পকেটে হাত দিয়ে মোহরের অস্তিত্ব অনুভব করে ইবনে বতুতা। চিঠিটির কথা খেয়ালই ছিল না। আতরের গন্ধ মাখানো সুলতানের চিঠিখানি পড়ে ইবনে বতুতার চোখে নেমে আসে চিন্তার এক কালমেঘ। সুলতান ফকরুদ্দীনের সাথে দেখা করা এ সময়ে সম্ভব হবে না। কারণ এ সময়ে সুলতান গৌড়ের বাদশাহ কদরখানের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। সুলতান ফকরুদ্দীনের মনমেজাজও ঠিক নেই। ইবনে বতুতাকে দেখে কি ভাবতে কি ভেবে বসেন সুতরাং সুলতানের ছায়া মাড়ানোও এ মুহূর্তে ঠিক হবে না। যত তাড়াতাড়ি সোনারগাঁও ত্যাগ করা যায় ততই মঙ্গল। কিমনকেশেরও সাফ উত্তর সোনারগাঁও বন্দর থেকে কোনো বিদেশী জাহাজে চড়ে সোনারগাঁও ত্যাগ করাই ভালো। দুপুর ঘনিয়ে এসেছে। ইবনে বতুতার পেট ক্ষিধেয় চড়চড় করছে। ‘দুপুর ঘনিয়ে এলো কিমনকেশ... আশপাশের বাজার থেকে কিছু খাবার সংগ্রহ করা কি যায় না।’ কিমনকেশের পেটেও ক্ষুধা মোচড় দিয়ে ওঠে। শহর সোনারগাঁওয়ের পাশের এক আড়ঙে ইবনে বতুতার জাহাজ ভেড়ে। নদীতীরের বাজারে কি নেই এখানেÑ হাঁস, কবুতর, মুরগি, ভেড়া, খাসি, গরু, ফল, মিঠাইমণ্ডা, মসলিন কাপড়ে ঠাসা দোকানপাট। জিনিসপত্রের দামও খুব সস্তা। কিমনকেশ জিনিসপত্রের সুলভ মূল্য দেখে বিস্মিত হয়। কিন্তু বতুতা কোথায়? লোকজনের ভিড়ে কোথায় খুঁজবে? তাহলে কি.... হ্যাঁ, বতুতা সেখানেই থাকতে পারেন। কিমনকেশের অনুমান সঠিক, বাজারের উত্তর পাশে দাসবাঁদীদের বেচাকেনার বাজার বসেছে, ইবনে বতুতাকে ঠায় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিটমিটিয়ে হাসে কিমনকেশ। ইবনে বতুতা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন এক পটলচেরা ঢলঢল লাবণ্যঘেরা এক মায়াবী কিশোরীর দিকে। বতুতার চোখের পলক যেন পড়তেই চায় না। কিমনকেশকে দেখে এগিয়ে এসে ইবনে বতুতা বলে ওঠে, ‘মেয়েটি কি অপরূপ লাবণ্যের অধিকারী, তাই না কিমনকেশ?’ বতুতার কথা শুনে কিমনকেশের চোখও পড়ে কিশোরীটির পানে। কিশোরীটি চেয়ে আছে বিষণœ চোখে। জড়সড় হয়ে বসে আছে এক কোণে তার সাথে গায়ে গা লাগিয়ে বসে আছে অদ্ভুত মায়াবী চেহারার এক কিশোর। সুন্দরী বাঁদীদের বেচাকেনার হাট বসেছে। ‘কিমনকেশ আমিতো সুলতান নই, সামান্য এক পর্যটক, সুলতান হলে আমার থাকত হেরেম, আমার ইচ্ছে হয় কি জান, সোনারগাঁওয়ের সব সুন্দরী বাঁদীকে ক্রয় করে আমার জন্মভূমি মরোক্কোয় নিয়ে যাই, কিন্তু আমার হলো মুসাফিরের জীবন, মুসাফিরের জীবনে কি সুলতানের হেরেমের বিলাসিতা করা চলে?’ ওস্তাদের যে কিশোরীটির জন্য দিলে লেগেছে, কিমনকেশ তা বুঝতে পারে। ইবনে বতুতা এগিয়ে যায় কিশোরীটির পানেÑ ‘কী নাম তোমার.... বাঁদীর বদনখানিতো চমৎকার...।’ জড়সড় কিশোরী ইবনে বতুতার চোখের ভাষা বুঝতে পারে। আদর সোহাগের যে অভাব হবে না ভিনদেশীর সুরমামাখা গভীর চোখ দেখলেই তা অনুমান করা যায়। ইবনে বতুতার কথা ঠিক বুঝতে পারে না। কিমনকেশ আকার ইঙ্গিতে কিশোরীকে বুঝিয়ে বলে। এবার ঠিকই বুঝতে পেরেছে কিশোরী। মৃদুকণ্ঠে মিটমিটিয়ে হেসে বলে, ‘আমার নাম অশুরা... আর এ হলো আমার প্রতিবেশী লুলু।’ সহাস্য ইবনে বতুতা সোনারগাঁওয়ের কিশোরীর জবান ফুটেছে দেখে আহলাদিত হয়, ‘অশুরা... লুলু তোমরা কি মরোক্কোয় যাবে?’ মরোক্কো কি মানুষের নাম নাকি জন্তুর নাম কিশোরী অশুরা কিশোর লুলু তা বুঝতে পারে না। বাঁদীর মালিকও ঠিক বুঝতে পেরেছেন দু’জনকেই চড়ামূল্যে বেচা যাবে। যে দামই হোক সোনারগাঁওয়ের দু’জনকে ইবনে বতুতার চাইই চাই। অবশেষে বাঁদীর মালিককে দু’টি স্বর্ণমুদ্রা দিতেই হলো। অশুরা, লুলুকে নিয়ে ইবনে বতুতার জাহাজ ভেড়ে সোনারগাঁও শহরের ঘাটে। কিমনকেশের তাড়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সোনারগাঁও ত্যাগ করতে হবে। দিনকাল ভালো না, ক্ষণে ক্ষণে সুলতানের ঘোড়সওয়াররা এসে নানারকম প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে। কখনো পদাতিক সেনারা নাঙ্গা তরবারি উঁচিয়ে দৃপ্তপায়ে হেঁটে যায়। ভিনদেশীদের চেহারা দেখলে নির্ঘাত সুলতানের কাছে হাজির করবে। বেমাক্কা এই বিপদে কে পড়তে চায়? ভাগ্য ভালো কিমনকেশের, ইবনে বতুতার। জাভাগামী এক জাহাজ কিছুক্ষণ পরেই ছেড়ে যাবে সোনারগাঁওয়ের উপকূল থেকে। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে জাহাজের ছোট্ট কেবিনে জায়গা হয় চারজনের। কেবিনটা ছোট হলেও সুন্দর। ছোট জানালাটা খুলে দিলে সাগরের বাতাস ঢুকে হুহু করে। চাঁদের খণ্ড আলো কখনো উথলে পড়ে কেবিনে। ইবনে বতুতার মুখে ঝরে পড়ে অপরূপ শায়ের, বিড়বিড় করে বলে ওঠেÑ
‘চলে কিস্তি নোনা দরিয়ার পানি- সহসা ফাঁক
দরিয়ার ফেনার আয়নায় ভাসে গাংচিল একঝাঁক।
গাংচিলকে বল সমস্ত খবর, ইবনে বতুতা
অশুরা লুলুর আপনার বুকের জমানো ব্যথা...।’
জাভাগামী জাহাজ সোনারগাঁওয়ের উপকূল ছেড়ে তরতর করে এগিয়ে যায়। সামনে সীমাহীন পানির পারাবার। উপরে স্বচ্ছ নিলিমা, নিচে পানি আর পানি.... পার কোথায়? ইবনে বতুতা তা ভেবে পায় না, পার কোথায়... তবু ইবনে বতুতাকে পাড়ি দিতে হবে। হ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা