২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্বপ্ন

-

প্রায়ই একটি স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায় রাতুলের। একদল মানুষ কুকুরের মতো তাড়া করে তাকে। কোনো কোনো দিন তাদের হাতে পিস্তল থাকে। কোনো কোনো দিন থাকে টেঁটা। যেদিন টেঁটা নিয়ে তাকে দৌড়ায়, সে পানির নিচে, ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। একসময় ধরা পড়ে যায়। চার দিক থেকে টেঁটার ঘাই পড়তে থাকে তার গায়ে। আশ্চর্য, তাকে উপর্যুপরি আঘাত করা হচ্ছে। কিন্তু গায়ে একটি আঘাতও লাগছে না। প্রচণ্ড অস্থিরতা নিয়ে ঘুম ভাঙে তার। প্রথমেই যে কথাটি মনে হয়, সকালে একজন কবিরাজের খোঁজ করতে হবে। এ ধরনের স্বপ্নের সাথে খারাপ জিনের সম্পর্ক থাকতে পারে।
সকালে আর কবিরাজের কথা মনে থাকে না। সারা দিনের ব্যস্ততা শেষে রাতে যখন ঘুমাতে আসে, তখন মনে পড়ে। ধুর! আজো কবিরাজের খোঁজ করা হলো নাÑ এই টাইপের কয়েকটি বিরক্তিসূচক বাক্য বলে কিংবা নিজের ভুলো মন আর অসচেতনতাকে গাল দিয়ে শুয়ে পড়ে রাতুল।
এভাবে কেটে যায় এক বছর।
অদ্ভুত এই স্বপ্ন দেখা জটিল থেকে আরো জটিল হতে থাকে। অবশেষে বাধ্য হয়েই সে কবিরাজের কাছে যায়। স্বপ্ন ছাড়াও রাতুলের আরেকটি সমস্যা আছে। প্রায় রাতেই রাতুলকে বোবা ভূতে ধরে। বুঝ হওয়ার পর থেকেই সে বোবা ভূতের সাথে বসবাস করছে। বিশেষ স্বপ্ন দেখার সঙ্গে কি বোবা ভূতের কোনো সম্পর্ক আছে? কবিরাজকে জিজ্ঞেস করতে হবে।
কবিরাজ ও রাতুলের কথোপকথন শোনা যাক।
নাম বলেন।
মো: রাতুল।
মায়ের নাম?
হাফসা বেগম।
সমস্যা কী?
রাতুল কিছু বলতে যাবে, তার আগেই নানু বলতে শুরু করে, হুজুর! আমার এই নাতিটা বাজে বাজে স্বপ্ন দেখে। বোবায়ও ধরে তারে। আপনি একটা তাবিজ দিয়া দেন।
চেহারায় পণ্ডিতি ভাব এনে কবিরাজ বললেন, এটা তো খুব সাধারণ সমস্যা। আমরা বলি বোবা ভূত। বিজ্ঞানের ভাষায়, স্লিপ প্যারালাইজড। ঘুমের মধ্যে বিভিন্ন কারণে মানুষ সাময়িক প্যারালাইজড হয়ে যায়। মস্তিষ্ক তা উপলব্ধি করে নড়তে চায়। কিন্তু নড়া বা কথা বলা কোনোটাই তখন সম্ভব হয় না। যা হোক, আপনার নাতিকে কাল ২২১ টাকাসহ পাঠিয়ে দেবেন। দাওয়াই নিয়ে যাবে।
কবিরাজের কথা শুনে রাতুলের মেজাজ ভয়াবহ রকম খারাপ হয়ে যায়। একে তো সে তার স্বপ্নের কথা কিছুই বলতে পারল না। দ্বিতীয়ত সাইন্টিফিক ব্যাখ্যা দিয়ে বোবা ভূতের অস্তিত্বকে অস্বীকারের চেষ্টা করা হয়েছে।
যদিও রাতুল কুসংস্কারে বিশ্বাস করে না। কিন্তু বোবা ভূতের অভিজ্ঞতা তো আর মিথ্যা নয়। সে অনেকবার স্পষ্ট দেখেছে, ছায়ার মতো কেউ একজন তার মুখ-হাত চেপে ধরেছে। শত চেষ্টা করেও ছায়ামানব থেকে ছুটতে পারে না। প্রায় আধ ঘণ্টা-পৌনে এক ঘণ্টা পর ছায়ামানব চলে যায়। রাতুল তখন ভয়ে জড়সড় হয়ে শুয়ে থাকে। ভয় নিয়েই সে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।

২.
স্বপ্নের মাধ্যমে প্রকৃতি মানুষকে ভবিষ্যৎ জানিয়ে দেয়। সম্রাট নমরুদ ও ফেরাউনকে তাদের রাজ্য ধ্বংসের কথা জানানো হয়েছে। হজরত ইউসুফ নবীকে জানানো হয়েছে রাজ্য পাওয়ার কথা। এসব তথ্য পবিত্র কুরআনে আছে। রাতুলের কেন যেন মনে হচ্ছে, তাকেও প্রকৃতি বিশেষ কিছু জানাতে চাচ্ছে। নয়তো একই স্বপ্ন কেন বারবার দেখবে সে?
দাওয়াই না নিয়েই ঢাকা ফেরে রাতুল।
অনেক খোঁজাখুঁজি করে একজন পীর সাহেবের খবর পাওয়া গেছে। যিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলতে পারেন।
রাতুল বসে আছে পীর সাহেবের সামনে। সাধারণত পীর সাহেবরা যেমন হন ইনি ঠিক তেমন নয়। পরে জানা গেল ইনি কোনো পেশাদার পীর নন। মানুষ বিপদে পড়লে তার কাছে আসে। তিনি পারলে সাহায্য করেন। না পারলে বিনয়ের সাথে অপারগতা প্রকাশ করেন। সাহায্যের জন্য কোনো হাদিয়া নেন না।
রাতুল পীর সাহেবকে স্বপ্নের কথা বললো। পীর সাহেব বললেন, খুব কাছের কেউ তোমার ক্ষতি করতে চাইছে। তারা একজনও হতে পারে। আবার একাধিকজনও হতে পারে।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা শুনে রাতুলের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। পীর সাহেব যা বলেছেন, তা স্বপ্নের ব্যাখ্যা নয়। স্বপ্নের তরজমা। স্বপ্নে যা দেখে ব্যাখ্যা হয় তার উল্টো। রাতুলের স্বপ্নের ব্যাখ্যা হওয়া উচিত, কেউ একজন বা একদল মানুষ রাতুলকে আঙুল ফুলে কলাগাছ বানিয়ে দেবে। আফসোস! পীর সাহেব সে রকম কিছু বলেননি।
রাগ চেপে বিনয়ের ভঙ্গিতে রাতুল জিজ্ঞেস করল, হুজুর! আমি জানতে চাই, কারা আমার ক্ষতি করতে চায়?
পীর সাহেব বললেন, আমার ব্যাখ্যা হয়তো তোমার পছন্দ হয়নি। কিন্তু যা সত্যি আমি তাই বলেছি। তুমি যদি দেখতে চাও, কারা তোমার ক্ষতি করতে চাইছে, তাহলে ঘুমানোর আগে এই আমলগুলো করবে। তারপর আল্লাহপাকের সাহায্য চেয়ে ঘুমাবে। ইনশাআল্লাহ তিনি মেহেরবান তোমাকে শত্রুর চেহারা দেখায়া দেবেন।
৩.
পীর সাহেবের আমল প্রথম দিনেই ফল হয়েছে। গভীর রাতে রাতুলের ঘুম ভেঙে যায়। শত্রুর চেহারা সে স্পষ্ট দেখেছে। এ প্রসঙ্গে রাতুল খুব গুছিয়ে ডাইরি লেখে।
আল্লাহর শোকর, তিনি আমাকে শত্রুর চেহারা দেখিয়ে দিলেন। শুধু তাই নয়। কিভাবে এবং কারা আমার ক্ষতি করবে সে দৃশ্যও আমাকে দেখানো হয়েছে। আমি এমনটাই ধারণা করেছিলাম। আমার স্ত্রী প্রথমা এবং তার পরিবার মানে আমার শ্বশুরপক্ষ আমার ক্ষতি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমাকে ব্যবহার করা হচ্ছে তুরুপের তাস হিসেবে। ভুল বললাম, প্রথমা নিজেই বড় আগ্রহের সাথে তুরুপের তাসের ভূমিকায় অভিনয় করছে। কিভাবে ক্ষতি করা হবে সেটা বলা যাক।
রোজার ছুটিতে প্রথমা গ্রামের বাড়ি গেছে। বাড়ির সবাই একসাথে বসে গল্প করছে। এমন সময় আমি প্রথমাকে ফোন করি। বাস্তবে হলে বোঝার উপায় ছিল না প্রথমা কী করছে। ওর মা মানে আমার শাশুড়ি এবং অন্যদের গতিবিধিও বুঝতে পারতাম না। স্বপ্নের ভেতর সবাইকে আবছা আবছা বোঝা যাচ্ছে।
প্রথমা ভয়ঙ্করভাবে মুখ বিকৃত করে। ঠোঁটের নিচে এক পৈশাচিক হাসি এঁকে মায়ের দিকে তাকায়। আমার শাশুড়ি আরো বীভৎস হাসি হাসে। চোখের ইশারায় প্রথমাকে বলে, বলে ফ্যাল মা।
প্রথমা ফোন ধরেই বলে, রাতুল, আমি আর তোমার ভাত খাবো না। তুমি অন্য পথ দেখতে পারো।
ভোর ৪টা।
অনেক দিন পর ফজরের নামাজ পড়েছে রাতুল। সকালের আবহাওয়া এত চমৎকার জেনেও কেন যে মানুষ ঘুমিয়ে থাকে মাথায় ঢোকে না রাতুলের। এখন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রত্যেক দিন সকালে হাঁটতে বেরুবে। স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানার পর রাতুলের হার্টবিট ভয়াবহ রকম বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সে খুব শান্ত আছে।
সকাল ১০টা।
পীর সাহেবের সামনে বসে চা খাচ্ছে রাতুল। পীর সাহেব জানতে চেয়েছিল, আজ আবার কেন এলে?
রাতুল বলল, এমনিতেই। আপনার দোয়া নিতে।
চা খাওয়া শেষ। পীর সাহেবের চেহারা রহস্যে গিজ গিজ করছে। তাকে কি গত রাতের স্বপ্নের কথা বলা ঠিক হবে? না থাক। পরে বলব। ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে রাতুল। তারপর গম্ভীর মুখে বলে, হুজুর এখন তাহলে উঠি?
ঠিক আছে। আবার এসো। তবে যা বলতে আসলা, তা কিন্তু বলনি।
রাতুল বলল, আপনাকে তো বলেছি, আমি দোয়া নিতে এসেছি। অন্য কিছু বলতে আসিনি। বলেই রাতুল দরজার দিকে এগিয়ে যায়।
পীর সাহেব পেছন থেকে ডেকে বললেন, তোমার শাশুড়ি মানুষ হিসেবে খুব একটা ভালো না। তবে তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে ধৈর্য ধরবা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পইড়া তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবা। স্বামীর দোয়া বেশি কাজ করে। অনেক মহিলাই এই কাথাটা জানে না।
পীর সাহেবের কথা শুনে রাতুল বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যায়। শাশুড়ি এবং স্ত্রী সম্পর্কে এসব কথা জানা তার পক্ষে সম্ভব না। খোঁজখবর নিয়েও না। তার শাশুড়ি যে মানুষ হিসেবে খুব সুবিধার নয়, এটা শুধু রাতুলই জানে। আরো কয়েকজনও জানে। তাদের সঙ্গে পীর হুজুরের যোগাযোগ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
দরজা থেকে ফিরে এসে আবার পীর হুজুরের সামনে বসে রাতুল। তখনো পীর সাহেব তাকে উপদেশ দিয়ে যাচ্ছেনÑ যে কোনো বিপদই আসে না কেন, তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। তুমি অতি নেক মায়ের সন্তান। তাই আল্লাহপাক তোমার বিরুদ্ধে হওয়া ষড়যন্ত্র আগে থেকেই তোমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। এখন তোমার কাজ হলো, সবরের সাথে সমস্যা সমাধান করা।
ঘোর লাগা মানুষের মতো পীর সাহেবের দিকে তাকিয়ে থাকে রাতুল। অনেকটা রোবটের মতোই বলে যায়, হুজুর! আপনি এত কিছু কিভাবে জানলেন?
সে কথা না হয় আরেক দিন বলব। কিন্তু তুমি কি বুঝতে পারছ, কেন তোমার শাশুড়ি তোমার ক্ষতি করতে চাইছে?
জি হুজুর। আমি ওনার কিছু সিক্রেট জেনে ফেলেছি, যা প্রকাশ হলে আত্মহত্যা ছাড়া কোনো পথ তার জন্য খোলা নেই।
সাবধান! গোপন বিষয় গোপন রাখবা। প্রকাশ করলে আল্লাহ নাখোশ হবেন।
খুব অদ্ভুতভাবেই প্রথমার সাথে রাতুলের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ঈদের ছুটিতে গ্রামে গেলে প্রথমা ফোন করে বলে, রাতুল আমার পক্ষে আর তোমার সাথে সংসার করা সম্ভব নয়। রাতুলের শাশুড়ি বলে, এই বদ ছেলের সাথে যদি আমার মেয়ে সংসার করে তাহলে আমি গলায় দড়ি দেবো।
অনেকেই অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। কোনোভাবেই ভদ্রমহিলাকে বোঝানো সম্ভব হয়নি। প্রথমাও মাকে বাঁচাতে স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছে।
সব কিছু এমন অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে যে, স্বপ্নের কথা, পীর সাহেবের নসিহত কিছুই মনে নেই রাতুলের। প্রথমাকে হারিয়ে পাগলের মতো হয়ে যায় সে। অফিসে বড় ধরনের ঝামেলা হতে গিয়েও হয়নি। অল্পের জন্য চাকরিটা বেঁচে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement
‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

সকল