বিভিন্ন কারণে তাবলীগ জামাতের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেশ অনেকদিন ধরেই চলে আসছে। আর এই কোন্দল প্রায় সময়ই রূপ নিয়েছে সংঘর্ষ আর অস্থিরতায়। এসব খবর বেশ পুরোনো হলেও এবার তাবলীগ জামাতের আমীর ও সংগঠনের এক সদস্যকে মসজিদের ভিতরে আটকে রেখে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ ওঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায়।
খবর পেয়ে পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ তাদেরকে মসজিদ থেকে উদ্ধার করে। বুধবার ভোরের দিকে জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার বীরপাকুন্দিয়া গ্রামের মহিউদ্দিন মাস্টারের বাড়ির পার্শ্ববর্তী জামে মসজিদে এই ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে তাবলীগ জমাতের দুই পক্ষের সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সিলেট মারকাজ থেকে তাবলীগ জামায়াতের মাওলানা সাদপন্থী গ্রুপের ১৮জনের একটি চিল্লার জামায়াত বিভিন্ন মসজিদ ঘুরে বুধবার ফজরের নামাজের পরে উপজেলার বীরপাকুন্দিয়া গ্রামের ওই জামে মসজিদে আসে। এ সময় ওই মসজিদের ইমাম মাহফুজুর রহমান ও মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার মোবারক হোসেন ১৮ জনের তাবলীগ জামাতের এই দলকে মসজিদ থেকে বের করে দেন।
এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও তর্ক-বির্তকের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে মসজিদের ইমাম মাহফুজুর রহমান, ক্যাশিয়ার মোবারক হোসেন ও মোঃ মাহফুজ তাবলীগ জামাতের সদস্যদের সাথে নিয়ে আসা ব্যাগসহ সমস্ত মালামাল বাইরে ছুড়ে ফেলে দেয়।
এ সময় মসজিদের ভিতরে নামাজ পড়ছিলেন তাবলীগ জামাতের আমীর মোঃ নজির উদ্দিন ও জামাতের এক সাথী মিজানুর রহমান। একপর্যায়ে তাদেরকে মসজিদের ভিতরে রেখেই বাইরে থেকে তালা মেরে দেয় তারা।
খবর পেয়ে পাকুন্দিয়া থানার এসআই আসাদুজ্জামান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তালা খুলে মসজিদ থেকে তাদের বের করে আনেন। পরে আলোচনার মাধ্যমে তাবলীগ জামাতের ওই দলকে মসজিদে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।
এ বিষয়ে উপজেলার বীরপাকুন্দিয়া গ্রামের ওই মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার মোঃ মোবারক হোসেন বলেন, আমাদের কাছে পূর্বানুমতি না নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করায় আমরা তাদের আমীরসহ দুইজনকে ভিতরে রেখেই বাইরে তালা মেরে দিয়েছি এবং তাদের ব্যাগসহ অন্যান্য মালামাল বাইরে রেখে দিয়েছি।
অন্যদিকে তাবলীগ জামাতের আমীর মোঃ নজির উদ্দিন বলেন, কোনো মসজিদে জামাত নিয়ে আসলে বা নামাজ পড়তে কারও কাছে অনুমতি নিতে হয় তা আমাদের জানা নেই।
এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া থানার এসআই আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা এসে মসজিদের গেট বাইরে থেকে তালাবদ্ধ পাই। পরে ভেতরে আটকে রাখা দুজনকে উদ্ধার করে এলাকাবাসীকে নিয়ে উভয়পক্ষের সাথে আলোচনা করে ওই জামাতকে মসজিদে থাকার ব্যবস্থা করে দেই।
আরো পড়ুন : তাবলীগ জামাতে দু গ্রুপে দ্বন্দ্বের কারণ কী ?
বিবিসি, (০১ ডিসেম্বর ২০১৮)
বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের ভেতরে দু'টি গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছে বেশ কিছুদিন ধরে - যা সহিংস রূপ নিয়েছে শনিবারের সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে । এই দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে আছেন তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা ভারতীয় মোহাম্মদ সাদ কান্দালভি।
এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই ঢাকার টঙ্গীতে এবার বিশ্ব ইজতেমার একটি তারিখ ঘোষিত হলেও পরে তা হয় নি।
তাবলীগ জামাতের একটি গ্রুপ ১১ই জানুয়ারি থেকে ইজতেমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত মাসে তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপকে নিয়ে বৈঠক করেন - যেখানে ওই তারিখে ইজতেমা না করার সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু সাদ কান্দালভি কি করেছেন বা বলেছেন - যা নিয়ে এই বিভক্তি?
বেশ কিছু কাল ধরেই কান্দালভি তাবলীগ জামাতে এমন কিছু সংস্কারের কথা বলছেন - যা এই আন্দোলনে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে।
সাদ কান্দালভি বলেন, ‘ধর্মীয় শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রচারণা অর্থের বিনিময়ে করা উচিত নয়’ - যার মধ্যে মিলাদ বা ওয়াজ মাহফিলের মতো কর্মকান্ড পড়ে বলে মনে করা হয়।
সাদ কান্দালভি আরো বলেন, ‘মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকদের মাদ্রাসার ভেতরে নামাজ না পড়ে মসজিদে এসে নামাজ পড়া উচিত - যাতে মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়ে।’
কিন্তু তার বিরোধীরা বলছেন, সাদ কান্দালভি যা বলছেন - তা তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের নির্দেশিত পন্থার বিরোধী। তাদের বক্তব্য, কান্দালভির কথাবার্তা আহলে সুন্নাত ওয়া'ল জামাতের বিশ্বাস ও আকিদার বাইরে।
সাদ কান্দালভির বিরোধী একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতার মতে, সাদ কান্দালভি এখনো এ মতবাদ ছাড়েন নি। ‘তাই এটা যেন বাংলাদেশে ছড়াতে না পারে এবং মুসলিমরা যেন পথভ্রষ্ট না হয়, সে জন্য তারা কাজ করে চলেছেন।’
তিনি দাবি করেন, এর মধ্যে এক কণাও রাজনীতি নেই।
ভারতীয় উপমহাদেশে সুন্নি মুসলমানদের বৃহত্তম সংগঠন এই তাবলীগ জামাতের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব প্রথম প্রকাশ্য রূপ পায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে - যখন তাদের মূল কেন্দ্র কাকরাইলে দুই দল কর্মীর মধ্যে হাতাহাতি হয়।
এর পর এ বছর জুলাই মাসে ঢাকায় কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ আহমদ শফী'র উপস্থিতিতে তাবলীগ জামাতের একাংশের এক সম্মেলন হয় । এতে সাদ কান্দালভিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় - দিল্লিতে তাবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাদ কান্দালভির বক্তব্য ও মতবাদকে অনুসরণ করা হবে না, এবং আগামী বিশ্ব ইজতেমার সময় তাকে বাংলাদেশে আসতেও দেয়া হবে না।
কিন্তু মি. কান্দালভির সমর্থকরা বলছেন,তাদের নেতার বক্তব্য বা সংস্কারের প্রস্তাব মানতে না পেরেই বাংলাদেশে সংগঠনটির কর্মকান্ডকে 'রাজনৈতিক চেহারা' দেয়া হয়েছে।
তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ সাদ কান্দালভির এসব চিন্তাভাবনা নিয়ে তাবলীগ জামাতের দু'টি গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের প্রভাব গত ইজতেমাতেও পড়েছিল।
সে সময় এ নিয়ে এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে - যখন কান্দালভি বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে ঢাকায় এসেও ইজতেমা প্রাঙ্গণে যেতে পারেন নি।
কান্দালভি তার বিরোধী পক্ষের প্রতিবাদের মুখে ঢাকায় তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় কাকরাইল মসজিদ অবস্থান নেন, এবং পরে সেখান থেকেই দিল্লী ফেরত যান। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী এখনো তবলীগ জামাতের প্রধান দফতর কাকরাইল মসজিদেই অবস্থান করছেন, কিন্তু কার্যক্রম চালাচ্ছেন আলাদা আলাদা ভাবে।
কান্দালভির সমর্থক গোষ্ঠীর একজনের মতে, তাবলীগ জামাতের ৯০ শতাংশই ‘নিজামুদ্দিন মারকাজ’ বা সা’দ কান্দালভি-র অনুসারী হিসেবেই আছেন। কিন্তু তার কিছু কথাকে একটি গোষ্ঠী সহজভাবে নিতে পারছেন না।
তার বিরোধীদের পেছনে কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের লোকেরা সক্রিয় বলে বলা হলেও - হেফাজতের নেতারা এ অভিযোগ সরাসরি স্বীকার করেন না।
হেফাজতে ইসলামের একজন উর্ধতন নেতা মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বিবিসিকে বলেছেন, এখানে হেফাজত বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের কোন সম্পৃক্ততা নেই।
এ বিরোধ এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বের তাবলীগ জামাতের অনুসারীদের মধ্যে। ব্রিটেন, আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলোতে তাবলীগ জামাতের নেতৃত্বের বিভক্তি দেখা দিয়েছে অনেকদিন আগেই।
বিরোধ মেটানোর চেষ্টা থাকলেও তাতে এখনো ইতিবাচক ফলাফল দেখা যাচ্ছে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা