২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ধর্মঘট ১০ দিন চললেও চাল বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না : খাদ্যমন্ত্রী

-

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘটে আগামী ১০ দিন ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকলেও ঢাকায় চালের বাজারে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না। কারণ দেশের প্রতিটি বাজারে চালের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। ফলে কেউ যদি কারসাজি না করে, তাহলে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তবে কেউ যদি এমন পরিস্থিতিতে অনৈতিকভাবে চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে, তাহলে কোনোক্রমেই সহ্য করা হবে না, প্রশ্রয় দেয়া হবে না।
পরিবহন ধর্মঘটের আগেই হঠাৎ চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় গতকাল বুধবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে খাদ্য, কৃষি, স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং চাল ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদের সাথে আয়োজিত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমন দাবি করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, কারসাজি করে চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাদের ব্যবস্থা নিতে বলেছি। প্রয়োজনে নিজেরাও মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করব। বৈঠকে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রশিদসহ সিনিয়র কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
পরিবহন ধর্মঘটের কারণে আগামী দিনগুলোতে চালের বাজারে কি কোনো প্রভাব পড়বে কিনা- জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সাত দিনও যদি পরিবহন ধর্মঘট থাকে, ১০ দিনও যদি থাকে, বাবুবাজারে যে স্টক থাকে, বড় বড় বাজারে যে স্টক থাকে, তাতে ঢাকার বাজারে দাম বাড়ার বিন্দুমাত্র কারণ নেই। ৩-৪ দিন কেন, ১০ দিন বন্ধ থাকলেও প্রভাব পড়বে না, গ্যারান্টি দিলাম, আমার সোজা কথা। তিনি বলেন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, চ্যানেলে চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জেনেছি। আমাদের দেশে চালের মজুদের কোনো ঘাটতি নেই। মিল মালিক ও বাজার মনিটর করে দেখা গেছে মজুদের কোনো ঘাটতি নেই, ফলে আমদানিরও কোনো প্রয়োজন নেই বরং রফতানি করার জন্য প্রস্তুত আছি।
উল্লেখ্য, পরিবহন শ্রমিকদের ‘স্বেচ্ছা কর্মবিরতিতে’ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরের বেশ কিছু জেলায় গত দুই দিন ধরেই বাস চলাচল বন্ধ ছিল। গত বুধবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও দূরপাল্লার বাস চলাচলে বাধা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যেই সকাল থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ধর্মঘট। ফলে পণ্য পরিবহনে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
ধর্মঘটের আগেই যে খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছেÑ এটা মিল মালিকদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এই দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। মিল ও বাজার মনিটর করে দেখা গেছে, মজুদের কোনো ঘাতটি নেই, আমদানিরও কোনো প্রয়োজন নেই বরং রফতানি করা জন্য প্রস্তুত আছি। তিনি বলেন, ২৬-২৭ টাকার মোটা চাল খুচরা বাজারে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে ভোক্তাদের ‘আঁতে ঘা’ লাগছে। সরকার এটা চলতে দেবে না। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পাইকাররা কেজিতে ৫০ পয়সার বেশি লাভ করতে পারেন না, এর বেশি করলে দেশকে আপনারা শোষণ করতে বসেছেন, এটাও সহ্য করা হবে না। খুচরা বাজার আপনাদের কন্ট্রোল করতে হবে মনিটরিং করতে হবে।
চালের দাম আর বাড়বে নাÑ এমন শপথ নিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি গুদামে ১১ লাখ ১২ হাজার ৬৭৪ টন চাল মজুদ আছে এবং চাল ও গম মিলিয়ে মজুদের পরিমাণ ১৪ লাখ ৫৯ হাজার টন। মজুদের এই পরিমাণ ‘অন্যান্য দেশের তুলনায়’ বেশি। গত ৭ দিনে খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, খুচরা বিক্রেতারা বৃদ্ধি করছে, যা বাড়ানো উচিত হয়নি। খুচরা বাজারে এটি হচ্ছে, চেষ্টা করব দাম যেন আর না বাড়ে। ভোক্তা অধিকার আইনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতবারের চেয়ে ধানের দাম কম রয়েছে, তাই চালের দামও কম হবেÑ এটাই কথা। কৃষক দাম পাবে না, মধ্যস্বত্বভোগী বেনিফিট বেশি নেবেÑ এটা চলতে দেয়া যাবে না। দাম যতটা বেড়েছে তা কমতে কতদিন লাগবেÑ এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে যেন না বাড়ে সে জন্য মিটিং করা হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার জরুরি ভিত্তিতে যাবে।
মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, মিল মালিকদের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ করলাম, কোনো কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়নি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ধানের আমদানি কম হওয়ায় দাম বেড়েছে, তবে বাজার এখন স্থির হয়ে আসছে। আমন ধান উঠলে এ রকম হতো না।


আরো সংবাদ



premium cement