২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে আহত ৪০ ৬ পুলিশ ক্লোজড, তদন্ত কমিটি

পীরগঞ্জে পুলিশ ফাঁড়িতে আসামির মৃত্যু
-

রংপুরের পীরগঞ্জের ভেন্ডাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির হাজতখানায় পশু ব্যবসায়ী সামসুল হক (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গ্রেফতারকৃত ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় ফাঁড়ি এলাকায় পুলিশ ও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর সংঘর্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজ, বেন্ডাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসান, বড়দরগাহ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হকসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৩৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। বুধবার সকালে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী থানা ঘেরাও করলে এই সংঘর্ষ বাধে। মৃতের পরিবারের দাবি তাকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে গ্রেফতার করে দুই লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করে পুলিশ। তা পূরণ না করায় হাজতে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে গলায় গামছা পেঁচিয়ে রাখা হয়। সামছুল ইসলাম পাশর্^বর্তী মিঠাপুকুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই আমিনুল ইসলাম পশু ব্যবসায়ী সামসুল ইসলামকে বড়দরগা থেকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করে। বুধবার সকাল ৯টায় ফাঁড়ির হাজতখানার গ্রিলের সাথে গামছা ও পাঞ্জাবি পেঁচিয়ে আত্মহত্যার খবর দেয় পুলিশ।
সামসুলের পরিবারের অভিযোগ গ্রেফতারের পর আমিনুল ইসলাম তাদের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় পুলিশ ফাঁড়ির হাজতখানায় পিটিয়ে হত্যা করে গ্রিলের সাথে গামছা ও পাঞ্জাবি পেঁচিয়ে রাখে।
গতকাল বুধবার সকালে সামসুলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে সামসুল হত্যার বিচার দাবি করে। পুলিশ এলাকাবাসীকে নিবৃত করার চেষ্টা করলে এলাকাবাসী পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের সাথে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেধড়ক পিটুনি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। বেলা সাড়ে ১২টায় এলাকাবাসী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় রাবার বুলেটে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসান, পুলিশের এএসপি হাফিজ উদ্দিনসহ অন্তত ৪০ জন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাতে বড়দরগায় পুলিশ তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে গ্রেফতার করলে এলাকাবাসী তাতে বাধা দেয়। এ সময় এলাকাবাসী পুলিশকে জানান তিনি মাদক ব্যবসায়ী নন একজন পশু ব্যবসায়ী। তারপরেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আমিনুল ইসলাম জানান, সকাল ৯টায় আমি তার সাথে কথা বলেছি। কিছুক্ষণ পরেই গিয়ে দেখি থানা হাজতের গ্রিলের সাথে গামছা ও পাঞ্জাবি গলায় পেঁচিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে। তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। তার কাছে কোনো টাকাও চাওয়া হয়নি। তিনি মাদক কারবারির সাথে জড়িত।
এ দিকে নিহতের স্ত্রী মমেনা বেগম, কন্যা শান্তনা ও বোন ফাতেমা বেগম হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের জানান, সে মাদকাসক্ত নয় এবং মাদক কারবারির প্রশ্নই আসে না। সে একজন ছাগল ব্যবসায়ী। রাত ১১টায় শেষ সাক্ষাতের সময় আমাদের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে ফাঁড়ি ইনচার্জ। দাবিকৃত টাকা না পেয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান তালুকদার বলেন, পুলিশ হেফাজতে মৃত ব্যক্তির এলাকায় মাদক সংশ্লিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। সে মুরগি ও ছাগল ব্যবসায়ী হিসেবেই পরিচিত। এসআই আমিনুল ইসলাম শুধু অভিযোগের নামে বিভিন্ন মানুষকে আটক করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করলেও হাজতে লজ্জায় আসামির আত্মহত্যার কথা জানান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসাইন জানান, বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে আক্রমণ করলে পুলিশ শর্টগান দিয়ে আনুমানিক ৩৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। ঘটনা পরপরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিএমএ মমিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক শাহিদুল ইসলাম পিন্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামিম দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। এ দিকে বিকেলে রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার ঘটনাস্থলে এসে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেনÑ এ ঘটনায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। তিনি আরো জানানÑ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসাইনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দাখিল করবে। ইতোমধ্যে ফাঁড়ি ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম, এসআই তাজউদ্দিন, পিএসআই মাহি আলম, এএসআই হরিকান্ত, কনস্টেবল আরিফুল ও ভুপেনসহ ছয়জনকে ক্লোজ করা হয়েছে এবং গঙ্গাচড়া থানার ইনস্পেক্টর (তদন্ত) সুশান্ত সরকারকে সাময়িকভাবে ভেন্ডাবাড়ি ফাঁড়ি ইনচার্জের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ধৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে চোলাই মদ ব্যবসার মামলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন আছেন। সার্কেল এএসপি এ ঘটনায় আহত হয়েছেন বলে শুনেছি। আমিও ঘটনাস্থলে আছি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত

সকল